দেশের খবর: দেশের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সড়ক ও মহাসড়কে ধীরগতির যান চলাচলের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদ। সভায় সড়ক মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও লেগুনা চলাচল বন্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া জাতীয় মহাসড়কে লেগুনাজাতীয় ধীরগতির গাড়ি চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এছাড়া সভায় রাজধানীর গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা রুট বিভাজন করে নির্দিষ্টসংখ্যক কোম্পানির আওতায় আনতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়রকে দায়িত্ব দেয়াসহ ১৮টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের ৪২তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক সংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে উপদেষ্টা পরিষদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৈঠকে নৌমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মসিউর রহমান রাঙ্গা, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন। তবে দেশের বাইরে থাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।
সভায় অংশ নেয়া একাধিক সদস্য জানান, বৈঠকে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে সড়ক ও মহাসড়কে ধীরগতির ছোট যান চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে মতপ্রকাশ করেন কেউ কেউ।
এছাড়া ঢাকার গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে কাউন্টার ব্যবস্থা চালুর মতো দেন পরিবহন মালিক নেতারা। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তারা। সড়ক ও মহাসড়কে পুলিশের জোরালো ভূমিকাও দেখতে চান পরিবহন নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিবহন নেতা বলেন, গত মিটিংয়ে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এ মিটিংয়ে সেই বিষয়গুলো নিয়েই মূলত আলোচনা হয়। গুরুত্বপূর্ণ নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পুরনো সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে তাগিত দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, সর্বশেষ গত বছরের ২৫ অক্টোবর এ পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও লেগুনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যেসব জেলায় আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি) নেই, সেসব জেলায় দ্রুত আরটিসি গঠন করতে হবে। জাতীয় মহাসড়কে লেগুনা জাতীয় ধীরগতির গাড়ি চলতে পারবে না, চলতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার খুচরা যন্ত্র আমদানি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হবে। অবৈধ যানবাহন ডাম্পিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৯৬টি জাতীয় মহাসড়ক ও ১২৬টি আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে।
রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি করার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর রংচটা বাসের সৌন্দর্যবর্ধন করতে হবে। বাসের গরিব গরিব চেহারা লাগে। এসব গাড়ি রংচং করে দৃষ্টিনন্দন করতে মালিকদের বলা হয়েছে। প্রতিযোগিতা বন্ধে চুক্তিতে বাস পরিচালনা করা যাবে না। ঢাকার রুট ফ্রাঞ্চাইজ করার জন্য ঢাকার দক্ষিণ মেয়রকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি নিজেও অভিযানে অংশ নেই। যেসব গাড়িতে তালিকা থাকে না ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আরটিসির সভা নিয়মিত করতে হবে। বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভানের অবৈধ এঙ্গেল, হুক, ও বাম্পার অপসারণের কাজ চলমান থাকবে। এ পর্যন্ত ৯০ শতাংশ অপসারণ করা হয়েছে। মহাসড়ক থেকে অযান্ত্রিক যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় মহাসড়কে ইজিবাইক বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নে সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মালেকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। পরিবহন খাতকে শিল্প হিসেবে প্রাপ্য সুবিধাদি নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব/অনুরোধপত্র পাঠানো হবে। বাস-ট্রাকসহ গণপরিবহনের ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণে বিআরটিএ এবং বুয়েটের এআরআই কাজ করছে। দ্রুত সময়ের রিপোর্ট পেশের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। বিআরটিএর চলমান ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শুক্রবার ছাড়া বাকি ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। বিআরটিএতে ৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা বেড়ে ১১জনে দাঁড়াল। এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগের অভিযান চলমান থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামের মহাসড়কের চান্দিনা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর, সিরাজগঞ্জের হাটিকমরুল, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সড়ক বিশ্রামাগার স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে। গাড়িতে অননুমোদিত মনোগ্রাম ও ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড লাগানো যাবে না। গাড়িতে অনুমোদিত হুটার বাজনো ও বীকন লাইট ব্যবহার বন্ধে পুলিশ পদক্ষেপ নেবে। মহাসড়কে যানবাহনের ৮০ কিলোমিটার গতি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি তিনটি বড় দুর্ঘটনা মহাসড়কে ঘটেছে। সেখানে রোড ডিভাইডার ছিল। তবুও দুটি স্থানে লেগুনা ও একটি স্থানে অটোরিকশার সঙ্গে বাসের সংঘর্ষে দুর্ঘটনা হয়েছে। এসব ঘটনায় গঠিত কমিটি রিপোর্ট দেয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।