পাইকগাছা প্রতিনিধি : ৯ ডিসেম্বর! কপিলমুনির ঐতিহাসিক মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ও মার্তৃভুমির টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার অকুতভয় দামাল ছেলেরা। যুদ্ধকালীন সময়ে ও তার পুর্বে কপিলমুনি সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্ এবং শান্তি কমিটির দালালরা লুটপাট থেকে শুরু করে ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় নিরীহ মানুষের উপর। সেদিনকার লোমহর্ষক ও বর্বোরোচিত ঘটনার কথা আজও ভুলিনি এলাকার মানুষ। ভয়ংকর রাতের স্মৃতি আর হানাদার বাহিনীর তান্ডবলীলা এখনও প্রবীনদেরকে শিউরে তোলে। পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষের তীরবর্তী কপিলমুনির রায় সাহেবের বিশালাকৃতির বাড়ীটি রাজাকাররা সুরক্ষিত দুর্গ হিসাবে বেঁছে নিয়েছিল। মান্দাতা আমলের ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িটিকে ঘিরে যুদ্ধের অনেক স্মৃতিচিহ্ণ আজও বহন করে চলেছে। কথিতমতে রাজাকাররা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রাচীর বেষ্টিত দ্বিতল এ ভবনটি তাদের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত মনে করে গড়ে তুলেছিল রাজাকার ঘাঁটি। এরা এলাকার হিন্দু ও নিরীহ লোকদের ধরে এনে তাদের নির্যাতনের কথা আজও শিহরিত। ১৯৭১ সালে ১১ জুলাই লেঃ আরিফিনের নের্তৃত্বে সরদার ফারুক আহমেদ, আবুবক্কার, শাহজাহান, মাহতাব, লতিফ, আনোয়ার, মনোরঞ্জনসহ আরোও অনেকে কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমন চালায়। রাত ৩টা থেকে পরদিন বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে একটানা যুদ্ধ। ঐ সময় খাদ্য, পানীয় ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতার অভাবে প্রথমবারের অভিযানে রাজাকার ঘাটির পতন ঘটানো সম্ভব হয়নি। এরপর সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যমতে শুরু হয় নতুন পরিকল্পনা। আর এরই মধ্যে রাজাকারদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। কপিলমুনি বাজারের কৃষ্ণচুড়া বৃক্ষের নীচে জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো নিরীহদেরকে। এদিকে যুদ্ধের নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনীর দক্ষিণ খুলনার সমস্ত ক্যাম্প কমান্ডারদের একত্রিত করে তাদের মতামত ও যুদ্ধের কলাকৌশল নির্ধারণ করে পুনরায় শুরু হয় যুদ্ধ। ঐ সময় চুড়ান্ত পরিকল্পনায় অংশ নেন প্রয়াত গাজী রহমত উলাহ দাদু (বীরপ্রতিক), যুদ্ধকালীন কমান্ডার স. ম. বাবর আলী, ইউনুচ আলী, শাহাদাৎ হোসেন বাচ্ছু, গাজী রুহুল আমীন, আঃ সালাম মোড়ল, আবুল কালাম আজাদসহ আরোও অনেকে। ৬ ডিসেম্বর রাতে আক্রমণ করা হয় কপিলমুনি রাজাকার ঘাটি। দফায় দফায় চলে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। স্থানীয় প্রতাপকাটি কাঠের ব্রীজের উপর ৮জন রাজাকার, তার একটু পেছনে আরো ৫জন রাজাকার যুদ্ধে মারা যায়। একের পর এক মরতে থাকে পাক দোসর রাজাকারদলের সদস্যরা। ৭ ও ৮ ডিসেম্বর একটানা যুদ্ধের পর ৯ ডিসেম্বর সকাল ১১ ঘটিকায় ১৫৫ জন রাজাকার আতœসমর্পন করতে বাধ্য হয়। রাজাকারদের পতন ও কপিলমুনি হাইস্কুল মাঠে আতœসমর্পন এর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে চতুর্দিক থেকে জড়ো হতে থাকে জনতা। উপস্থিত জনতার সমন্বয়ে একটি গণ আদালত গঠন করে রাজাকারদের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয়। দুপুর দুটোয় এ মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে তাদের পতনের মধ্যদিয়ে মুক্ত করা হয় কপিলমুনি।