দেশের খবর: দুই সন্তানের সামনে মাকে মেঝেতে ফেলে কিল, ঘুষি ও লাথি মারছে ডিবি পুলিশের দুই পুরুষ কর্মকর্তা। হাউমাউ করে চিৎকার করছেন মা। সন্তান কি আর বসে থাকতে পারে! মাকে বাঁচাতে ডিবি কর্মকর্তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় এমনই দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায়। এদিকে, ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় পুরো নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন বিব্রত। মহিলার সারা শরীরে আর মুখে শুধু আঘাতের চিহ্ন। প্রশ্ন উঠেছে, ডিবির দুই পুরুষ কর্মকর্তা কীভাবে একজন মহিলাকে পেটাল! ঘটনার সূত্রপাত হয় নারায়ণগঞ্জ ডিবির দুই কর্মকর্তা এএসআই আমিনুল ও এএসআই বকুল একটি ফাস্টফুডে খাবার খেয়ে বিল দিতে অপারগতা প্রকাশ করায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খানপুর বরফকল খেয়াঘাট-সংলগ্ন চৌরঙ্গি ফ্যান্টাসি পার্কের সামনে মাইলাইফ কেয়ার ফাস্টফুড নামের একটি দোকানে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেতে যান ডিবির দুই সদস্য এএসআই আমিনুল ও এএসআই বকুল। মিল্কশেইক খাওয়ার পর তা ভালো হয়নি দাবি করে বিল দিতে রাজি হননি এএসআই আমিনুল ও এএসআই বকুল। এ সময় তাদের সঙ্গে ফাস্টফুডটির মালিক ১১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি জালালের ছেলে আলামিন ও রবিন বাগিবতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। বাগিবতণ্ডার সময় তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এ সময় যুবলীগ নেতা জালাল ও তার স্ত্রী রিনা ইসলাম ঘটনাস্থলে এলে ডিবির দুই এএসআই মিলে তাদের মারধর করেন। রিনাকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে মেঝেতে ফেলে দেয় দুই এএসআই। দুই কর্মকর্তার সঙ্গে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। ভয়ে দুই ছেলে তাদের মাকে বাঁচাতে এগোতেও পারছিল না। একপর্যায়ে মায়ের চিৎকার আর সহ্য করতে পারেনি দুই ছেলে। আলামিন ও রবিন ঝাঁপিয়ে পড়ে ডিবির দুই কর্মকর্তার ওপর। বসে থাকেননি প্রত্যক্ষদর্শীরাও। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ওই দুই এএসআইকে বেধড়ক পিটুনি দেয়। এ সময় খবর পেয়ে ডিবির পরিদর্শক মাসুদ, এসআই মিজান ও এসআই সায়েম ঘটনাস্থলে এলে দ্বিতীয় দফা রিনাসহ পুরো পরিবারকে লাঠিপেটা করে। উত্তেজিত ডিবির সদস্যদের লাঠিপেটা থেকে রক্ষা পায়নি সাধারণ পথচারীরাও। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিরোধ গড়ে তুললে শুরু হয় ডিবি পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ওই সময় সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ডিবির এসআই মিজান ও এসআই সায়েম এবং যুবলীগ নেতা জালাল, ছেলে আলামিন ও রবিনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত ডিবির পরিদর্শক মাসুদ, এএসআই আমিনুল ও এএসআই বকুলসহ বাকিদের নগরীর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিনা বলেন, ‘আমার শরীরে শুধু আঘাতের চিহ্ন। দুজন ডিবির পুুরুষ সদস্য কীভাবে একজন মেয়েলোকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। সারা শরীরে আমার ব্যথা। বিভিন্ন স্থান থেকে হুমকি আসছে আবার দেখে নেওয়া হবে। শুধু চুপ থাকতে বলা হচ্ছে।’ এদিকে এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দোকানটির মালিক জালাল উদ্দিন। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে চৌরঙ্গি ফ্যান্টাসি পার্কের মালিক আবদুস সাত্তারকে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন ডিবির এএসআই আমিনুল (৪৮), বকুল (৫০), এসআই মিজান (৪৮) ও এসআই সায়েম (৪২)। মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে মামলাটি করা হয়। এর আগে সোমবার ভোরে এএসআই আমিনুল মূল ঘটনা আড়াল করে জালাল উদ্দিন, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে আসামি করে সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।