জাতীয়

ডিজিটাল অপরাধী ঠেকাতে ই-পুলিশিং

By daily satkhira

August 26, 2018

অনলাইন ডেস্ক: গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে এখন ই-পুলিশিং সেবায় মনোযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। সাইবার স্পেসে জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার কারণেই পুলিশ ও সরকার এদিকে বেশি নজর দিচ্ছে। এছাড়া কম জনবলে অধিক সেবা দেওয়া ছাড়াও গণমুখী সেবা নিশ্চিত করতেও এখন তৎপর এই বাহিনী। এরইমধ্যে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেল সেন্টার ৯৯৯, ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-সিডিএমএস, সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস), আইজিপি কনপ্লেইন সেল ও বিডি পুলিশ হেল্প লাইনসহ বেশ কিছু বড় ই-সেবা চালু করা হয়েছে। এসব ই-সেবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো রাখা হচ্ছে আলাদা আলাদা ভাবে। এবার সবগুলো ই-সেবার তথ্য একই ডাটা সেন্টারে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পুলিশ সদর দফতরে একটি ডাটা সেন্টার রয়েছে। আটশ’ বর্গফুট জায়গার মধ্যে থাকা ডাটা সেন্টারের সার্ভারের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি রয়েছে ৬০ টেরাবাইট (টিবি), যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সাইবার হামলা প্রতিরোধের জন্যও কোনও সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবস্থা নেই এই ডাটা সেন্টারে। পুলিশের ৩৬টি অ্যাপ্লিকেশন সার্ভারের কোনও অতিরিক্ত সার্ভার নেই। যে কারণে কোনও সার্ভার ডাউন হলে পুলিশের অনলাইন সেবা বন্ধ থাকে। এছাড়া কোনও ব্যাকআপের ব্যবস্থা না থাকায় প্রয়োজনীয় তথ্য হারিয়ে যাওয়ারও শঙ্কা থেকে যায়। কোনও নিরাপদ সেন্ট্রাল এবং ব্যাকআপ ডাটা সেন্টার না থাকায় প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রাপ্তির প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেজন্য বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ও অপারেটিং সফটওয়্যার কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত করার জন্য পুলিশ সদর দফতরের ডাটা সেন্টারটির সক্ষমতা বাড়াতেও উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। তাই ১৫৪ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে এই ডাটা সেন্টারটির সক্ষমতা বাড়াতে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে প্রকল্পটি সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাশ হয়েছে। এ বছরের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ সদর দফতরের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারটি হচ্ছে ৬০ টেরাবাইট (টিবি)। এই ডাটা সেন্টারটির সক্ষমতা বাড়িয়ে করা হবে তিন পেরাবাইট (পিবি)। যার মধ্যে দুই পেরাবাইট ব্যবহার করা হবে সবগুলো অ্যাপলিক্যাশনের জন্যে। ভবিষ্যতে এই কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি পাঁচ প্যারাবাইট (পিবি) পর্যন্ত বর্ধিত করা যাবে। ডিজাস্টার রিকভারি ডাটা সেন্টারের জন্য মোট স্টোরেজ ক্যাপাসিটি রাখা হবে দুই পেরাবাইট। টিয়ার-৩ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রস্তাবিত ডাটা সেন্টার অনুসরণ করা হবে। পুলিশের অনলাইনের সেবাগুলোকে সার্বক্ষণিক আপটাইম করে সুবিধা দেওয়ার জন্য এই ডাটা সেন্টারে অতিরিক্ত ইকুইপমেন্ট ও সাইবার অ্যাটাক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইমার্জেন্সি কল সেন্টার-৯৯৯ এর ইভেন্টগুলো এই ডাটা সেন্টারে সংরক্ষণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, পুলিশ সদর দফতরের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার বর্ধিত করার যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তার কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- অপরাধ এবং অপরাধ বিষয়ক তথ্যসহ অন্যান্য পুলিশি তথ্য এবং আইটি অ্যাপ্লিকেশন ও প্রোগ্রামের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করা ছাড়াও পুলিশি সেবার নির্ভরযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা; আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে অ্যাপ্লিকেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা; পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের চাহিদা অনুযায়ী আইটি উদ্যোগের জন্য ডিজিটাল কম্পিউটিং এবং স্টোরেজ সুবিধা দেওয়াও এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (লজিস্টিক) ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের ধরণ ও ব্যাপ্তি পরিবর্তিত হয়েছে এবং ডিজিটাল মার্কেট প্লেসে সাইবার ক্রাইম ক্রমবর্ধমান হুমকিগুলোর মধ্যে অন্যতম। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধেও প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি। পুলিশের ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন হোস্ট করার পাশাপাশি সব ই-পুলিশিং তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে।’ ব্যারিস্টার হারুন-অর-রশিদ আরও বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে দায়িত্বপালনের স্বার্থে বর্তমানে ডাটা সেন্টারের সীমাবদ্ধতা ও অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশে প্রযুক্তির প্রসার বিবেচনা করে ডাটা সেন্টারের স্থাপনের জন্য ফিজিবিলিটি পর্যালোচনা করা হয়। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ফিজিবিলিটি স্টাডি করে সুপারিশ করেছেন। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অভিজ্ঞ প্রতিনিধি এবং পুলিশ সদর দফতরের মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার, সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্টগণ কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত মতামতও দিয়েছেন। সেই আলোকেই বাংলাদেশ পুলিশের ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রফোজাল (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়েছে।’