অনলাইন ডেস্ক: টানা ৩১ বছরের চাকরিজীবনে এক দিনও ছুটি না নেওয়া ও স্কুলের সব নিয়ম মেনে চলে কর্তব্যপরায়ণতার বিরল নজির স্থাপনকারী সেই শিক্ষক পেলেন মন্ত্রীর পুরস্কার। অনন্য এ নজির স্থাপনে পুরস্কার হিসেবে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাসকে এক লাখ টাকার চেক দিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অভয়নগরের ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য এক আয়োজনের মধ্যদিয়ে মন্ত্রীর পক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায় এ চেক তুলে দেন। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামে বেড়ে উঠা সত্যজিৎ মন্ডলের। ১৯৮৬ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। চাকরি জীবনের প্রথম দিন থেকেই স্কুল শুরুর আগেই তিনি পৌঁছে যেতেন। দীর্ঘ ৩১ বছরের চাকরি জীবনে তার এ সু-অভ্যাসের ব্যতিক্রম ঘটেনি। শুধু তাই নয়, প্রায় তিন যুগের চাকরি জীবনে একদিনও স্কুল কামাই করেননি, নেননি ছুটিও। এমনকি নিজের বিয়ের দিন, বাবার মত্যুর দিনেও স্কুলে উপস্থিত থেকেছেন তিনি। এজন্য নিজের পরিবারের লোকজনসহ অনেকেই তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবুও অটল থেকেছেন সত্যজিৎ। বিবেকের শতভাগ প্রদীপ জ্বেলে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো জ্বেলে চলেছেন তিনি। শিক্ষক সত্যজিৎ মন্ডল বলেন, আমি এই স্কুলে নিয়োগ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে। তখন এখানে আর কোন বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিল না। তাই বিজ্ঞানের ক্লাসগুলো কোন শিক্ষক নিতে পারতেন না। সে কারণে আমি ছুটি নিলে বা উপস্থিত না থাকলে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এসব কথা ভেবেই আমি স্কুলে উপস্থিত থেকেছি। তিনি বলেন, তখনকার সময় কাঁদা ও বুক পানি মাড়িয়ে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে এসেছি। কখনও লুঙ্গি পরে, জুতা হাতে নিয়ে আসতে হয়েছে। স্কুলে এসে তা পরিবর্তন করে ক্লাস করেছি। বলতে বলতে চোখ ভারি হয়ে যায় সত্যজিৎ মন্ডলের। হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে আমার আত্মার সম্পার্ক হয়ে গেছে। তাদের না দেখলে আমি থাকতে পারি না। সংসার জীবনেও একজন সুখী ও আদর্শ মানুষ গণিতের শিক্ষক দুই সন্তানের জনক সত্যজিৎ মন্ডল।
তার প্রতশ্যা; এই স্কুলটিকে তিনি অভয়নগর উপজেলার শ্রেষ্ঠ করা। তার জন্য সবার সহযোগিতা চান তিনি। কাজের প্রতি এমন বিরল নিষ্ঠার কারণে পরিবার, সহকর্মী আর শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই শিক্ষক। গণিতের শিক্ষক সত্যজিৎ মন্ডলের কর্তব্যনিষ্ঠায় মুগ্ধ যশোর অভয়নগর উপজেলার ধোপাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সত্যজিৎ মন্ডল শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করান না। তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
যশোর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, নি:সন্দেহে কর্মস্থালে এতো বছর ছুটি না নেওয়া অনুস্বরণীয়। পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। কারণ ব্যক্তি জীবনে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। তার মধ্যেও তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকেছেন। আসলে আর্দশ শিক্ষক বলতে আমরা যাদের অনুস্বরণ করতে পারি সত্যজিৎ মন্ডল তার মধ্যে একজন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন রায় বলেন, শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাসের কর্মজীবনে কোনোদিন ছুটি না নেওয়া এবং কর্তব্যপরায়ণের বিষয়ের সংবাদ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইফায়েস ওসমান মহোদয়ের নজরে আসে। পরে তার নির্দেশনা মোতাবেক এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে সত্যতা জানতে পেরে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে এক লাখ টাকার চেক স্কুল পরিচালনা কমিটির হাতে ও এক লাখ টাকার চেক শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাসের হাতে তুলে দেওয়া হয়