জাতীয়

জরুরি ভিত্তিতে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হবে

By daily satkhira

September 10, 2018

দেশের খবর: প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে এনে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে এ সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে বলা হয়, প্রতিটি ব্যাংকই বছরে দেড়শ’ থেকে আড়াইশ’ কোটি টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছে। অন্যদিকে উচ্চ সুদের কশাঘাতে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ৮৯ শতাংশ পোশাক শিল্প। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে তথ্য। পহেলা আগস্ট অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যাংকের উচ্চ ঋণের সুদহার, ক্রেডিট কার্ডের উচ্চ সুদ এবং রিজার্ভ চুরির অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার বজায় থাকায় মৎস্য ও পোলট্রিসহ অনেক ফার্ম পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ঋণে জর্জরিত হয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ৮৯ শতাংশ পোশাক শিল্প। তিনি জানান, উদ্বেগজনক এ তথ্যগুলো কমিটির পরবর্তী সভায় অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তুলে ধরা হবে।

বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সদস্য মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ব্যাংকের অতিরিক্ত সুদহারের কারণে গার্মেন্টস শিল্প-কারখানা বর্তমানে ঋণে জর্জরিত হয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, নির্বাচনের বছরে সুদহার কমাতে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন সুবিধা দেয়া হলেও কাজের কাজ না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মে মাসে সিঙ্গেল ডিজিটের দিকনির্দেশনা দেন। এখন সে নির্দেশনাও উপেক্ষিত। অনেকে মনে করেন, এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র কাজ করছে। যে কারণে মহলবিশেষ এখানে বিনিয়োগের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে সবকিছুর লাগাম টেনে ধরছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর কথা বলে ব্যাংক মালিকরা শুধু সরকারের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তারা সেটি বাস্তবায়ন করবেন না। বরং বেশি চাপাচাপি করলে কৌশলে ঋণ দেয়া কমিয়ে দেয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়। এখন সেটিই ঘটছে। আর এ পথ বেছে নিয়ে প্রকারান্তরে তারা প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। এটাকে প্রতারণা বললেও ভুল বলা হবে না। যে কারণে এটি মনিটরিং করা হচ্ছে।

ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি জুলাই মাস থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেয়। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংক তা কার্যকর করেনি। এরপর তা আবার ৯ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা বলা হয়। গণমাধ্যমের সামনে এ বিষয়ে খোদ অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেন। সেটিও বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে ব্যাংকের দায়িত্বশীল কেউ মুখ খুলছেন না। কেউ কেউ পরিচয় গোপন রেখে বলার চেষ্টা করছেন, আপাতত তারা আর নতুন করে ঋণ দিচ্ছে না। খেলাপি ঋণ আদায়ে বেশি মনোযোগী হচ্ছেন।

এদিকে যেসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান স্বতঃপ্রণোদিত বা আদিষ্ট হয়ে আমানতে ৬% এবং ঋণে ৯% সুদহার ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউ কেউ নিজেদের ঘোষণা নিজেরাই লঙ্ঘন করেছেন। একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সে সময় বলেছিলেন, ‘আজকের এ ঘোষণা যেন কথার কথা না হয়, অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।’ অথচ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকটি এক বছর মেয়াদি স্থায়ী আমানত (এফডিআর) সংগ্রহ করছে ৯ শতাংশ সুদে আর ৬ মাস মেয়াদি এফডিআর সংগ্রহ করছে সাড়ে ৮ শতাংশ সুদে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মেহেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন বৈঠকে বলেন, ব্যাংকিং কার্যক্রম এবং পণ্যের এলসি খোলায় কালক্ষেপণের কারণে বছরে তিনবার অর্থ রোল করতে হয়। এতে আমদানিকৃত পণ্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অধিক মূল্যে বিক্রি করতে হয়। এতে আমদানিকারকদের আয় কমছে। পাশাপাশি সিঙ্গাপুরে টিটির মাধ্যমে প্রেরণের ফলে ২৫ থেকে ২৬ বার অর্থ রোল করে। এতে অধিক পরিমাণ আয়ের সুযোগ হচ্ছে। তিনি ব্যাংকিং এবং এলসি সহজীকরণ মাধ্যমে পণ্য আমদানি কার্যক্রম ব্যয় কমিয়ে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ জানান।

বৈঠকে ব্যাংকের তারল্য সংকট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকায় অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে সমাধান করা হয়েছে। বর্তমান ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট নেই। কারণ বৈদেশিক মুদ্রা ২ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার বিক্রির বিপরীতে দেশে টাকা চলে আসছে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়ায় তারল্য সংকট কমেছে।