দেশের খবর: একাদশ জাতীয় নির্বাচন দোরগোড়ায়। প্রতিকূল পরিবেশেও ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা দল বিএনপি। দলপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি করবে বলেই মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এজন্য ভিতরে ভিতরে প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী ইশতেহারও তৈরি করছে দলটি। জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের জন্যও বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বেশ কয়েকটি আসন। এ ব্যাপারে তাদের অনেককে সবুজ সংকেতও দেওয়া হয়েছে। তবে শরিক দলগুলোর চাওয়া-পাওয়াও সব পূরণ করতে পারবে না বিএনপি। তারা বিএনপির কাছে চায় অন্তত দেড় শ আসন। এ ছাড়া যুক্তফ্রন্টসহ ড. কামাল, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট তৈরি হলে তাদেরও সর্বোচ্চ ছাড় দেবে বিএনপি। এ নিয়ে হাইকমান্ড কাজ করলেও দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নাখোশ। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এলেও বিএনপিকে আসন বণ্টন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বিএনপি নির্বাচনে গেলে তারা সর্বোচ্চ ছাড় দেবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টাই চালিয়ে যাবে দলটি। আসন্ন ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি চলছে। এ নিয়ে শুক্রবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়— ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমেই দলটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের আন্দোলন রাজপথে নিয়ে যেতে চায়। কোনো কারণে জনসভা করতে না দিলে বিএনপি দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা সব সময় নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু নির্বাচনের আগে গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিয়ে অনুকূল পরিবেশও তৈরি করতে হবে। সব রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে হবে। বিরোধী দলের মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। তবে সরকার জিয়া পরিবারকে ছাড়া নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাব না। তাঁকে কারামুক্ত করার পর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হলেই নির্বাচনের কথা ভাবব।’ জানা যায়, ভিতরে ভিতরে পুরোদমেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ঈদুল আজহায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ সংসদীয় আসনে গণসংযোগ চালিয়েছেন। জনগণকে জানান দিয়েছেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তারা লড়তে প্রস্তুত। গত ছয় মাসে দলের অন্তত অর্ধশত সম্ভাব্য প্রার্থী পৃথকভাবে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের অনেককে ভোটের পক্ষে মাঠে থাকতে ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন তিনি। কারান্তরিন বিএনপি চেয়ারপারসনও ভোটের পক্ষে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলের নির্ভরশীল নেতারা। সূত্র জানা যায়, ৩০০ আসনে বিএনপিরই সহস্রাধিক প্রার্থী প্রস্তুত রয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী-এমপি যেমন রয়েছেন তেমনই একঝাঁক তরুণ নেতা-নেত্রীও ভোটযুদ্ধে লড়তে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। দলের হাইকমান্ডের সংকেত পাওয়া মাত্রই তারা ভোটের মাঠ গরম করবেন। বিএনপিতে অন্তত ১০০ আসনে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এসব আসন তরুণ নেতারা ছাড়াও জোটের শরিক ও অন্যদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। ২০-দলীয় জোট সূত্র জানায়, শরিকরা বিএনপির কাছে অন্তত দেড় শ আসন চান। এতেও খুশি নন তারা। তাদের অভিযোগ, এ বিষয়ে বিএনপির কাছ থেকে কোনো আশ্বাসই মিলছে না। শরিক দলের একাধিক নেতা এখন প্রকাশ্যেই বলাবলি করছেন, সরকারি দলের পক্ষ থেকে নানা ‘প্রলোভন’ এমনকি ‘ভয়ভীতি’ও তাদের টলাতে পারেনি। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই তারা বিএনপি জোট আঁকড়ে রয়েছেন। কিন্তু আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো কথাই বলছে না বিএনপি। তবু কারাবন্দী জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে তারা ২০ দল ছাড়ার কথাও ভাবছেন না। সূত্রমতে, বিএনপির কাছে জোটের প্রধান শরিক দল জামায়াতে ইসলামী চায় অন্তত ৫০টি আসন। জোটের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও খেলাফত মজলিশ চায় অন্তত ৩০টি করে আসন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ১৬টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১০টি, বিজেপি ৩টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও লেবার পার্টি চায় ৬টি করে আসন। বাংলাদেশ ন্যাপ ৫টি, এনডিপি ২টি, জাগপা ও এনপিপি চায় ৪টি করে আসন। ডেমোক্রেটিক লীগ ও ন্যাপ চায় ২টি করে আসন এবং সাম্যবাদী দল চায় ১টি আসন। বিএনপি অবশ্য শরিকদের আশ্বস্ত করে বলছে, সময়মতো সবারই মূল্যায়ন হবে। এখন তারা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তিনি মুক্তি পেলে তাঁর নেতৃত্বেই ২০ দল নির্বাচনে যাবে। তখনই জোটের মধ্যে আসন বণ্টন হবে। তা ছাড়া ভিন্ন প্লাটফরমে জোটের পরিধি আরও বাড়তে পারে। সেই প্রচেষ্টাও চলছে। জোট, যুক্তফ্রন্টসহ কয়েকটি দল নিয়ে ভিন্ন প্লাটফরমে নির্বাচনে গেলে বিএনপি অর্ধশতাধিক আসন ছেড়ে দেবে। তবে এ নিয়ে ক্ষুব্ধও বিএনপির একাংশ। দলের স্থায়ী কমিটিরি এক সদস্য জানান, বিএনপিরই সহস্রাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তাদেরই প্রতীক দেওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া জোটের দু-চারটি ছাড়া অধিকাংশ দলই নামসর্বস্ব ও প্যাডসর্বস্ব। জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতের নিবন্ধনও স্থগিত। ধানের শীষ প্রতীকের বাইরে নির্বাচন করে কোনো দলের জিতে আসাও কঠিন। বিএনপি-প্রধান এখন জেলে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই আন্দোলনে জোটের শরিকদের তেমন কোনো গরজ নেই। তারা সবাই এখন চান নিজেদের আসনের নিশ্চয়তা। জোটের শরিক দল এলডিপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘বিগত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে নানা প্রতিকূল পরিবেশেও জোটের শরিক দলগুলো বিএনপি ছেড়ে যায়নি। এখনো আমাদের নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই শরিক দলগুলোকে অবমূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।’