নিজস্ব প্রতিবেদক: শৈশবে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তবে স্বপ্নটা তার পাল্টে গেছে। হয়েছেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সুযোগ হয়েছে বিশ্বখ্যাত মাইক্রোসফটে কাজ করার। স্বপ্নবাজ এই তরুণ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ খান চৌধুরী। তবে তার পরিচয়টা এখন মাইক্রোসফটের ইঞ্জিনিয়ার।
সাতক্ষীরার এই ছেলের শৈশব কেটেছে সাতক্ষীরার পলাশপোল গ্রামে নিজ বাড়িতে। সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক জীবন শেষ করে আসিফ ভর্তি হন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্কুলজীবন থেকেই ম্যাথ অলিম্পিয়াডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আসিফ। প্রবলেম সলভিং শুরু করেন ২০১১ সালে। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রবলেম সলভিংকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি, তেমনি সমানতালে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায়। এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আসিফের ঝুলিতে যুক্ত হয়েছিল নানা ধরনের অভিজ্ঞতা। আর এসব অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগিয়ে তিনি হয়ে উঠছেন মস্ত ইঞ্জিনিয়ার।
আসিফের স্বপ্নের পূর্ণতা পেতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চাকরি মেলায় আসিফকে জুনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরির জন্য প্রস্তাব দেয় সেলিস রকিং সফটওয়্যার। তিনি তখনো ফাইনাল পরীক্ষা দেননি। পরবর্তীতে ফাইনাল পরীক্ষার পাঠ চুকিয়ে আসিফ যোগ দেন সেলিসে। এক বছর সাত মাস সেলিসে কাজ করার পর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আসিফ পাড়ি জমান সুইডেনে। যোগদান করেন এডফেনিক্স এবিতে। সেখান থেকে পরবর্তীতে যোগদান করেন ন্যাসডাকে। ন্যাসডাকে যোগদানের পরপরই মাইক্রোসফট থেকে কল পান আসিফ। চলতি বছরের ১ মার্চ মাইক্রোসফটের একজন ডেভেলপার আসিফকে কল দিয়ে জানান তারা আসিফের একটি সাক্ষাৎকার নিতে চান। অতঃপর ২১ মার্চ কোপেনহেগেনে আসিফের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। সেখানে আসিফের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আরও তিনজন প্রার্থী।
ওই সাক্ষাৎকারে আসিফকে বেশ কয়েকটি প্রবলেম সলভিং করতে দেওয়া হয়। একটা বাদে সব কয়টি প্রবলেমই সলভ করে বিচারকদের নজর কাড়েন আসিফ। এরপর ২৩ মার্চ মাইক্রোসফট থেকে তাকে চাকরির ব্যাপারে নিশ্চিত করা হয়। আসিফ জানান, সফলতার জন্য সিজিপিএ কোন গুরুত্ব বহন করে না। দক্ষতাটাই আসল। এটাই সফলতার মূলমন্ত্র। মাইক্রোসফটে চাকরির সময় পুরো সাক্ষাৎকারে কেউই তাকে তার সিজিপিএ কত, তা জিজ্ঞাসা করেনি। তারা তার দক্ষতা ও সক্ষমতা যাচাই করেছে। আসিফ মনে করেন এটাই হওয়া উচিৎ। তাই শুধু পড়াশোনার মাঝেই নিজেকে সীমাবদ্ধ করে রাখা যাবে না। পড়াশোনার পাশাপাশি পছন্দের ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা অর্জনের দিকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
আসিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সমানুপাতিক ও অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড সায়েন্স সোসাইটি অব রুয়েট। এছাড়া রুয়েট অ্যানালিটিক্যাল প্রোগ্রামিং ল্যাব প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
মাইক্রোসফটের মতো বড় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার পরেও স্বপ্ন দেখা থামাতে চান না আসিফ। তিনি মনে করেন স্বপ্নের কোনো শেষ থাকতে নেই। উদ্যোগী হওয়ার ইচ্ছা আছে আসিফের। পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখেন একজন ভালো নেতা হওয়ার। বাংলাদেশ ও বিশ্বের উন্নয়নে কাজ করবার জন্য বদ্ধপরিকর তিনি। তরুণ প্রজন্মকে নিয়েই স্বপ্ন দেখেন আসিফ।