অনলাইন ডেস্ক: ঈদের টানা ৫ দিনের ছুটিতে ২৭ হাজার বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রী বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ভারত ভ্রমণে গিয়েছেন। ফলে এই সময়ে ওই চেকপোস্টে যাত্রী পারাপারও বেড়েছে কয়েক গুণ। ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মত। ভারতের পেট্রাপোল চেকপোস্টে টানা ৬/৭ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে গন্তব্যে যেতে হয়েছে যাত্রীদের। তবে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে কাস্টমস প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে ছিল পুলিশের প্রকাশ্যে পাসপোর্ট দালালী। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা এখানে কর্মরত সিপাহীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। বেপরোয়া সিপাহীরা ভারতে যাতয়াতকারী পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানীসহ তাদের কাছ থেকে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এর নামে জোর করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনেই এসব পুলিশের বিচরণ। কোন পাসপোর্ট যাত্রীকে দেখলেই পোষাকধারী পুলিশ ছুটে যায় তাদের কাছে। ২/৩ শ করে টাকা নিয়ে পাসপোর্টের কাজ করে দেয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভারতগামী সাধারণ যাত্রীসহ ডাক্তার, অ্যাডভোকেট, ব্যারিস্টার, সাংবাদিক, রোগী, শিশু কেউ রেহাই পাচ্ছেন না এই ইমিগ্রেশন পুলিশের হাত থেকে। এদিকে ঈদের ছুটিতে স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, চিকিৎসা, ব্যবসা, কেনাকাটা ও বেড়ানোর উদ্দেশে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুন হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানান। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঈদ প্যাকেজে অসংখ্য বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। ফলে ঈদের ছুটির সোম, মঙ্গল, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (২০, ২১, ২২, ২৩ ও ২৪ আগস্ট) ৫ দিনে প্রায় ২৭ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে গেছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ পাসপোর্ট দালালীর মত ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত রয়েছে প্রতিনিয়ত। সরেজমিন চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, প্রচন্ড রোদে ও খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে আছে কয়েক হাজার নারী, শিশু ও পুরুষ যাত্রী। ধীর গতির কারনে দুইদেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। দুই দেশের কর্তৃৃপক্ষ ইমিগ্রেশনে ও বেনাপোল চেকপোস্ট সোনালী ব্যাংক বুথে জনবল বৃদ্ধি না করায় দীর্ঘ সময় লাগছে ভ্রমন ট্যাক্স কাটতে। আয়ুব হোসেন নামে এক পাসপোর্ট যাত্রী বলেন, আমাদের পাসপোর্টে আমরা নিজেরা কাজ করবো কিন্তু টার্মিনালের বারান্দায় পুলিশ আমাদের পাসপোর্ট জোর করে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা দিইনি। পুলিশ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট আর টাকা নিচ্ছে ইমিগ্রেশানের কাজ করে দেওয়ার কথা বলে। বেনাপোল স্থল বন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক মনির হোসেন জানান, বন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে ইমিগ্রেশন পুলিশের সিপাহীরা পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নানাভাবে নাজেহাল করে থাকে। আমরা ওসি সাহেবের কাছে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বেনাপোল চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোঃ মাসুম কাজী জানান, বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কোন সমস্যা নেই। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের চাপ বাড়লেও তাদের দুর্ভোগের কথা মাথায় নিয়ে ১৬টি ডেস্কে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে।এবার ঈদে মানুষের ভারত ভ্রমণের চাপ অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুন। যাত্রীদের যাতে কোনো দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সেজন্য ইমিগ্রেশন দ্রুত কাজ করছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের পাসপোর্ট দালালীর বিষয়ে যাত্রীদের অভিযোগের কথা বললে তিনি জানান, ইমিগ্রেশানের এরিয়ার বাইরে গিয়ে যদি কোন পুলিশ সদস্য পাসপোর্ট দালালী বা যাত্রীদের হয়রানী করে তাহলে তার দায়ভার তার নয়। বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা জানান, যাত্রীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভারতে যাতায়াত করতে পারেন তার জন্য ঈদের ছুটির মধ্যেও জনবল বাড়িয়ে কাজ চলছে চেকপোস্ট কাস্টমস তল্লাশি কেন্দ্রে।