দেশের খবর: সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টিতে (জাপা) অন্তর্কলহ দেখা দেয়, গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দলটিতে সৃষ্ট পরিস্থিতিই এর সাক্ষী। এবারও একাদশ সংসদ নির্বাচন যখন আসন্ন তখন আবারও ঝামেলা শুরু হয়েছে দলে। দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ এবং তার স্ত্রী, দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকে ঘিরে আবারও পৃথক দুটি বলয় আকার পেতে শুরু করেছে জাপায়।
গত ৯ সেপ্টেম্বর সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এরশাদের নেতৃত্বে দলের পাঁচ নেতার বৈঠকের পর থেকে এই ঝামেলা শুরু হয়। বৈঠকে জাপার অন্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন- দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ওইদিন সংসদ অধিবেশনে রওশন এরশাদও উপস্থিত ছিলেন। তবে এরশাদ যে মাগরিগের বিরতির সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন এটা রওশন ও দলে তার বলয়ের সংসদ সদস্যরা জানতেন না। এনিয়ে পরে চটেছেন রওশন। মন্ত্রিসভায় থাকা জাপার একজন প্রতিমন্ত্রীসহ জাপার একাধিক এমপি জানান, তারা যখন জানতে পারেন এরশাদসহ পাঁচ নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেছেন তখন বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের ডালপালা মেলে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এরশাদ তার দলের তিন নেতার নাম উল্লেখ করে তাদেরকে সম্ভাব্য নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। বরং রওশনকে ছাড়া এরশাদ কেন একা এসেছেন-এনিয়ে কথা তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকে যাওয়া জাপার এক নেতাকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন—আপনি দুই নৌকায় পা রেখে চলছেন, আপনাদের দলের বিষয়ে যা কিছু বলবেন তা দু’জনের (এরশাদ-রওশন) সমন্বয়ের মাধ্যমে জানাবেন। দু’দিন পর জাপার ওই নেতা সংসদ ভবনে রওশনের কক্ষে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বকা খাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।
এরশাদের বৈঠকের পর রওশনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য কয়দিন ধরে চেষ্টা চালান। পরে রওশনও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দলের অন্য তিনজন সংসদ সদস্যের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় রাখার অনুরোধ করেন।
জাপার প্রেসিডিয়ামের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা নিয়েই নয়, বিভিন্ন আসনে আগেই মনোনয়ন দিয়ে এরশাদ দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করায়, কখনও দল করেননি এমন কয়েকজনকে দলীয় মনোনয়ন প্রদানের ঘোষণা দেওয়ার ঘটনায়ও ক্ষেপেছেন রওশন। এমনকি নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রণয়ন এবং আসন নিয়ে অন্য দলের সঙ্গে দরকষাকষির বিষয়ে কিছু না জানানোর কারণে রওশন সংক্ষুব্ধ। রওশনপন্থী একাধিক সংসদ সদস্য জানান, কয়েকদিনের মধ্যে রওশন দলের সংসদ সদস্যদের সভা ডাকতে পারেন, সেখানে দলের অভ্যন্তরীণ এসব বিষয় আলোচনার পাশাপাশি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে করণীয় নিয়ে কথা বলবেন। সৃষ্ট দ্বন্দ্বের কারণে দলের নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল নিয়ে গত ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী ওয়ার্কশপে রওশন এরশাদকে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার কারণে দলের প্রেসিডিয়ামের ও সংসদ সদস্যদের অনেকেই ওই অনুষ্ঠানে যাননি। তাছাড়া অনুষ্ঠানের মূল পৃষ্ঠপোষক জনৈক পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনিরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে দলের ভেতরে। মুনীর আগে কখনও জাপার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকলেও এরশাদ তাকে টাঙ্গাইল সদর আসনে আগামী নির্বাচনে জাপার প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।