সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় পুলিশ ও গুন্ডার হানায় ১২ পরিবার বাড়ি উচ্ছেদের অভিযোগ

By daily satkhira

September 01, 2018

আসাদুজ্জামান : টানা ৬০ বছর ধরে বসবাস করা ঘর বাড়ি থেকে পিস্তল দেখিয়ে ১২ টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে দিয়েছে একদল ভাড়াটে গুন্ডা। ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের বাড়ি ঘরে তালা ঝুলিয়েছে তারা। পুকুরের মাছ ধরে নিয়েছে। গাছ গাছালি কেটে ফেল লুট করে নিয়েছে। আর বলেছে, কথা বললে ইয়াবার মামলা দেবো। দশটি করে মামলা দেবো যাতে সারা জনম ধরে জেলের ভাত খেতে হয়। এ সময় নারীদের অপমানজনক ভাষায় গালাগালও করেছে তারা। শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ১২ টি পারিবারের প্রায় ৪০ জন নারী পুরুষ শিশু সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে এর প্রতিকার দাবি করেন। তারা জানান, পুলিশ তাদের গুলি করার হুমকি দিয়েছে। তাদেরকে পিস্তল উঁচিয়ে তাড়িয়েছে। তান্ডব শেষে গুন্ডাদের বহনকারী একটি কালো রংয়ের মাইক্রো পুলিশের সাথে সাতক্ষীরা থানায় এসেছে। এসব গুন্ডাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন যশোরের বেজপাড়ার মাহবুবুর রহমান মধু। তিনি পুলিশের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার স্বজন বলে দাবি করেছেন। শনিবার তিনি সেখানে জমি বিক্রির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের রুস্তম আলিসহ অন্যরা জানান, তারা মোট ১২ জন মোহনপুর গ্রামের আনসার সরদারের ছেলে জামালউদ্দিনের কাছ থেকে বহু বছর আগে খন্ড খন্ড করে দুই বিঘা জমি কিনে বসবাস করে আসছেন। এই জমি দাবি করে যশোরের জনৈক মাহবুবুবর রহমান মধু আদালতে মামলা করেন। মামলায় তিনি হেরে যান। এরই মধ্যে ওই জমি খাস খতিয়ানভূক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ কারণে তারা ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছেন না। এমনকি জমির মিউটেশনও বন্ধ রয়েছে । অভিযোগ করে তারা বলেন, আজ শনিবার কোনো ধরনের আইনগত নোটীশ ছাড়াই সাতক্ষীরা সদর থানার এস.আই হাজ্জাত মামুন একদল পুলিশ নিয়ে মোহনপুর গ্রামে হাজির হন। একই সময়ে সেখানে আসেন যশোরের মাহবুবুর রহমান মধু ও তার বাহিনী। একটি কালো রংয়ের মাইক্রো থেকে তারা দ্রুত নেমে পড়ে শুরু করেন হুমকি ধামকি তান্ডব। তাদের হাতে ছিল লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র। পিস্তলও দেখা গেছে তাদের কারও কারও কাছে। এ সময় পুকুর থেকে মাছ ধরে নেয় তারা। এই মাছের একাংশ হামলাকারীরা বিক্রি করে দেয়। বাকি অংশ পুলিশকে দেয়। প্রায় তিন ঘন্টা তান্ডব চালিয়ে তারা সাতক্ষীরায় ফিরে আসে। এর আগে তারা বেশ কয়েকটি ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়। একাধিক মুদি দোকানেও তালা মেরে দেয়। এসব পরিবারের সদস্যদের কেউ ভ্যান চালায়, কেউ চা বিক্রি করে। আবার কেউ ফেরিওয়ালা, কেউ মাটি শ্রমিক, কৃষক অথবা দিন মজুর। জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার অনেক আগে সরকার এ জমি সড়ক ও জনপথের অনুকূলে অধিগ্রহন করে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেন মোহনপুরের আনসার আলি সরদার। তার দুই ছেলে মো. জামালউদ্দিন ও মো. শাহজাহান । জামালউদ্দিন তার অংশের জমি কিছু টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর করেন ১২ টি সাধারন পরিবারের কাছে। সেই থেকে তারা এই জমিতে বসবাস করে আসছেন। এরই মধ্যে যশোরের বেজপাড়ার মাহবুবুর রহমান মধু এ জমি দাবি করে মামলা করে হেরে যান। তার দাবি ‘ওই জমি তার বাবা খসরুর জামানের কাছ থেকে বর্গা নিয়েছিলেন আনসার আলি সরদার। এখন সে জমি ছাড়ছেন না। জাল দলিল করে দখলে রেখেছেন। বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হওয়া মুক্তার হোসেন, কেরামত আলি, আবদুস সোবহান, আবদুস সাত্তার, আবু তালেব, শওকত আলি, আইউব আলি, মহিউদ্দিন, আক্তারুল ইসলাম ও নাজিমউদ্দিন জানান, তাদের থাকার জায়গা নেই। পরিবারের সদস্যদের কারও দিনভর খাওয়া হয়নি। এসব অভিযোগ জানাতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আরও এসেছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা রোমেছা বেগম, মেহেরুন, রাশিদা খাতুন, রিজিয়া বেগম, তানজিলা খাতুন, মাজেদা খাতুন, মনোয়ারা বেগমসহ পরিবারের নারী সদস্যরাও । তাদের শিশুরাও এসেছিল সাথে। অভিযোগ করে তারা বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে থাকা এস.আই হাজ্জাত মামুন তাদেরকে বলেছেন, এ জমির দাম এক কোটি টাকা। তোরা কতো দিবি বল। নইলে জমি থেকে সরে যা। এ প্রসঙ্গে ঝাউডাঙা ইউপি সদস্য রুহুল আমিন জানান, যশোরের মাহবুবুর রহমান মধু গায়ের জোর দেখিয়ে জমি দখল করেছে। ওই জমিতে আনসার ও তার পরিবারের বসবাস ৬০ থেকে ৭০ বছর আগে থেকে। তাদেরকে উচ্ছেদ করা অন্যায়। বিষয়টি সম্পর্কে জানবার জন্য সাতক্ষীরা থানার এস.আই হাজ্জাত মামুনের কাছে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। দুইবার কেটেও দেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দুই পক্ষের কথা শুনেছি। তারা থানায় এসেছিল। ঘরের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামি ৪ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষকে বসিয়ে কাগজপত্র দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উচ্ছেদ পরিবারের সবাই বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন ঘটনাস্থলে দুই পক্ষে বিবাদ হয়েছে। পুলিশও একটু কঠোর অবস্থানে ছিল। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে । উচ্ছেদে ভাড়াটে গুন্ডাদের নেতৃত্বদানকারী যশোরের মাহবুবুর রহমানকে ফোন করা হলে তার মেয়ে পরিচয় দিয়ে জানানো হয় তিনি নামাজে রয়েছেন। তাছাড়া তিনি অসুস্থ।