নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রামের আনোয়ারা খাতুন একজন দিনমজুর। গত শুক্রবার তিনি পার্শ্ববর্তী এক ভূমি মালিকের জমিতে উচ্ছে তুলে দুপুর একটার দিকে বাড়িতে আসেন। বসতঘরের দরজা খুলে মেয়ে আফরোজাকে আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঝুলতে দেখেন। পরে আফরোজা মারা গেছে মর্মে নিশ্চিত হন আনোয়ারা। এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে সারা সোনাবাড়িয়াতে ঘুরপাক খাচ্ছে। আত্মহত্যা করলে স্বাভাবিক নিয়মে ঘরের ভিতরের দিক থেকে দরজা লাগানোর কথা। সেক্ষেত্রে ফেসবুকের ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ি সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মনিরুল ইসলাম ও গ্রাম পুলিশ ইসমাইলসহ কয়েকজন মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের নামে ফেঁসে যেতে পারেন। সেকারণে চেয়ারম্যানের পেটুয়া বাহিনীর লোকজন আফরোজাকে কৌশলে হত্যার পর আত্মহত্যার প্রচার দিতে লাশের গলায় ওড়না বেঁধে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়াটা অসম্ভব নয়। আফরোজা মারা যাওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে আনোয়ারা খাতুনের বক্তব্য ও মৃতের ভাই ইব্রাহীম খলিলের এজাহারে উল্লেখ করা ‘মা কাজ থেকে ফিরে ঘরের দরজার ছিকল খুলে আফরোজাকে আড়ায় ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান’ এমন কথাগুলো এ মৃত্যুরধরণ নিয়ে সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছে। বুধবার সকালে সাতক্ষীরার সোনাবাড়িয়া গ্রামে গেলে মুদি ব্যবসায়ি সালাম, চা বিক্রেতা আব্দুস সোবহান, তরিকুল ইসলাম আনোয়ারুল ইসলাম ছাড়াও মানবাধিকার কর্মী সামছুর রহমান, আবু জাহিদসহ অনেকেই এ ধরণের মন্তব্য করেন। তারা জানান, যিনি গত ইউপি নির্বাচনে নিজের জয় নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও তার পৃষ্টপোষকদের এলাকাছাড়া করেছিলেন, যিনি বিরোধীপক্ষের ইউপি সদস্য হিসেবে এ ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ারুল ইসলামকে তোয়াক্কাই করেন না সেই চেয়ারম্যান মনিরুলের পক্ষে তার বাহিনী দিয়ে একটি হত্যাকা- সংগঠিত করা, তার পর দরিদ্র নির্মাণ শ্রমিক বাদিকে লোক দিয়ে তুলে নিয়ে এফিডেফিডে সাক্ষর করিয়ে নিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় তুলে জামিন পাওয়ার পথ সুগম করার চেষ্টা অসম্ভব কি? গত রোববার সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মনিরুল ইসলামের পক্ষে নোটারী পাবলিক এটিএম আলী আকবরের কাছে করা এফিডেফিড সম্পর্কে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, এফিডেফিডে চেয়ারম্যান শালিস করেছেন এটা বলা হয়েছে। আবার এজাহারে পুলিশ জোর করে বা না পড়ে সাক্ষর করিয়ে নিয়েছে এমনটিও উল্লেখ নেই। অথচ চেয়ারম্যান নির্দোষ বলা হয়েছে। অর্থাৎ চেয়ারম্যানকে জামিনের সুবিধার পাশাপাশি তার হাত থেকে ও পুলিশের হাত থেকে বাদি ইব্রাহীম খলিলকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার বাদি ইব্রাহীম খলিল কলারোয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে চেয়ারম্যান মনিরুল নির্দোষ হলে তাকে অব্যহতি দেওয়া সম্পর্কিত যে আবেদন করেছেন তা জামিন শুনানিকালে আফরোজার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে। প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে চেয়ারম্যানের ভূমিকাকে। সেক্ষেত্রে জামিনের আগে আফরোজার মৃত্যুর মূল রহস্য উদঘাটনের বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ জানার সুযোগ পেতে পারে। এদিকে সাতক্ষীরার কলারোয়ার সোনাবাড়িয়ার কিশোরী আফরোজা খাতুনের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে সচেতন নাগরিক ঐক্য কমিটি। বিপুল সংখ্যক নারী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। তারা এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুলকে রক্ষার চেষ্টারও প্রতিবাদ জানান। বুধবার সকালে সোনাবাড়িয়া এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক নারী কলারোয়া উপজেলা চত্বরে এসে সমবেত হন। তারা স্লোগান তোলেন ‘আফরোজা মরলো কেনো, চেয়ারম্যান জবাব চাই’। আফরোজাকে অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার ভুয়া প্রচার দিয়ে দড়ি দিয়ে গ্রাম ও বাজার ঘোরানোর পর সালিশের নামে গালিগালাজ করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তৃতা করেন জেলা মহিলা পরিষদ সভানেত্রী আনজু আরা বেগম, লিগ্যাল এইডের তৈয়বা আকতার, পাপিয়া সুলতানা, দিলরুবা খাতুন, ইসমত আরা, সুরাইয়া বেগম, নুপুর আক্তার, নারগিস আকতার প্রমুখ।