রাজনীতি

নদীর চর বিক্রির অভিযোগ উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশের বিরুদ্ধে

By Daily Satkhira

August 29, 2016

এম বেলাল হোসেন: সাতক্ষীরাবাসীর প্রধান সমস্যা এখন জলাবদ্ধতার। সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রতি বছর পানিতে হাবু ডুবু খেতে হয় সাতক্ষীরাবাসীকে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই ঘর ছেড়েছেন অনেক পরিবার। এ জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো জেলার নদীর জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ। জেলার প্রভাবশালীরা ক্ষমতার দাপটে মরিচ্চাপ, বেতনা, খোলপেটুয়া ও ইছামতির চর দখল করে গড়ে তুলছেন তাদের স্থাপনা। যে কারণে নদীর পানির অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে মরে যাচ্ছে নদী। আর সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতার। সম্প্রতি জানা গেছে সদর উপজেলার ব্যাংদহা এলাকায় মরিচ্চাপ নদীর চর দখল করার মহা উৎসব চলছে। নদীর জমি দখল করে তা আবার প্লট আকারে বিক্রিও করা হচ্ছে। এতে করে এলাকার সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠেছে। তবে ওই দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন তারা। আর ওই জমি দখল সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ড অবগত থাকলেও ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে রীতিমত রশি টানাটানি করছেন পানি উন্নয়নের বোর্ডের কর্মকর্তারা। এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অন্য কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেন, আবার অন্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ‘স্যারের’ সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে ব্যাংদহা স্লুইস গেটের সামনে মরিচ্চাপ নদীর চর পড়েছে। সেই চর দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে পাকা দোকানঘর। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স্যামুয়েল ফেরদৌস পলাশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাথে জোকসাজসে ভরাট হওয়া চর বিক্রি করেছেন। প্রতি বর্গ হাত জমি ২৫ হাজার টাকা দরে ৯ জনের কাছে বিক্রি করেছেন। যদিও জমির কোন কাগজ পত্র ক্রেতারা পায়নি। তবে ইতোমধ্যেই তাদের কাছ থেকে পুরো টাকা গ্রহণ করা হয়েছে। তারপরও ৯ জনের প্রত্যেকে ১০০ বর্গ হাত জমি কিনে সেখানে পাকা ঘর নির্মান কাজ চলছে করছেন ৩মাস আগে থেকে। ইতোমধ্যে ৫ জনের পাকা ঘর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৪জনের কারো ঘরের লিন্টন পর্যন্ত আবার কারো পিলার তোলা হয়েছে। এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে দোকানদাররা বলেন, প্রভাবশালী নেতা স্যামুয়েল ফেরদৌস পলাশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পোল্ডার নং ২ এর এসও আবুল হোসেন ও সার্ভেয়ার বিমল কুমারকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, বিরোধিতা করে কোন লাভ হবে না। এছাড়া পলাশ সদর উপজেলা আ.লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেউ। এলাকাবাসী ও ক্রেতাদের দেয়া তথ্যমতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্যাংদহা মৌজায় জেএল নং ১৭ এবং ১ নং খাস খতিয়ানের ৮৫ ও ১৫৩৮ নং দাগে ৫০০ হাত দৈঘ্য ও ৪০ হাত প্রস্থের ওই জমির একই ইউনিয়নের গোবরদাড়ী গ্রামের আহাদ আলী সরদারের ছেলে শ্যামুয়েল ফেরদৌস পলাশ বর্গহাত প্রতি ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তাদের কোন কাগজ পত্র দেয়া হয়নি। এই জমি উত্তর গাভা গ্রামের জমায়েত সানার ছেলে রবি সানা, মৃত রাধাপদ প্রামানিকের ছেলে ধনা প্রামাণিক, দক্ষিণ গাভা গ্রামের মৃত অধীর সরকারের ছেলে গোপাল সরকার, মৃত সন্তোষ প্রামানিকের ছেলে দেবাশীষ প্রামাণিক, উত্তর গাভা গ্রামের মৃত হাকিম সানার ছেলে আইয়ূব সানা, গোবরদাড়ী গ্রামের ছহিল উদ্দীনের ছেলে মিন্টু সরদার এবং জোড়দিয়া গ্রামের শেখ নুজ্জামানের ছেলে মারুফ সহ ৭ জন ব্যাক্তি কিনেছেন। স্লুইস গেটের সামনে অবৈধ চর বিক্রি করার ঘটনায় এলাকাবাসী হতাশ হয়ে পড়েছেন। এলাকাবাসী আরো জানান, ফিংড়ি, গোবরদাড়ী, গাভা, জোড়দিয়াসহ প্রায় কয়েক হাজার গ্রামে পানি ওই স্লুইস গেট দিয়ে প্রবাহিত  হয়ে মরিচ্চাপ নদীতে পড়ে। কিন্তু নদীর এসব চর যদি দখল করা তবে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে সৃষ্টি হবে স্থায়ী জলাবদ্ধাতার। এলাকাবাসীর দাবি বর্তমান সরকার যেখানে দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্ত করতে প্রায় প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকা দিয়ে নদী ও খাল খনন করছেন। সেখানে সরকারকে বৃৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে কতপয়ি স্বার্থন্বেষী মহল মেতেছেন নদী ও খাল দখলে। এসব দখলদারদের অবিলম্বে যদি আটকানো না যায়। তবে এ অঞ্চলের মানুষকে পানিতে ডুবে মরতে হবে প্রতিবছরই। চোখের জলে ভাসতে হবে এ অঞ্চলের মানুষের। মাত্র ২/১ মানুষের আর্থিক লোভের কারণে পানিতে ডুবে মরবে হাজার হাজার মানুষ। এবিষয়ে ফিংড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব মুনসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ওই জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে যে কারনে আমার কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই। বলে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক এর সাথে গতকাল সকাল ১০.৫৫ মিনিটে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আপাতত আমরা কোনো ডিসিআর দিতে পারছিনা। কিন্তু কীভাবে ঐ জমিতে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে তা জানা নেই। আপনি এবিষয় সার্ভেয়ার বিমাল বাবুর সাথে যোগাযোগ করেন। ১১টায় আমার মিটিং আছে তাই এখন আর কথা বলতে পারবো না। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর সার্ভেয়ার বিমল বাবুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার স্যার অপূর্ব ভৌমিকের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলে এড়িয়ে যান। এব্যাপারে এড. স্যামুয়েল ফেরদৌস পলাশের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।