দেশের খবর: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জাল নোট তৈরি চক্রের বড় পরিকল্পনার কথা জেনে গেছে গোয়েন্দারা। দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি জাল নোট সরবরাহ করা এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর তারা আরও জেনেছে, দুর্গা পূজার কেনাকাটাতেও চক্রটির একই ধরনের পরিকল্পনা ছিল। শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর তুরাগ থেকে সর্বোচ্চ জাল নোট প্রস্তুতকারক আবুল হোসেন ওরফে ইমনসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (উত্তর)।
গ্রেপ্তার হওয়া বাকি পাঁচজন হলেন; শেখ সুমন (৩২), মো. ছগির হোসেন ওরফে শাহীন (৪২), মো. ইকবাল হোসেন (৩২), স্বপ্না (১৯) এবং তৌকীর আহম্মেদ ওরফে সুজন (৩০)। এসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে ২৯ হাজার ৮০০ টাকা, একটি ল্যাপটপ, দুটি কালার প্রিন্টার, টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কাগজ, প্রিন্টারে ব্যবহৃত কালি, স্কীন বোর্ড, জাল টাকায় ব্যবহৃত ফয়েল পেপারসহ ০৪ সিরিজের ৫১ লাখ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জানায়, এক লাখ জাল টাকা তৈরি করতে তাদের খরচ হতো প্রায় দশ হাজার টাকা। তৈরির পর তা পাইকারী বিক্রেতার কাছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করত তারা। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার-ডিসি মশিউর রহমান বলেন, শুক্রবার রাতে রাজধানীর তুরাগের বাদলদী রোডের বাউনিয়ার একটি বাসায় জাল নোট তৈরির কারখানার সন্ধান পায় গোয়েন্দারা, পরে জাল টাকা তৈরির মূলহোতাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে তুরাগ থানায় মামলা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক জাল নোট সংক্রান্তে মামলা আছে। ‘গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের তৈরি জাল টাকা বিস্তার ঘটায়।’ জাল নোট বিক্রির বিভিন্ন ধাপের কথা উল্লেখ করে মশিউর রহমান বলেন, জাল নোট তৈরির পর পাইকারী বিক্রেতাদের কাছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় প্রতি লাখ জাল টাকা বিক্রি করে। এরপর পাইকারী বিক্রেতারা সেই পরিমাণ জাল টাকা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পরে মাঠ পর্যায়ে নানা কৌশলে তা বাজারে ছড়িয়ে দেয়। ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়েন্দা পুলিশ উত্তরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সুমন কান্তি চৌধুরী বলেন: বর্তমানে ইমন বাংলাদেশে সর্বোচ্চ জাল নোট প্রস্তুতকারী। ঢাকা এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় জাল নোট প্রস্তুত ও ক্রয়-বিক্রয়ের অন্যতম হোতাও ইমন। জাল নোট তৈরির এই কারখানার মালিকও সে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমন জানায়, সে তার অন্যতম সহযোগী শেখ সুমন, ছগির, ইকবাল, স্বপ্না এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জাল নোটের ব্যবসা করে আসছিল। সুমন কান্তি বলেন, ইমন প্রথম জীবনে কাউছার নামের এক জাল নোট প্রস্ততকারককে সহযোগীতা করতেন। সেখান থেকেই তার মনে জাল টাকা তৈরির কারখানা কারার চিন্তা ঢুকে। পরে ২০১৩ সাল থেকে সে নিজেই জাল টাকা তৈরি শুরু করে। এর আগেও জাল টাকা এবং তা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রতি মাসে এক কোটি টাকার জাল নোট ইমন তার সরবরাহকারীদের মাধ্যমে বাজারজাত করতো। ঢাকা, চট্রগাম,গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ও প্রত্যন্ত এলাকাতেও জাল টাকা বাজারজাত করতো সে। ‘আর এ কাজের জন্য বড় বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের (ঈদ/ দুর্গা পূজা) সময়কে বেছে নিত। সম্প্রতি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আর্থিক লেনদেন বাড়ার সম্ভাবনা থেকে সে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল। নির্বাচনকে ঘিরে শুধু এই চক্রটিই নয়, অন্য চক্রগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সুমন কান্তি আরো জানান, গ্রেপ্তার তৌকির আহম্মেদ ওরফে সুজন এই কারখানায় প্রিন্টের কাজে ব্যবহৃত কালি (কার্টিজ) গোপনে সরবরাহ করে আসছিল।’ ‘এই চক্রটি প্রতি মাসে আনুমানিক কোটি টাকা মূল্যের জাল নোট বাজারে ছাড়ত। উদ্ধার করা এসব সরঞ্জামাদি দিয়ে আরো প্রায় ৭ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট তৈরি করা যেত।