অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার এক নাগরিককে দায়ী করে তার পরিচয় প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পার্ক জিন হিয়ক নামের ওই কম্পিউটার প্রোগ্রামারকে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সনি করপোরেশন এবং ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে ‘ওয়ানাক্রাই র্যানসমওয়্যার’ সাইবার হামলার ঘটনায় দায়ী করেছে মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পার্কের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে আইনজীবী ট্র্যাসি উইলকিনসন এক সংবাদ সম্মেলনে পার্ক জিন হিয়কের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের কথা জানান। উত্তর কোরিয়া সরকার হ্যাকারদের সহযোগিতা করছে বলেও দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার একটি গ্রুপ বিশ্বের বিভ্ন্নি ব্যাংকে ২০১৫ সাল থেকে সাইবার হামলা করে আসছে এবং এখন পর্যন্ত এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি চুরি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন (আট কোটি ১০ লাখ) মার্কিন ডলার চুরির ঘটনা একটি। রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোগ নিলেও নিজেদের এই নাগরিককে উত্তর কোরিয়া বিচারের জন্য ওয়াশিংটনের হাতে তুলে দেবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। দুই দেশের মধ্যে অপরাধী হস্তান্তরের কোনো চুক্তিও নেই। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, পার্ক জিন হিয়ক ‘লাজারাস গ্রুপ’ নামে একটি হ্যাকার দলের সদস্য। এদের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা করা। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে পার্ক জিন হিয়ক এবং তিনি যে চীনা কোম্পানিতে কাজ করেন, সেই চোসান এক্সপোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
তবে উত্তর কোরিয়ায় বসবাসরত এই সাইবার হামলাকারীর বিচারের উদ্যোগ মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয় নিলেও, দুই দেশের মধ্যে আসামি বা বন্দি হস্তান্তরের কোনো চুক্তি না থাকায় তা সফল হবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ভুয়া সুইফট বার্তা পাঠিয়ে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো দুই কোটি ডলার লোপাট আটকানো গেলেও ফিলিপাইনে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়ে যায়। তার মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফিলিপাইন সরকার উদ্ধার করে ফেরত দিলেও বাকি অর্থের হদিস মেলেনি।
২০১৭ সালের জুন জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে তিন কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ ধারাসহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৪ ধারায় ও ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।