জাতীয়

সংসদ নির্বাচনের আগে ডাকসুর ভোট সম্ভব না : ঢাবি ছাত্রলীগ

By daily satkhira

September 16, 2018

দেশের খবর: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভোট গ্রহণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রলীগ। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের পর যত দ্রুত সম্ভব ডাকসুর ভোটগ্রহণ করা যেতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো বলছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ডাকসুর ভোটগ্রহণ করতে হবে। রোববার এই নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। উপাচার্যের কার্যালয় সংলগ্ন আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ হল প্রাধ্যক্ষরা। উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। অন্যদিকে ছাত্রদলের প্রতিনিধি দলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা দিয়ে আলোচনা সভায় নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন সহকারী প্রক্টর। ছাত্রদলের পক্ষে আলেচনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী। এ ছাড়া বাম সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নেতারাও ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা নির্দিষ্ট কোনো টাইমফ্রেম দেইনি। তিনি বলেন, এখানে অনেক সংগঠন টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়েছে। আমরা জানি না, তাদের সে ধরনের রাইটস আছে কি না। তারা বলে দিচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে ডাকসু নির্বাচন করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। আমার মনে হয়, তাদের আরও সময় দেয়া উচিত। একটা জিনিস ভালোভাবে করতে প্রস্তুতি প্রয়োজন। সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, ভোটার তালিকা করতে হবে, আরও আনুষাঙ্গিক কাজ রয়েছে। আমার মনে হয়, তাদেরও সময় দেয়া উচিত। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এটা একটা বৃহৎ ইস্যু। নির্বাচনের আগে বা মাঝখানে হলে আমার মনে হয় না ভালো হবে। আমার মনে হয়, নির্বাচনের পরে যত দ্রুত সম্ভব করা যায়। আমরা কোনো টাইমফ্রেম বেধে দিচ্ছি না। আমার মনে হয়, নির্বাচনের আগে পসিবল না। যদি হয়, তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাবো। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এই সভায় জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আমি এর জন্য তাদের ধিক্কার জানাই। আমরা এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছি। যারা ইতিহাস বিকৃতি করে, তারা মস্তিষ্ক বিকৃতির বাইরে নয়। এদিকে আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ডাকসু নির্বাচনের জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ঢাবি ভিসি ড. মো. আক্তারুজ্জামানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে রিট করা হয়েছে। গত বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এই রিট আবেদন করেন। রিটের বাকি বিবাদীরা হলেন- প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানি ও ট্রেজারার ড. কামাল উদ্দিন। পরে মনজিল মোরসেদ জানান, রোববার (আজ) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হতে পারে। এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ডাকসু নির্বাচনের জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ভিসি ড. মো. আক্তারুজ্জামানসহ তিন জনকে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশে বলা হয়, আগামী ৭ দিনের মধ্যে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা না নিলে তাদের বিরুদ্ধে হাইকার্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে। এর আগে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ৬ মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষকে এ আদেশ বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়। এ ছাড়া ডাকসু নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন আদালত। রুলের শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ডাকসু নির্বাচনে পদক্ষেপ নিতে ৩১ শিক্ষার্থীর পক্ষে ২০১২ সালের ১১ মার্চ ঢাবি ভিসি, প্রক্টর ও ট্রেজারারকে লিগ্যাল নোটিশ দেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। ঢাবি কর্তৃপক্ষ ওই নোটিশের কোনো জবাব না দেয়ায় ওই বছরই ২৫ শিক্ষার্থীর পক্ষে রিট আবেদন করা হয়।

এরপর ওই বছরের ৮ এপ্রিল হাইকোর্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করার ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। বিবাদী ছিলেন শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর। রিটকারীরা হলেন- ঢাবির তৎকালীন ছাত্র আলী আসিফ সাওন, নাদিম মাহমুদ, এহসানুল হাসান, ফাহিম হোসেন মজনু, আলম ভূঁইয়া, আশিকুর রহমান, রিয়াদুল ইসলাম, শোয়েব রানা, রিয়াজউদ্দৌলা প্রধান, মো. রুহুল আমিন, সৌমিত্র দাস শুভ্র, আবদুল্লাহ আল হোসেন, আবদুর রহিম, ফিরদুল ইসলাম, এনামুল হক, সাইদুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, রিয়াজুল করিম, রাসেল কবির, আবু মুসা, নাসির উদ্দিন, হুমায়ূন কবির, সবিত ইবনে আনিস, আমির খসরু এবং রায়হান রাজু।

ওই রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯৯৮ সালের ২৭ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ডাকসু নির্বাচনের পর এর সময়সীমা হবে এক বছর। পরে ৩ মাস নির্বাচন না হলে বিদ্যমান কমিটি কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। এ সিদ্ধান্তের পর ডাকসু ভেঙে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য ১৯৯০ সালের ৬ জুলাই ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর দীর্ঘ ২৮ বছরে আর কোনো নির্বাচন হয়নি।