নিজস্ব প্রতিবেদক : আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও পুলিশ সুপারের নির্দেশ উপেক্ষা করে শ্যামনগরের ব্যবসায়ী আবুল কালামের ভিটেবাড়ি দখল করার জন্য আবারো হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার ভোরে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী মিঠু ও মোস্তফার নেতৃত্বে ২০/৩০ জন সন্ত্রাসী লাঠি-সোটা নিয়ে এ হামলা চালায়। এদিকে গত ১০ আগস্ট কালামের বাড়ি-ঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর তার প্যারালাইসড বৃদ্ধ পিতা-মাতাসহ এই অসহায় পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ১৫ দিন ধরে এ অবস্থায় থাকার পরও ভুমিদস্যু মাস্টার আব্দুল বারী তার বাহিনী দিয়ে জীবনে মেরে ফেলার হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এর প্রতিকার চেয়ে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন ভূক্তভোগী পরিবারের পক্ষে আব্দুস সালামের স্ত্রী সাবিকুন নাহার। আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শ্যামনগর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। ওসির তদন্তের মধ্যে গতকাল আবারো হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মরধ্য চরম আতংক বিরাজ করছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গত ৩ মে ব্যবসায়ী আবুল কালাম বাধঘাটা গ্রামের আব্দুস সবুরের স্ত্রী সাবিনা ও ছেলে এমদাদুল হকের ২২ শতক জমির মধ্যে ৬ শতক জমি ক্রয় করেন। যার মধ্যে একটি ঘর ছিল। জমি ক্রয়ের পরপরই তারা দখলে যায়। সেখানে আবুল কালাম, তার ভাই নূর ইসলাম, আব্দুস ছালাম ও আব্দুস সাত্তার আরো ৫টি ঘর তৈরী করে বসবাস করে আসছিলেন। সাবিনার সাথে তার দেবর আব্দুল বারীর একটি বাটোয়ারা মামলা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত ১০ আগস্ট শুক্রবার হঠাৎ করে আব্দুল বারী তার ভাই ও লোকজন নিয়ে সাবিনার বিক্রি জমি (আবুল কালাম) দখল নিতে যায়। এ সময় তারা সীমানা প্রাচীর ভেঙে ঘর-বাড়ি ও আসবাব পত্র ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘরে মধ্যে থাকা আবুল কালামের প্যারালাইসড বৃদ্ধ বাবা নূর আলী গাজী ও বৃদ্ধা মা জহুরা বেগমকে মারধর করে উঠানে ফেলে দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে আব্দুস সালামের স্ত্রী সাবিকুন নাহারের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারে। এতে সে রক্তাক্ত জখম হয়। এ ছাড়া নূর ইসলামের কলেজপড়–য়া মেয়ে সুমাইয়া ইয়াসমিন ও দশম শ্রেণীর ছাত্রী ফাতেমা খাতুন, আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী রাশিদা বেগম ও আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন বেগম আহত হয়। আহতদেরকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আবুল কালাম বাদি হয়ে শ্যামনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (যার নং ১১/১৭৩ (শ্যাম)। এ মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে সাকিব হোসেন ও মাস্টার আব্দুল বারীর স্ত্রী রেহানা বেগম কালামের পরিবার-পরিজনকে জীবনে মেরে ফেলার হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। এ ব্যাপারে সাবিকুন নাহার বাদি হয়ে শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন (যার নং-৮৯৩, তাং-২০-০৮-১৮)। এদিকে গত ১০ আগস্ট শুক্রবার পুলিশের উপস্থিতিতে ঘরবাড়ি ভাংচুরের পর মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে আবুল কালাম পরিবার-পরিজন নিয়ে পলাতক অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপনের প্রতিকার চেয়ে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন ভূক্তভোগী পরিবারের পক্ষে আব্দুস সালামের স্ত্রী সাবিকুন নাহার। পুলিশ সুপার এই লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শ্যামনগর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আগামী ২৯ আগস্ট শ্যামনগরের এসিল্যান্ডের কাছে এই জমিজমার বিষয়টি নিয়ে বসাবসির তারিখ রয়েছে। এরমধ্যে তদন্তে যারা ভিটেবাড়িতে দখলে থাকবে তাদের পক্ষে বসাবসির সিদ্ধান্ত যাবে এ আশংকায় শনিবার ভোর ৬টার দিকে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী মাইক্রোবাস চালক আমজাদ হোসেন মিঠু ও গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে ২০/৩০ জন সন্ত্রাসী আবারো কালামের ভিটেবাড়ি দখলে নিতে হামলা চালায়। এ সময় তারা ঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করলে বাড়িতে থাকা মহিলারা চিৎকার করলে আশ-পাশের লোকজন ছুটে আসে এবং থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে তারা পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তবে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। শ্যামনগর থানার ওসি মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ব্যবসায়ী আবুল কালামের ক্রয় করা জমি দখল নিয়ে মাস্টার আব্দুল বারীর লোকজন প্রায় মহড়া দেয়। গতকাল সকালেও তারা লোকজন নিয়ে মহড়া দিয়েছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এসপির কাছে দেয়া আবেদনের তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাটি এসআই হাবিব তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আজকের (শনিবার) হামলার ঘটনার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। সাবিকুন নাহারের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আবেদন পেয়েছি। তার প্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৪-০৮-১৮