রাজনীতির খবর: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার উদ্যোগ বাদ দিয়ে এই খাতের চার হাজার কোটি টাকা দিয়ে আগামী নির্বাচনে ৪৪ হাজার ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ব্যালেট পেপার জালিয়াতি রোধে সরকারের মুখাপেক্ষী না থেকে নিজেদের জন্য অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস স্থাপন করুন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন। ভোট গ্রহণকালীন কর্মকর্তাদের সম্মানী ও ঝুঁকি ভাতার ব্যবস্থা করুন। ভোটগ্রহণকালে ছবি ও ভিডিও ধারণের জন্য প্রতিটি উপজেলা নির্বাচনী অফিসে সিসিটিভি সরবরাহ করুন।
বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞগণের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং দেশের অধিকাংশ আইটি বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শকে তোয়াক্কা না করে সরকার ও তার অনুগত নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করার জন্য তড়িঘড়ি করে আরপিও সংশোধন করার অপকৌশল গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে কী ঘটল? কার নির্দেশে এবং কাকে বিজয়ী করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইসি গোপনে এই বিতর্কিত ও সারাবিশ্বে পরিত্যক্ত ইভিএম যন্ত্র কেনার জন্য উঠে পড়ে লেগে গেলেন? এই বিতর্তিক যন্ত্র কেনার জন্য ব্যয়িত অর্থ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দায় হিসেবে গণ্য হবে। এই অপকর্মের দায়ভার সম্পূর্ণ ইসিকেই বহন করতে হবে।’
অবিলম্বে ইভিএম যন্ত্র ক্রয়ের উদ্যোগ বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ইসির প্রতি জনগণের আস্থাহীনতাকে আর ঘনীভূত করবেন না। এ ডিজিটাল কারচুপির পথ থেকে সরে আসুন। অন্যথায় ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ব্যক্তিগত এই তৎপরতার মূল্য দিতে হবে।’ ইভিএম পদ্ধতি বন্ধ করা না হলে দেশে যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য ইসিকে দায়ভার নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে নির্বাচন কমিশন দশ হাজার টাকা দিয়ে একটি ইভিএম যন্ত্র ক্রয় করেছিল। সেখানে আরও বিশগুণ বেশি দামে ২ লাখ পাচ হাজার টাকা দিয়ে একটি মেশিন ক্রয় করতে হচ্ছে। এটা জনগণের অর্থ লুপাটের আরেকটি উদ্যোগ নয় কি?’
নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন আছে কি না আমরা বুঝতে পারছি না। একমাত্র নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন সব কথা বলছেন? মাঝে মধ্যে কমিশনাররা সামনে আসেন। এ সময় তিনি ইসি সচিব হেলাল উদ্দিনকে ‘একজন দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ কর্মকর্তা’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ইভিএমের পোল কার্ডে ভোটারদের সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পোল কার্ডের মাধ্যমে ভোটের ফলাফল গণনা করা হয়। যেখানে একটি ডুপ্লিকেট পোল কার্ডও থাকে, ফলে আগে থেকে ডুপ্লিকেট পোল কার্ডে ভোটের ফলাফল সেট করে ভোট গণনার সময় তা ব্যবহার করে ফলাফল পাল্টে দেয়া সম্ভব।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে না।’
বিএনপির চলমান ইস্যুকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য ইভিএম বিষয় সামনে নিয়ে আসা হয়েছে কি না- এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সেটা বলব না। সামনে তো একটা নির্বাচন হবেই। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আমরা সেটা গ্রহণ করি না করি সেটা মেটারিয়াল ইস্যু না। প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা জনগণের সিদ্ধান্ত নয়।’
এ সময় একজন বিদেশি ইভিএম বিশেষজ্ঞকে ভিডিও কনফারেন্সে নিয়ে আসে বিএনপি। এই বিশেষজ্ঞ ভিডিও কনফারেন্সে ইভিএমের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক নিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।