দেশের খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করা হলেও বিএনপির নির্বাচনের অংশগ্রহণ নিয়ে চলছে দো’টানা। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এতে তারা অংশ নেবেন, নয়তো নয়। তবে বর্তমানে নির্বাচন আর খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনায় মজেছেন দলের সিনিয়র নেতারা। বিএনপির পক্ষ থেকে সংলাপের কথা বলা হলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে সুযোগ নেই সংলাপের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কিছু সিনিয়র নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে কয়েকটি সংস্থার রিপোর্ট জমা পড়েছে। রিপোর্টে বিতর্কিত এমপিদের আমলনামা এবং মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের ভালো-মন্দ দু’টায় ঠাঁই পেয়েছে। দলের কর্মকাণ্ড কিংবা জনপ্রিয়তার দিক থেকে কোন এমপির কি আমলনামা সবই লেখা রয়েছে সেই রিপোর্টগুলোতে।
আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, প্রতিটি আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। এ মুহূর্তে প্রকাশ্যে কারো নাম ঘোষণা করা যাবে না। নাম ঘোষণা করলে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। সংঘাতও হতে পারে। নাম ঘোষণার সময় এখনো হয়নি। সময় বলে দেবে কে মনোনয়ন পাবে। যেই মনোনয়ন পাবে তার পক্ষ নিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। যাদের ব্যক্তি ইমেজ ভালো। দলের সুনাম কুড়াবে। তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ইতোমধ্যে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে তৃণমূলের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। দলের সভানেত্রী বিভিন্ন উইংস থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হবে। এই তালিকাও মোটামুটি প্রস্তুত, প্রার্থিতা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। তবে তফসিল ঘোষণার পরই মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন, তা চূড়ান্তভাবে বলা যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অন্য দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি। দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়া-না পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে বিএনপির নির্বাচনী সমীকরণ। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না তারা। বিএনপির সমস্ত মনোযোগ এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে। তারা কি করবে তা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ চলছে দলে। নেতারা বৈঠক করছেন, কথা বলছেন। খালেদা জিয়ার দিক-নির্দেশনাও পেয়েছেন।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য করার ষড়যন্ত্র করছে। এটা তারা পারবে না। সেই চ্যালেঞ্জই এখন আমরা মোকাবিলা করছি। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। তবে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে বিএনপি বসে থাকবে না। তিনি বলেন, চেয়ারপারসনের মুক্তির পাশাপাশি এবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আদায় করে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারও বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যা যা করার সবই করবেন তারা।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চার শর্ত পূরণ না হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। শর্তগুলো হচ্ছে- খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম বলেন, অগণতান্ত্রিক প্রহসনের মধ্য দিয়ে আরেকটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারকে বাধ্য করা। যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। মুক্ত খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি বা ২০ দল কোনও নির্বাচনে যাবে না।