দেশের খবর: ক্রান্তিকাল পার করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এ অবস্থার মধ্যেই আজ শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) ৪১ বছরে পা রাখলো দলটি। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপির বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন কারাবন্দি। তার অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তিনিও দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। দলের শীর্ষ দুই নেতার অনুপস্থিতিতে অনেকটাই ভারাক্রান্ত বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব। এই দুঃসময়েও দলের ঐক্য যেমন আছে, তেমনি চলছে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের প্রস্তুতিও। ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে সমাবেশ করবে দলটি। এতে দলের স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতারা অংশ নেবেন। এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকালে প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেবেন দলের নেতারা। পরদিন ২ সেপ্টেম্বর ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (রমনা) মিলনায়তনে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা হবে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অঙ্গীকার খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে হারানো ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ জনগণের মানবিক মর্যাদা সুরক্ষা করা।’ মির্জা ফখরুল বিএনপি’র ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোনও বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। বারবার অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে যিনি মুক্ত করেছেন, সেই অবিসংবাদিত নেতা খালেদা জিয়াকে বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। এই সব প্রতিহিংসামূলক জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্ত করে আনতে হবে আমাদের প্রিয় নেত্রী বেগম জিয়াকে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।’ প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল পাঁচটায় রাজধানীর রমনা রেস্তোরাঁয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বিএনপির যাত্রা শুরু হয়। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করেন। পরে ১৯৭৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে ১৯৭৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জিয়াউর রহমান প্রথমে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল’ (জাগদল) গঠন করেন। যদিও দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার। ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণা হয়। বিএনপির ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল জিয়াউর রহমান তার ‘সামরিক শাসন’-কে ‘বেসামরিক’ করার উদ্দেশ্যে শুরু করেন ১৯ দফা কর্মসূচি। অনেক ভাঙা-গড়া আর উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুদীর্ঘ ৪০ বছর পার করেছে বিএনপি। এসময় চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল দলটি। দু’বার জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিএনপি। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২০৭টি আসন পেয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে বিএনপি। এরপর ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করে রাজনীতিতে আসেন তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া। ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয় খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তিনি দলটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৯১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নেতৃত্বে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালের বির্তকিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে স্বল্প দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। ১৯৯৯ সালে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে বিএনপি। এরপর ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ভোটের লড়াইয়ে জিতে সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে বিএনপি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি।