অনলাইন ডেস্ক: মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও সরকার কর্তৃক সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস অভিযানকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি করেছেন মার্কিন আইন প্রণেতারা। রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের দুদিন পর বুধবার ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি এ আহ্বান জানান মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্যরা। কারণ ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানকে গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ওপর শুনানিকালে কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়সি বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে এ অভিযানকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। আন্তর্জাতিক গণসচেতনতা বৃদ্ধি, সমর্থন ও তাদের থামাতে এ নৃশংসতাকে সংজ্ঞায়িত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুনানিতে এড রয়সির বিবৃতির ওপর মন্তব্য জানতে চাইলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো সাড়া দেয়নি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের দুদিন পর বার্মিজ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা শিরোনামে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হত্যা, গণধর্ষণ ও অন্যান্য নৃশংসতার জন্য সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ন্যায্যতা হিসেবে ওই প্রতিবেদন ব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকলেও তাতে রাখাইনে অভিযানকে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য ইলিয়ট অ্যাঞ্জেল বলেন, মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের সুপারিশসহ প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। চলতি মাসের শুরুতে আইসিসি জানিয়েছে, জোরপূর্বক দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধ কিংবা গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানসহ কংগ্রেসের বহু সদস্য এ সংকটে জোরালোভাবে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন সরকার এ অভিযানকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ওয়াশিংটনের আইনগত উপলক্ষ তৈরি হবে। কিন্তু এ ধরনের মূল্যায়ন দাঁড় করাতে ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকেই বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছেন। কিন্তু প্রশাসনের ওপর কংগ্রেস সদস্যদের পক্ষ থেকে চাপ অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে রয়সির মতো রিপাবলিকানরা এ সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করতে সাহায্য করতে পারেন। এ ছাড়া রয়টার্সের দুই প্রতিবেদক ওয়া লোন ও কেইয়াও সোকে মুক্তি দিতে চাপ প্রয়োগ করতে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা। ঔপনিবেশিক আমলের গোপনীয়তা আইনে এ দুই সাংবাদিককে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন মিয়ানমারের একটি আদালত। যে ঘটনাকে দেশটির গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে অস্বীকার করা ওই সাংবাদিক বলেন, গ্রেফতার করার আগে পুলিশ তাদের হাতে কয়েকটি কাগজ ধরিয়ে দিয়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ সাক্ষাও দিয়েছে যে এটি ছিল সাজানো ঘটনা। বিদ্রোহীদের হামলার সামরিক বাহিনীর জবাবে ১০ রোহিঙ্গা পুরুষ ও কিশোরকে হত্যার ঘটনায় ওই দুই সাংবাদিক তদন্ত করেছিলেন।
গত বছরের ২৫ আগস্টের পর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছেন।