অনলাইন ডেস্ক: আগামী অক্টোবরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। কোন প্রক্রিয়ায় হবে নির্বাচন? বর্তমান সরকারের অধীনে না কি অন্য কোনো সরকারব্যবস্থায়? এ নিয়ে ক্রমেই উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আর মাঠ দখলের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে রাজনৈতিক জোটগুলো। নির্বাচন ঘিরে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হচ্ছে, কী হবে? এ নিয়েই আতঙ্কে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন এলে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এটি স্বাভাবিক। তবে এ পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে অর্থনীতির জন্য তথা দেশের জন্য ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা আতঙ্কে রয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন ব্যবসায়ী ও হকার ও শ্রমিক শ্রেণি সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন। যা থেকে বাদ পড়ে না সাধারণ ভোক্তারাও। তাই সহিংস কর্মসূচি পরিহার করে সব পক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় শন্তিপূর্ণ নির্বাচন চান তারা। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আবু নাসের বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক। একটির অবস্থা খারাপ হলে অন্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে তা সহিংস রূপ নেবে না। কারণ জ্বালাও-পোড়াও, সংঘাতপূর্ণ আন্দোলন মানুষ পছন্দ করে না। আমাদের তরুণ সমাজ সহিংসতা পছন্দ করে না। তাই আমরা আশাবাদী রাজনৈতিক অঙ্গনে আগামীতে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। ব্যবসায়ী এ নেতা আরও বলেন, তারপরও যদি সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে ব্যবসায়ী সমাজ ঐক্যবন্ধভাবে তা প্রতিহত করবে। কারণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। গাড়ি ভাঙচুর, সড়ক অবরোধে ক্ষতির সম্মুখীন হয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। তাই সবার স্বার্থে দেশে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসা বাণিজ্য। শিল্প কারখানার উৎপাদনও কমে যায়। মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয়ভীতি কাজ করে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। তিনি আরও বলেন, যখনই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয় তখন উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগ করতে চান না। বিদেশিরাও সংঘাটপূর্ণ দেশে বিনিয়োগ করতে চান না। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। তাই রাজনৈতিক অস্থিরতা হলে দেশের অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে পড়ে। ‘নির্বাচন এলে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তবে এ পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে অর্থনীতির জন্য তথা দেশের জন্য ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে’ যোগ করেন প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে চাই। এজন্য প্রয়োজন ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ। এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। যারাই ক্ষমতায় থাকবে তারা এটি নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, গামের্ন্টস খাত হরতাল অবরোধের আওতামুক্ত থাকলেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আমরা সংঘাতময় পরিস্থিতি চাই না। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।