খেলার খবর: ১১৬ বলে তাঁর ৯ বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংসটি থামে ৯৯ রানে। নড়বড়ে নব্বই বা নার্ভাস নাইনটিজে এর আগেও আউট হয়েছেন। তবে ৯৯ রানে আউট হওয়ার হতাশার সঙ্গে এই প্রথম পরিচয় হলো তাঁর।
নতুন একটি অধ্যায় খুললেন মুশফিকুর রহিম। সেটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের যেমন, তেমনি এশিয়া কাপ ইতিহাসেরও। মাত্র ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি-বঞ্চনার আগুনে তাঁর আগে যে পোড়েননি বাংলাদেশের কেউই। পোড়েননি এশিয়া কাপ খেলা আর কোনো ব্যাটসম্যানই।
অথচ না পুড়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের আরেকটি অধ্যায়ে জ্বলজ্বলে অক্ষরেই তাঁর নামটি লেখা হওয়ার অপেক্ষা ছিল অল্প কিছুক্ষণের। আর সেখানে তাঁকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় ছিলেন মাহমুদ উল্লাহও। পাঁজরে চোট নিয়ে মুশফিক যখন তাঁর সপ্তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির পথে ৯৯ রানে দাঁড়িয়ে, তখন কীর্তির সেই আরেক অধ্যায়ে নিঃসঙ্গ মাহমুদই উইকেটে তাঁর সঙ্গী। এবং মুশফিককে বরণ করে নেওয়ার জন্য যাঁর চেয়ে আদর্শ আর কেউ হতেই পারতেন না।
বহুজাতিক আসরে বাংলাদেশের হয়ে দু-দুটি সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটসম্যান মাহমুদ উল্লাহই। যাঁর ব্যাটে দেখা দিয়েছিল বিশ্বকাপে কোনো বাংলাদেশির প্রথম সেঞ্চুরিও। ২০১৫-র বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা সেই সেঞ্চুরিই ওই আসরে তাঁর একমাত্র নয়। ইংলিশদের হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার পর হ্যামিল্টনে পরের ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন আরেকটি।
তাঁর ওই কীর্তির কাছে-ধারে এরপর আর কেউ যেতে পারেননি। মুশফিক কাল যেতে পেরেছিলেন শুধু চৌকাঠটা পেরোনোর দূরত্বে। যদিও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে কারো দুটি সেঞ্চুরি করার ঘটনা সাম্প্রতিককালেই আছে। এই তো কিছুদিন আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দু-দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়া তামিম ইকবাল। সেই তামিমের এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে চোট পেয়ে লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে পড়ার দিনেই মুশফিকের ঝলসে ওঠা ব্যাট পুড়িয়েছিল লঙ্কানদেরও।
১১ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ১৪৪ রানের ইনিংসে ম্যাচই ঘুরিয়ে দেওয়া মুশফিক সেদিন যে অবস্থায় ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন, কাল এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে পরিণত হওয়া ম্যাচেও বাংলাদেশের অবস্থা ছিল তার প্রায় কাছাকাছিই। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ওভারেই লিটন কুমার দাশ ও সাকিব আল হাসানকে হারানোর পর নামতে হয় তাঁকে। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে কবজির চোট নিয়ে বের হয়ে যেতে হয় তামিমকেও। অর্থাৎ ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে মাত্র ২ রান জমা করা বাংলাদেশ কার্যত হারিয়েছিল ৩ উইকেটই।
সেখান থেকে মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে স্রোতের প্রতিকূলে ব্যাট হাতে সফলভাবেই বৈঠা বেয়েছিলেন মুশফিক। ১৩২ রানের পার্টনারশিপে বিপর্যয় সামলে নেওয়া এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানকে কাল আবুধাবিতেও শুরু করতে হলো সেখান থেকেই। এবারও সঙ্গী সেই মিঠুন। ১২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর তাঁদের দুজনের ব্যাটে আবারও বেরিয়ে এলো শতরান পেরোনো জুটি। এবারের জুটি আরো বড়, ১৪৪ রানের। যদিও দারুণভাবে জমে গিয়েও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার দোষে আবারও কাঠগড়ায় মিঠুন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাজে শটে আউট হয়েছিলেন ৬৩ রান করে। পাকিস্তানের বিপক্ষেও প্রায় একই শটে এবার সাজঘরের পথ ধরলেন ৬০ রানে।
মিঠুন পথ হারালেও হারালেন না মুশফিক। তাঁর ব্যাটে এগিয়ে যেতে থাকল বাংলাদেশও। সেঞ্চুরি হয়ে যাওয়া মাত্রই যখন মুশফিকের ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু হওয়ার আশায় বাংলাদেশ, তখনই সেই নতুন অধ্যায় খুলে যাওয়ার ক্ষণ এসে উপস্থিত। এটি এমন এক অধ্যায়, যেখানে নাম লেখাতে চায় না কেউই। কিন্তু কখনো কখনো নিয়তি যে এ রকম কিছুই বরাদ্দ রাখে। রাখল মুশফিকের জন্যও। পাকিস্তানের তরুণ বাঁহাতি পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাটের ফেস ওপেন করে ড্রাইভ করতে যান মুশফিক। কিন্তু বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে পাকিস্তান অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদের গ্লাভসে।
১১৬ বলে তাঁর ৯ বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংসটি থামে ৯৯ রানে। নড়বড়ে নব্বই বা নার্ভাস নাইনটিজে এর আগেও আউট হয়েছেন। তবে ৯৯ রানে আউট হওয়ার হতাশার সঙ্গে এই প্রথম পরিচয় হলো তাঁর। এর আগে ২০০৯ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৮ রানে আউট হয়েছিলেন মুশফিক। ২০১৩-র অক্টোবরে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁকে ডুবতে হয়েছিল ৯০ রান করে আউট হওয়ার হতাশায়।
কিন্তু সেসব দিয়ে নয়, হতাশার নতুন অধ্যায়টি কাল খুললেন ৯৯ রানে আউট হয়ে। অথচ আরেকটু অপেক্ষায় তিনি মাহমুদ উল্লাহর সঙ্গী তো হতেনই, এশিয়া কাপেও হয়ে যেতে তাঁর তিন-তিনটি সেঞ্চুরি। যার প্রথমটি করেছিলেন ২০১৪-র এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে।
সংখ্যায় ১ সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দূরে থাকতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে ৯৯ রানে আউট হলেন তিনি।
৩ মুশফিকুর রহিম আউট হয়েছেন ৯৯ রানে। এ নিয়ে তৃতীয়বার নার্ভাস নাইনটিজের শিকার তিনি। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আউট হয়েছিলেন ৯৮ রানে। ২০১৩ সালে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে থামেন সেঞ্চুরি থেকে ২ রান দূরে থাকতে। এ ছাড়া সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে ৮৯ ও ৮৬ রানে আউট হওয়ার ইনিংসও আছে দুটি।
৪ সাকিব আল হাসান ছিটকে গেছেন ইনজুরিতে পড়ে। সুযোগ হয়নি নাজমুল ইসলাম অপুরও। চার বছর পর তাই বাঁহাতি স্পিনার ছাড়া ওয়ানডে খেলল বাংলাদেশ। গত ১৬ বছরে মাত্র দ্বিতীয়বার কোনো স্পেশালিস্ট বাঁহাতি স্পিনার ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ানডে খেলার রেকর্ড এটা।
১৪৪ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ১৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন। গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষেও বিপর্যয়ের মুখে হাল ধরেছেন দুজন। তৃতীয় উইকেটে গড়েছেন ১৪৪ রানের জুটি। মিঠুন আউট হন ৮৪ বলে ৬০ করে। আল মুশফিক থামেন সেঞ্চুরি থেকে ১ রান আগে।
আবুধাবিতে পাকিস্তানকে হতাশায় ডুবিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ। স্মরণীয় এ জয়ের অন্যতম রূপকার মুস্তাফিজুর রহমান ৪৩ রানে চার উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন ধসিয়ে দেওয়ায় রেখেছেন মূল ভূমিকা। বোলিং ওপেন করা স্পিনার মেহেদী হাসানও ছিলেন দুর্দান্ত। চৌকস অধিনায়কত্বের পাশাপাশি দারুণ ফিল্ডিংয়ে চমৎকার ক্যাচ নিয়ে জয় ত্বরান্বিত করেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজাও।