খেলা

দল পরিচালনায় মাশরাফির অবিস্মরণীয় ৫টি গুণ!

By daily satkhira

September 30, 2018

খেলার খবর: মূল বক্তব্যে যাওয়ার আগে একবার শুধু ভাবুন, তাঁর পায়ে রয়েছে সতেরটি অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতা। এগুলো নিয়েই মাঠে বল করার পাশাপাশি সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। মাশরাফির অধিনায়কত্ব এবারের এশিয়া কাপে প্রশংসিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। ক্রিকেট এক্সপার্ট থেকে শুরু করে সাবেক রথী-মহারথীরা সবাই মেতে উঠেছেন টাইগার অধিনায়কের বন্দনায়। চলুন তাদের পর্যালোচনা আলোকে জেনে নেয়া যাক দলপরিচালনায় মাশরাফির আলোচিত গুণাবলী।

১)টিমকে উদ্দীপ্ত করার সামর্থ: বাংলাদেশ টিমে পারফর্মারের সংখ্যা বেড়েছে আগের চেয়ে। সিনিয়র পঞ্চ পান্ডবের সাথে ভালো খেলছেন মিরাজ, মোস্তাফিজ, লিটন, মিথুন, রুবেলরা। তবে দলের সবাইকে একসূত্রে গাঁথার কাজটা করেন মাশরাফি। মাঠে নামার আগে তো বটেই খেলা চলাকালীন সময়েও টিমের সব প্লেয়ারদের উদ্দীপ্ত করার কাজে তিনি অতুলনীয়। মুশফিকের বয়ানে পাওয়া যায় তার প্রমাণ, ‘মাঠে নামার আগে মাশরাফি ভাই বলেছিলেন, হয় মারবি নয় মরবি; যুদ্ধে নেমে গা বাঁচিয়ে চলা যায়না।’

২)সিচুয়েশন বুঝে বোলিং পরিবর্তন: আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন হাশমতুল্লাহ শাহিদি আসগর আফগানের জুটিটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল তখন, নিজেই এলেন বোলিংয়ে। ফলাফল পাওয়া গেল কিছুক্ষণ পরেই। দুই সেট ব্যাটসম্যানই সাজঘরে ফিরলেন ম্যাশের সেকেন্ড স্পেলের দুর্দান্ত বোলিংয়ে। একইভাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই পার্ট টাইমার মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্যকে সময়মত ব্যবহার করাও তাঁর কুশলী ক্যাপ্টেনসির প্রমাণ। ভারতের বিপক্ষে নাজমুলের প্রথম স্পেলটাও ছিল তাঁর শক্তিশালী সিদ্ধান্ত। শেখর ধাওয়ানের মূল্যবান উইকেটটি পড়েছে সেই দূরদর্শীতার ফলে।

৩)আগ্রাসী ফিল্ডিং সাজানো: এ বিষয়েও মাশরাফির ক্রিকেট সেন্স প্রশ্নাতীত। এশিয়া বেশ কয়েকবার দেখা গেছে মোস্তাফিজ ও রুবেলের বলে তিনি আক্রমণাত্নক ফিল্ডিং সাজিয়েছেন। নতুন ব্যাটসম্যান ক্রিজে এলেই তাকে চেপে ধরার জন্য স্লিপে ফিল্ডার নিয়েছেন। কখনও আবার সিঙ্গেল বন্ধ করার জন্য শর্ট ফাইন লেগ ও শর্ট মিড উইকেটে ফিল্ডার রেখেছেন। ভারতের বিপক্ষে অল্প রানের পুঁজিতে লড়ার জন্য তাঁর ফিল্ড প্লেসমেন্ট ছিল প্রশংসনীয়।

৪)ড্রেসিংরুমের নেপথ্য ভূমিকা: প্রথম ম্যাচে চোট পাওয়া তামিমকে মাঠে নামানোর নেপথ্য কারিগর মাশরাফি। তিনিই নন স্ট্রাইকে থাকলে তামিমকে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি গ্লাভস কেটে সাজ-সরঞ্জামও প্রস্তুত করেন তিনি। শুধু কী তাই ড্রেসিংরুমে তাঁর ভূমিকাটা আরো ভালো করে বুঝতে চাইলে মনে করুন সেই দৃশ্যটা যখন ফাইনালে লিটনের হাফ সেঞ্চুরির পর দূর থেকে ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, ‘ইনিংসটা বড় কর, দেশের জন্য হৃদয় দিয়ে খেল..।’এ থেকেই আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন একজন মাশরাফি ড্রেসিংরুমেও কতোটা নিবেদিত প্রাণ নেতা।

৫)সিদ্ধান্ত গ্রহনের সক্ষমতা: মিরাজকে দিয়ে ওপেন করানো কিংবা ইমরুলকে নিচের দিকে নামিয়ে মিডল অর্ডারে খেলানো সবকিছুর পেছনেই রয়েছে দলনায়ক মাশরাফির চিন্তা দূরদর্শীতা। তাঁর সিদ্ধান্ত নেয়ার এই দক্ষতার প্রতি ইঙ্গিত করেই রমিজ রাজা বলেছেন, ‘ও খেলাটাকে দারুণভাবেই বোঝে। একই সঙ্গে সে জানে কখন, কোথায়, কাকে ব্যবহার করতে হবে।’

সবমিলিয়ে সাকিব-তামিম ছাড়াই অপেক্ষাকৃত কম শক্তির একটি দল নিয়ে এশিয়া কাপে মাশরাফি বাংলাদেশকে যতো দূর নিয়ে গেছেন, তার জন্য সবদিকেই চলছে তাঁর গুণগান। ফাইনালে হারলেও তার দল লড়াই করেছে শেষ বল পর্যন্ত। পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মত দলকে পেছনে ফেলে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলাটাও কিন্তু সামান্য কিছু নয়। এই দলের অন্তর্গত সম্ভাবনাকে মাশরাফি যেভাবে মাঠে প্রয়োগ করেছেন, তা এক কথায় অসাধারণ।