নিজস্ব প্রতিবেদক: টাকার অভাবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ মেয়েদের ফুটবলে ওয়াকওভার দিয়ে ফিরে এসেছেন সাতক্ষীরা দল। আর এ জন্য একে অপরকে দায়ী করেছেন সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল এ্যসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান ও টিম লিডার আকবর আলী। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সাতক্ষীরা দলের। কিন্তু তার আগেই সেমিফাইনালে ওয়াকওভার দিয়ে ফিরে আসার বিষয়টি সাতক্ষীরার ক্রীড়ামোদীদের রীতিমত হতাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠরা। জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল এ্যসোসিয়েশন (ডিএফএ)’র সভাপতির নির্দেশে অনূর্ধ্ব-১৪ মেয়েদের ফুটবলে সেমিফাইনালে যাতে না খেলতে হয় সে জন্য দলটি ইচ্ছে করেই গ্রুপ পর্বে হেরে গিয়েছিল খাগড়াছড়ি দলের কাছে। তারপরও তারা সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু খরচের টাকা না থাকার অজুহাতে সাতক্ষীরায় ফিরে আসে। আর এ ফিরে আসা নিয়ে কোচ ও ডিএফএ কর্মকর্তা সম্পূর্ণ ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। ডিএফএ কর্মকর্তারা বলছেন, কোচ আকবর আলী কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের জিম্মি করে বিভিন্ন সময় নানা অনিয়ম করে আসছেন। তারা উল্টো অভিযোগ করে বলছেন, আকবর আলী অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়ে খাগড়াছড়ির নিকট সাতক্ষীরাকে পরাজিত করিয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা মেয়েদের অনূর্ধ-১৪ ফুটবল দলের কোচ হয়েও তিনি গত ২৭ নভেম্বর সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক পর্বের খেলায় পটুয়াখালী জেলার নামে নিজের একাডেমির(সাতক্ষীরার) মেয়েদের সাতক্ষীরার বিপক্ষে মাঠে নামান এবং পটুয়াখালীর পক্ষের অংশগ্রহণ ফি বাবদ বাবদ ১০,০০০টাকা গ্রহণ করেন। প্রকৃতপক্ষে ওইদিন পটুয়াখালী দল সাতক্ষীরাতেই আসেনি! এছাড়াও সাতক্ষীরা জেলা দলের টিম ম্যানেজার পৌর কাউন্সিলর ফারহা দীবা খান সাথী হলেও ঢাকায় যাওয়ার সময় তিনি নিজের স্ত্রীকে টিমের সাথে ম্যানেজার সাজিয়ে নিয়ে যান। এছাড়াও তিনি নিয়মিত শিয়াল-কুমিরের গল্পের মত তার তত্বাবধানে থাকা কিশোরীদের বিভিন্ন জেলায় ইচ্ছে খুশি ক্ষ্যাপ খেলতে পাঠান। এমনকি কোন খেলায় কেউ ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হিসেবে যে প্রাইজমানি পায় তাও তিনি নিয়ে নেন। তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের কোন শেষ নেই। অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের কোচ আকবর আলী জানান, তার প্রতিষ্ঠিত শহরের চালতে বাজার সংলগ্ন জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৩ জন নারী ফুটবলার বর্তমানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তারা জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ সহ বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি তাদের ভরণপোষণসহ তার বাড়িতে থাকার খাওয়ার ব্যবস্থা করে তাদের রেখে দিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠান থেকে সাবিনা, সুরাইয়া, রওশন ও মাছুরা জাতীয় ফুটবলে, পাখি ও দোলা জাতীয় কাবাডিতে, রিক্তা, মুক্তা, আরিফা ও সালমা খোখো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। শুধু তাই নয় ১০০ মিটার স্প্রিট এ বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী খেতাব প্রাপ্ত শিরিন আকতারও তার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আবার তার প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে অনেক নারী বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিও করছেন। তিনি আরো দাবি করেন, জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ টুর্নামেন্টের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিল সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ)। এর মধ্যে ২৫ হাজার টাকা অংশগ্রহণ ফি বাবদ দিয়েছিল ফুটবল ফেডারেশন (ঢাকা) থেকে। বাকি ১৫ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৫ হাজার টাকা দেন সাতক্ষীরা জেলা ডিএফএর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খাঁন। পরে বাকি টাকা চাইলে তিনি টাকা ম্যানেজ করা যাচ্ছে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এবং তাদের খারাপ খেলে হেরে বাড়ি ফিরে আসার পরামর্শ দেন। এতে মনের কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে ১০ ডিসেম্বর ফিরে আসেন কোচ আকবর আলীসহ তার নারী ফুটবলাররা। আর এ কারণে ১২ তারিখের খেলায় সাতক্ষীরার বিপক্ষে ওয়াকওভার পায় ময়মনসিংহ। সামান্য ১০ হাজার টাকার জন্যই যদি জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ মেয়েদের ফুটবলে সাতক্ষীরা দল অংশগ্রহণ করতে না পেরে থাকে তবে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাতক্ষীরার ক্রীড়ামোদীরা। নারী ফুটবলার ফারজানা সুলতানা, সারাবান জহুরা, তামান্না সুলতানা ও পারভিন সুলতানা জানান, আমরা এ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হবো এই মনোবল নিয়েই আমরা খেলা করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের স্যার (কোচার আকবর আলী) আমাদের জানান, আমার কাছে আর কোন খরচের টাকা নাই তাই বাধ্য হয়ে আমাদের সেমিফাইনালে অংশগ্রহণ না করেই চলে যেতে হবে। শুধু মাত্র খরচের টাকার অভাবে আমাদের বাধ্য হয়ে মনের কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে আসতে হয়েছে। এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য আরিফ হাসান প্রিন্স জানান, সামান্য টাকার জন্য আমাদের নারী ফুটবলাররা সেমিফাইনালে না খেলে চলে আসবেন এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। তিনি আরো জানান, সাতক্ষীরা জেলা ডিএফএর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খাঁন তার চেয়ার ঠিক রাখার জন্য একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি করেই চলেছেন। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা ডিএফএর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খাঁন তার বিরদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, টিম লিডার আকবর আলী আমাদেরকে জিম্মি করে অনেক টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় আমরা তা দিতে না পারায় তিনি টিম নিয়ে ঢাকা থেকে ফিরে এসেছেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে কোচ ইচ্ছে করেও যদি জেলার ক্রীড়াঙ্গনের এই ক্ষতি করেই থাকেন তবুও অভিভাবক হিসেবে ডিএফএ কেন জানল না যে জেলা টিম সেমিফাইনাল না খেলেই ফেরত এসেছে। খেলোয়াড় বা টিমের সাথে ডিএফর এই দূরত্ব তৈরি হলো কেন? সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মহিউদ্দীন জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। টাকার অভাবে এভাবে ঢাকা থেকে না খেলে ফিরে আসার আগে আমাকে জানানো উচিত ছিল। এটি খতিয়ে দেখা হবে এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষ মনে করেন, মহিলা ফুটবলের এই বিষয়টি অনেক কিছুকে সামনে নিয়ে এসেছে। যদি জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন টাকার প্রশ্নে পিছিয়ে না এসে থাকে তাহলে আকবর আলীর কঠোর শাস্তি হওয়া উচিৎ। অন্যদিকে যদি ডিএফএ টাকা দিতে অস্বীকার করায় সাতক্ষীরা জেলা দলকে ফেরত আসতে হয়ে থাকে তাহলে ডিএফএ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। আর যদি কোচ এবং কর্মকর্তা উভয় পক্ষই দোষী হয়Ñ তাহলে উভয়েরই সাজা হওয়া উচিৎ। একটি শক্তিশালী তদন্ত টিম গঠন করা তাই আবশ্যক। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসকের কাছে এমনিটই প্রত্যাশা করেন সাতক্ষীরাবাসী।