আন্তর্জাতিক

একসঙ্গে কাজ করবে বিজিবি-বিএসএফ

By daily satkhira

September 07, 2018

অনলাইন ডেস্ক: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ে ৪৭তম সীমান্ত সম্মেলন আজ জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাশন (জে আর ডি) স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে শুরু হওয়া সীমান্ত সম্মেলন শেষে আজ সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীদের অনুসন্ধান ও মানবপাচার রোধসহ আটটি বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছে একসঙ্গে কাজ করার যৌথ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

ঐক্যমতে পৌঁছানো বিষয়গুলো হল সীমান্ত হত্যা বন্ধে পদক্ষেপ, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর অনুসন্ধান, সীমান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, মানবপাচার রোধ, জাল মুদ্রা পাচার রোধ, আলোচনার মাধ্যমে সীমান্তে উন্নয়ন, ক্রাইম ফ্রি জোন ঘোষণা, সুসম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা।

শুক্রবার দিল্লির লোধি রোডে অবস্থিত বিএসএফ’এর সদর দফতর দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ-বিজিবি)-এর ডিজি পর্যায়ের ৪৭ তম বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই বাহিনীর ডিজি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিজিবি’র ডিজি মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতের মাটিতে বড় ধরনের কোন অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। আপনারা জানেন এই মুহূর্তে বাংলাদেশে উন্নয়নের জোয়ার চলছে, আমাদের জিডিপি এখন ৭.১ শতাংশ এবং দেশের মানুষ প্রকৃত অর্থেই খুব সুন্দর জীবন উপভোগ করছেন। তাই সংঘবদ্ধভাবে বা বিশাল সংখ্যায় দেশত্যাগ করার কোন ঘটনা নেই।’ বিজিবি ডিজি’র অভিমত যে সমস্ত বাংলাদেশি নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসেন, তারা মূলত সাংস্কৃতিক বন্ধন ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারণেই সীমান্ত অতিক্রম করেন। তিনি জানান ‘অনেক বাংলাদেশি নাগরিকেরই আত্মীয়-স্বজনরা এপারে (ভারত) থাকেন। সেই সম্পর্কের খাতিরেই তারা এপারে আসেন। তাই প্রধান এই কারণেই অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। কিন্তু বন্ধু ও পরিবারের সাথে দেখা করে তারা আবার ফিরেও আসেন এবং সেই সংখ্যটাও নগন্য।’ অন্যদিকে বিএসএফ ডিজি কে. কে. শর্মা বলেন, ‘ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে চলতি বছরে ১৫২২ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে আটক করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৬৬ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, বাকিরা পাচার হয়ে আসা। নির্যাতিত ও অপরাধীদের মধ্যে পার্থক্য বোঝার জন্য আমাদের সেনাবাহিনীকে আরও সংবেদনশীল করা হয়েছে। সীমান্ত বরাবর গবাদি পশু পাচারের ঘটনাও কমেছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন দুই দেশের ডিজি। তাদের অভিমত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে গবাদি পশু পাচারের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে-এর প্রথম কারণ সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি, দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে গবাদি পশুর লালন-পালনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া। অন্যদিকে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুর হার কমেছে বলে জানান বিজিবি’র ডিজি। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশ যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এবং যারা পাচারের সাথে জড়িত থাকে তাদের সাথেই এই জিনিস বেশি হয়ে থাকে। এই বিষয়টি অনুধাবন করে দুই বাহিনী একযোগে কাজ করছে। আমরা এই সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূণ্যে নামিয়ে আনতে চাই। সীমান্তে যাতে গবাদি পশু পাচারের ঘটনা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি। তাছাড়া পাচারের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ছে কিন্তু পাচার কম হওয়ার ফলে দেশের মানুষও স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বিএসএফ ডিজিও আরো বলেন, ‘আমি খুবই খুশি যে চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত সীমান্তে একটিও বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা নেই।’ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে কে. কে. শর্মা জানান, ‘আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত রয়েছি। মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যায় রোহিঙ্গা নাগরিক আশ্রয় নিয়েছে এবং সেখান থেকে ছোট ছোট দলে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা তাদের সেই প্রচেষ্টাকে সফল হতে দেইনি। তাই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে বড় সংখ্যায় কোন রোহিঙ্গা প্রবেশের ঘটনা নেই। দেশে এখনও পর্যন্ত যে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে, তারাও কিছু কিছু জায়গায় যথেষ্ট চাপে রয়েছে এবং সেই কারণেই তারা এখন পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিচ্ছেন। কারণ এই রাজ্যটিতে তারা কিছুটা স্বস্তি অনুভব করার কারণেই দেশের অন্য প্রান্ত থেকে সেখানে আসছে এবং সেই রোহিঙ্গাদের জন্য শিবিরও খোলা হয়েছে।’ এখনও পর্যন্ত রাজ্যটিতে ৭০ টি পরিবারের খোঁজ মিলেছে বলেও জানান তিনি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সতর্ক রয়েছে বিজিবিও। বিজিবি প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে প্রচুর রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন এবং বিজিবিসহ অন্য নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি সবসময় তাদের ওপর নজর রাখছে এবং একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও দেশের অন্য প্রান্তে তারা চলে যাচ্ছেন।’ ভারত সফরকালে বিজিবি ডিজি সফিনুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং’এর সাথেও সাক্ষাত করেন।