দেশের খবর: জামায়াতকে বাদ দিয়ে ‘জাতীয় যুক্তফ্রন্ট’ করছে বিএনপি। এই ঐক্যে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম থেকে শুরু করে অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারাসহ বাম, ডান সব ধরনের রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্ত করে বৃহত্তর এই রাজনৈতিক ও নির্বাচনী জোটের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে চারটি জোট ‘জাতীয় এই ঐক্যফ্রন্টে’ যুক্ত হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জোট চারটি হচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট, সিপিবি নেতৃত্বাধীন বাম মোর্চা এবং চরমোনাইর পীরের ইসলামী শাসনতন্ত্র নেতৃত্বাধীন অপর একটি ইসলামিক মোর্চা (খুব শিগগিরই আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে)।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আন্দোলনসহ ন্যায়পরায়ণ ও কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচনী জোটই হতে যাচ্ছে এই ‘জাতীয় যুক্তফ্রন্ট’।
এ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের এই বৃহত্তর ঐক্যে সব দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে স্বাগত। আমরা স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করে একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করব। যেখানে আইনের শাসন থাকবে, সর্বস্তরের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও জনগণের ভোটাধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে কাজ করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব দীর্ঘ দুই বছর ধরে এই ঐক্যফ্রন্ট গঠনে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে আসছেন। তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খানসহ আরও কয়েকজন সদস্য। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট ছাড়া ইতিমধ্যেই প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তাদের সবারই মতামত ও প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন তিনি। তারমধ্যে গণফোরাম ৭টি, বিকল্পধারা ১১টি, নাগরিক ঐক্য ৬টি, জেএসডি ১৫টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৯টি, প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়াও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কাছ থেকেও মতামত নিয়েছেন। সবার মতামতের ভিত্তিতেই বিএনপি মোট ১০ প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে। বিএনপির তৈরি ১০টি প্রস্তাব ইতিমধ্যেই উল্লিখিত সব দলই গ্রহণ করেছে। এখন শুধু ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতাটুকু বাকি আছে। গত শনিবার রাজধানীর নাজিম উদ্দীন রোডের পুরনো জেলখানায় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ‘জাতীয় যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের বিষয়ে তার চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া বৃহত্তর এই নির্বাচনী ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে যে কোনো বাধা অতিক্রম করে তা বাস্তবায়নেরও নির্দেশনা দেন।
তবে জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে এতদিন যুক্তফ্রন্টসহ বেশ কয়েকটি দলের আপত্তি থাকলেও দলগতভাবে জামায়াত এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে না থাকায় সংশ্লিষ্ট বাম ও ডানপন্থি সব দলের পক্ষ থেকেই সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে দলগতভাবে জামায়াত এই বৃহত্তর ঐক্য না থাকলেও ইসলামিক এই দলটির কমপক্ষে ২০ জন নেতা ব্যক্তিগতভাবে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে মনোনয়ন চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার মতে, জামায়াত তো বিএনপির সঙ্গে আছে। বিএনপি কী করবে, সেটা তারাই ঠিক করুক। তবে বৃহত্তর এই ফ্রন্টের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। সময়মতো আপনারা সবই জানতে পারবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বৃহত্তর এই রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য জামায়াত কোনো বাধা নয়। নির্বাচনী কাজেও জামায়াতকে প্রয়োজনে সম্ভাব্য জোট নেতাদের আসনের বাইরে রাখা হবে। আর আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে যার যে এলাকা থেকে পাস করার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে তাকেই মনোনয়ন দেবে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’।
অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, একমাত্র ভারসাম্যের রাজনীতিই স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে পারে। নির্বাচনে কোনো দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে দেশে স্বেচ্ছাচারী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, ইতিহাস আমাদের এ শিক্ষা দেয়। স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই আমরা এই বৃহত্তর ঐক্য গঠনের চেষ্টা করছি। এদিকে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রস্তাব এবং মতামতের ভিত্তিতে তৈরি বিএনপির ১০টি প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্যই হলো- ‘বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা’।
প্রস্তাবগুলো যথাক্রমে : ‘১. বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা। ২. একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। ৩. সব রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান। ৪. রাষ্ট্রকে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা। ৫. রাষ্ট্রক্ষমতার গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য। ৬. স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা। ৭. দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে কার্যকর করা। ৮. সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান। ৯. সর্বনিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে আয়ের বৈষম্যের অবসান। ১০. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসনের প্রতিষ্ঠা।’
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এই ১০টি প্রস্তাবের ভিত্তিতেই বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। গত ১১ ও ১৩ আগস্ট দলের স্থায়ী কমিটির দুই দিনের টানা বৈঠকের পর এই ১০ দফা প্রস্তাব চূড়ান্ত করে বিএনপি। এরপর এই প্রস্তাবের কপি ড. কামাল হোসেন এবং বিকল্পধারা, নাগরিক ঐক্য, জেএসডিসহ সংশ্লিষ্ট নেতাদের দেওয়া হয় এবং তারা সবাই এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন বলে জানা যায়। সূত্র: বাংলঅদেশ প্রতিদিন।