স্বাস্থ্য কণিকা: ডেঙ্গু জ্বর যা ব্রেকবোন ফিভার নামেও পরিচিত, একটি সংক্রামক ট্রপিক্যাল ডিজিজ যা ডেঙ্গু ভাইরাস-এর কারণে হয়। সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। তবে জ্বর হলেই যে ডেঙ্গু হবে তা কিন্তু নয়। তবে জ্বরের প্রকোপ আপনার কাছে বেশি মনে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রাথমিক পরিচর্চা হিসেবে দ্রুত জ্বর কমানো জরুরি। জ্বর কমানোর জন্য মাথায় পানি দিতে হবে এবং ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর বারবার মুছে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কোনো অবস্থাতেই রোগীকে এসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল ও স্বাভাবিক খাবার খেতে দিতে হবে, বিশেষ করে ফলের রস ও স্যালাইন খেতে দিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর কী? ডেঙ্গু জ্বর হল ভাইরাসজনিত এক ধরনের তীব্র জ্বর। এ জ্বরের বাহক এডিস মশা। এডিস মশা ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে থাকে। জীবাণু বহনকারী এডিস মশা কাউকে কামড়ালেই ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। এ বছর রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। যার সংখ্যা ৫২৬ জন। গত ১০ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আসুন জেনে নেই ডেঙ্গু জ্বরের ৫ লক্ষণ: উচ্চমাত্রায় জ্বর ডেঙ্গু হলে আপনার সর্বোচ্চ ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর উঠতে পারে। আর এ জ্বরটি থাকবে চার থেকে সাতদিন পর্যন্ত। যদি আপনার জ্বর হয়ে থাকে এবং চারদিনের বেশি হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়িই ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
প্রচণ্ড মাথা ব্যথা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্রচণ্ড মাথা ব্যথার সাথে সাথে চোখের ভেতরের দিকে ব্যথা করে। মাথাব্যথা ডেঙ্গু রোগের অন্যতম পূর্বলক্ষণ।
শরীর ব্যথা হাড় ভাঙলে যেরকম তীব্র ব্যথার অনুভূতি হয় মানুষের, ডেঙ্গু হলেও ঠিক এইধরনের হাড়ভাঙার মতো ব্যথা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে শরীরের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা হয়, এর পাশাপাশি ব্যথা হয় পেশীতেও। এমনকি ডেঙ্গু সেরে গেলেও এই ব্যথাগুলো অনেকদিন শরীরে থাকে।
র্যাশ জ্বর হওয়ার এক থেকে দুইদিনের সময় সারা শরীরে লালচে র্যাশ দেখা যায়। যাকে বলা হয় স্কিন র্যাশ, অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো। এসময় আক্রান্তের চোখ হলদেটে এবং ত্বক বেশ শুষ্ক দেখায়।
রক্তকণিকা ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকলেই খুব তাড়াতাড়ি করে নেবেন প্লেটলেট টেস্ট। এসময় প্লেটলেট কিংবা রক্তকণিকার পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। প্লেটলেট কাউন্ট যদি ২০ হাজার এর নিচে হয় তাহলে রোগীর রক্তজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।
বমি বমি ভাব ডেঙ্গু হলে আক্রান্তের বমি বমি ভাব হয়, মাঝে মাঝে এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়।
ডেঙ্গুজ্বর একধরনের ভাইরাস থেকে হয়। এর অপর নাম ‘ব্রেকবোন ফিভার’। কারণ ডেঙ্গুজ্বরে প্রচুন্ড শরীর ব্যথা হয় যা হাড় ভাঙ্গা ব্যথার মত তীব্র। আমাদের দেশে জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে এর প্রাদুর্ভাব বেশী হয়। এডিস জাতীয় মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়। ডেঙ্গু ভাইরাস কয়েক প্রকারের। একধরণের ভাইরাস দিয়ে সংক্রমণ হলে সে ভাইরাস দিয়ে আর ভবিষ্যতে ডেঙ্গু হবে না। তবে তার যদি অন্য প্রকার ভাইরাস দিয়ে পরবর্তীতে ডেঙ্গুজ্বর হয় তা খুব মারাত্মক হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে, রাজধানীতে গত আট মাসে ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছে সাতজন, যাদের সবাই নারী ও শিশু। ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে বাসা বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা নিধনের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে নগর কর্তৃপক্ষ প্রচারণার কথা জানালেও, তা খুব একটা দৃশ্যমান নয় বলে জানায় নগরবাসী।
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাসজনিত রোগ। মশার কামড়ের মাধ্যমে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে অ্যাডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু ভাইরাস রক্তের সঙ্গে মশার দেহে চলে যায়। মশার শরীরে এ ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে। ৮ থেকে ১০ দিন পর ওই মশা অন্য কাউকে কামড়ালে তার শরীরে ভাইরাস ঢোকে এবং জ্বরে আক্রান্ত হন।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ অন্য ভাইরাস জ্বরের মতোই। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জ্বরে (১০৩-১০৪ ডিগ্রি) আক্রান্ত হন। এর সঙ্গে থাকে মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, চোখের নিচে ব্যথা (চোখ নড়ালে ব্যথা অনুভূত হয়)। শরীরে বা জয়েন্টে বেশি ব্যথা হয় বলে এ জ্বরের অন্য নাম ব্যাকবোন ফিভার। জ্বরের সঙ্গে শরীরে র্যাশ বা লালচে ভাব দেখা দেয়। সাধারণত জ্বরের দ্বিতীয় দিন থেকে ত্বক লালচে ভাব ধারণ করে এবং জ্বর ২ থেকে ৭ দিন পর কমে যায়। জ্বর কমে যাওয়া মানেই রোগমুক্তি নয়, বরং তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। জ্বর কমার ২-৩ দিন পরের সময় বেশি মারাত্মক। এ সময় জটিলতা দেখা দেয়।
রক্তে অণুচক্রিকা কমে গেলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ সময় বেশি সচেতন থাকতে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার বমি বা রক্তবমি করতে পারে, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে, নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে, চোখে রক্তজমাট বাঁধতে পারে। এ ছাড়া শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রচ- পেটব্যথা, আলকাতরার মতো কালো দুর্গন্ধযুক্ত মল হতে পারে, মল ও প্রসাবের সঙ্গে রক্ত পড়তে পারে। একেই বলে ডেঙ্গু হেমোরজিক ফিভার।
এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হলে আক্রান্ত ব্যক্তি শকে চলে যেতে পারেন।