অনলাইন ডেস্ক: আসাম সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিশেষ নজরদারি চালাতে তারা চারটি বিশেষ পুলিশ ব্যাটালিয়ন তৈরি করবে। রাজ্যের পুলিশ মহানির্দেশকসহ স্বরাষ্ট্র দপ্তর ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল নিজেই।
রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক মুকেশ সহায় বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, “নতুনভাবে তৈরি হওয়া এই চারটি ব্যাটালিয়ন সীমান্তে ‘সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্স’, অর্থাৎ নিরাপত্তার দ্বিতীয় বলয় তৈরি করবে।”
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের একেবারে সামনে বিএসএফ যেমন কাজ করছে, তেমনই করবে, কিন্তু আসাম পুলিশের এই চারটি ব্যাটালিয়ন বিএস এফের পেছনে থাকবে। তারা সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে নজরদারি চালাবে, টহলও দেবে।
একেকটি ব্যাটালিয়নে গড়ে এক হাজার করে পুলিশ কর্মী থাকেন, সেই হিসাবে মোট প্রায় ৪ হাজার পুলিশ কর্মীকে সীমান্তে নজরদারির কাজে লাগানো হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে নতুন ভাবে তৈরি হওয়া এই ব্যাটালিয়নগুলিকে ধুবরি, দক্ষিণ শালমারা-মানকাছার আর করিমগঞ্জের মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে কাজে লাগানো হবে।
পুলিশ মহানির্দেশক সহায় বলছিলেন, “সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারী বা চোরাচালানকারীদের আটকানো যেমন এই ব্যাটালিয়নগুলির অন্যতম দায়িত্ব হবে, তেমনই তারা সীমান্তের ওপার থেকে মৌলবাদে অনুপ্রাণিত ব্যক্তিদের আসামে প্রবেশও আটকাবে।”
সহায়কে নিয়মিত চর এলাকাগুলি পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর ১৪টি সীমান্ত চৌকির আধুনিকীকরণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে।
এবছরের মাঝামাঝি আসাম বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল সীমান্তে পুলিশী নজরদারি বাড়ানোর ব্যাপারে।
বিএসএফের সঙ্গে একযোগে কাজ করার জন্য আসাম পুলিশের সীমান্ত বিভাগকে আরও শক্তিশালী করার যে প্রতিশ্রুতি বিজেপি দিয়েছিল, সেটাই এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে পূর্ণ করা হল বলে মনে করা হচ্ছে।
আসাম আর বাংলাদেশের মধ্যে অনেকটা এলাকাই নদী সীমান্ত, আর সেখানে বিএসএফের ভাসমান প্রহরা আর সীমান্ত চৌকি থাকলেও সেখান দিয়ে চোরা চালান, অনুপ্রবেশ আর মৌলবাদে অনুপ্রাণিত ব্যক্তিরা আসামে প্রবেশ করে বলে বিজেপি সহ আসামের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল নিয়মিত অভিযোগ করে থাকে।
বাংলাদেশ থেকে আসলে কত অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তা নিয়ে বহু মত রয়েছে আসামে।
প্রথমে লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী আসামে ঢুকে পড়েছেন বলে প্রচার করা হয়েছিল এক সময়ে। মূলত বাংলাভাষী নাম, বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমান নাম দেখলেই তাদের ভোটার তালিকায় সন্দেহজনক ভোটার বলে চিহ্নিত করা হত আর তাদের বিদেশী ট্রাইবুনালে পাঠানো হত।
বিদেশী ট্রাইবুনালগুলোতে বিচারের পরে ‘ডাউটফুল ভোটার’-এর সেই তালিকা দেড় দশক পরে মাত্রই কয়েক হাজারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ বাকিরা নিজের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে পেরেছেন ট্রাইবুনালের কাছে।
অন্যদিকে আসাম থেকে জেএমবি-র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে গত দেড়-দুবছরে গ্রেপ্তারও হয়েছেন অনেকে।
এনআইএ বা ন্যাশানাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সি এই সব ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের বিস্ফোরণ ঘটনায় যুক্ত থাকার সন্দেহে।