খেলার খবর: এটা যে ওয়ানডে ম্যাচ, বাংলাদেশ যেন সেটি ভুলেই গিয়েছিল! প্রথম বাউন্ডারি পেতে তাদের লেগে গেল ১৪.২ ওভার। আফগানিস্তানের বোলাররা এমনভাবে চেপে ধরলেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রধান কাজ হয়ে গেল দাঁতে দাঁত চেপে কোনোভাবে উইকেটে পড়ে থাকা। সেটিও তাঁরা পারলেন কোথায়? আফগান বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দাঁড়াতেই পারেননি, মাশরাফিরা গুটিয়ে গেলেন ১১৯ রানে। ১৩৬ রানের হারে বাংলাদেশ একটাই বার্তা পেল, মরুর দেশে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলতে তাদের পাড়ি দিতে হবে দুর্গম গিরি কান্তার মরু! আবুধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের দেওয়া ২৫৬ রানের লক্ষ্যটা বাংলাদেশের কাছে যে কঠিন হয়ে যাবে সেটি অনুমান করা যাচ্ছিল ইনিংস বিরতিতেই। কিন্তু মাশরাফিরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেভাবে খেলেছেন, এই সাফল্য স্মৃতিপটে থাকতে কেউ নিশ্চয়ই আশা করেনি আফগানদের কাছে এভাবে তাঁরা অসহায় আত্মসমাপর্ণ করবে! রশিদ খান-মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের কাছে কত বড় ত্রাস হয়ে উঠেছেন, সেটি গত জুনে দেরাদুনে দেখা গেছে। কিন্তু ওই সিরিজটা ছিল টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। ওয়াডেতে আফগানরা হুমকি হবে না, এশিয়া কাপের আগে এমন আশা দেখিয়েছেন স্বয়ং বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরাই। কোথায় কী! রশিদ-মুজিবরা আজও যেভাবে তাঁদের নিয়ে খেললেন, এটি পরিষ্কার, শুধু টি-টোয়েন্টি নয় ওয়ানডেতেও আফগানরা নিয়মিত ছড়ি ঘোরাতে শিখে গেছে! পাঁজরের চোটে মুশফিকুর রহিম বিশ্রামে। হাতের চোট নিয়ে তামিম ইকবাল দেশে ফিরে এসেছেন। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট সুযোগ দিয়েছিল দুই তরুণ ব্যাটসম্যানকে। লিটন দাসের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হলো নাজমুল হোসেনকে। মুজিবকে পাত্তাই দেব না—এমন ভাবনায় নাজমুল (৭) নিজের সর্বনাশ তো করলেনই; দলেরও। তাতে উইকেটপতনের দরজাটা খুলে গেল। পরের ওভারে আফতাব আলমের ইনসুইংয়ে এলবিডব্লু লিটন দাস। দলের ৩৯ ও ৪৩ রানে মুমিনুল হক আর মোহাম্মদ মিঠুন আউট ব্যাটের কানায় বল লাগিয়ে। মুমিনুল ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে, আর মিঠুনের ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল তো স্টাম্পই ভেঙে দিল। দেখতে দেখতে ৪৩ রানে নেই ৪ উইকেট। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ-সাকিব আল হাসান একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ৩৬ রানের একটা মাঝারি জুটি গড়লেন। কিন্তু রশিদ খান যেন তাঁর জন্মদিনে ‘উপহার’ পেতে মরিয়া! সাকিব (৩২) ও মাহমুদউল্লাহকে (২৭) শিকার করে পেয়েও গেলেন উপহার! ৪০ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ১১৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া। এই হারে বাংলাদেশের ছন্নছাড়া ব্যাটিংকে দায়ী করার আগে কাঠগড়ায় তুলতে হবে শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের বোলিং। বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল আফগানিস্তানকে ২০০ রানের নিচে আটকে ফেলার। ৪০.৫ ওভারে ১৬০ রানে ৭ উইকেট ফেলে দেওয়ার পর সেটি নিশ্চয়ই কঠিন ছিল না। কিন্তু তা হতে দেননি আফগানিস্তানের লেজের দুই ব্যাটসম্যান গুলবাদিন ও রশিদ খান। দুজনের অবিচ্ছিন্ন অষ্টম উইকেটে ৫৬ বলে ৯৫ রানের জুটি আফগানিস্তানকে সহায়তা করেছে ভালো স্কোর পেতে। অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ। শেষ ১০ ওভারে আফগানরা তুলেছে ৯৭ রান। ৪০ ওভার পর্যন্ত দারুণ বোলিং করা বাংলাদেশ শেষ দিকে একেবারে ছন্নছড়া! শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের বোলাররা যত ম্রিয়মান, দুই আফগান ব্যাটসম্যান রশিদ খান-গুলবাদিন ততই উজ্জ্বল। ৪০ ওভার শেষেও যে আফগানিস্তানের রানরেট ছিল ৩.৯৫ । ৫০ ওভার শেষেই সেটি দাঁড়িয়েছে ৫.১। জন্মদিন রাঙাবেন বলে রশিদ সমান উজ্জ্বল ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই। নয়ে নেমে ৩২ বলে অপরাজিত ৫৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে আফগানিস্তানকে এনে দিয়েছেন ৭ উইকেটে ২৫৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। রশিদকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন (৩৮ বলে) ৪২ রানে অপরাজিত গুলবাদিন নায়েব। রশিদ-গুলবাদিন জ্বলে ওঠার আগে আফগানিস্তানকে ৪১ ওভার পর্যন্ত আটকে রাখার আসল নায়ক সাকিব আল হাসান। আজকের আগে সর্বশেষ ছয় ওয়ানডেতে মাত্র ৩ উইকেট। ওয়ানডেতে নিজের বোলিং নিয়ে সম্ভবত নিজেও অখুশি ছিলেন। ৪২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিব আজ সেই খরা ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠলেন। মজার ব্যাপার হলো, ওয়ানডেতে সাকিব তাঁর সর্বশেষ ৪ উইকেট পেয়েছিলেন এই আফগানিস্তানের বিপক্ষে এবং ২০১৬ সালের এই সেপ্টেম্বর মাসেই। মিরপুরের সেই ম্যাচে ২ উইকেটে জিতেছিল আফগানিস্তান। আজও বাংলাদেশ হারল। পার্থক্যটা হচ্ছে, আজকের হারটা ১৩৬ রানের!