দেশের খবর: জাতীয় ঐক্য ও বিএনপির মাঠে নামার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত ৩ কৌশলে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সহঅবস্থান তৈরি, দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করা ও রাজনৈতিক মাঠে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই এ সব কৌশল গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীনরা। কৌশল সম্পর্কে দলটির নীতি নির্ধারণী মহল থেকে কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও কর্মসূচি ও বিভিন্ন পদক্ষেপ থেকে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ও জোটের কর্মসূচি অনুযায়ী, ৯ অক্টোবর রাজশাহী, ১০ অক্টোবর নাটোর ও ১৩ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করবে ১৪ দলীয় জোট। এছাড়া পুরো অক্টোবরে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দিয়ে রাজনৈতিক মাঠে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাই ক্ষমতাসীনরা। এই সব কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে যেতে চায় না আওয়ামী লীগের নেতারা। নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে সমালোচনা মুখর থাকবেন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। ঐক্য প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও জামায়াত ইস্যুতে ঐক্য প্রক্রিয়াকে চাপ রাখতেই এই কৌশল নিয়েছেন তারা। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্ট গঠন প্রক্রিয়ার শুরুতে কিছুটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের হোটেল হিলটনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের জন্য যুক্তফ্রন্টের নামে দুর্নীতিবাজরা এক হয়েছে, জোট বেঁধেছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে সমাবেশ করা নিয়ে অনেকটা মুখোমুখি অবস্থান ছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও বিএনপি। পরে বিএনপি সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করে। রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ২৯ সেপ্টেম্বর ১৪ দলের কর্মী সমাবেশে ক্ষমতাসীনদের অধিকাংশ নেতারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের সমালোচনা করেন। ওই কর্মী সমাবেশ থেকে রাজনৈতিক মাঠ দখলে রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা পাল্টাপাল্টি করি নাই, করব না। কারণ যারা ৯ বছরে ৯ দিনও আন্দোলন করতে পারে নাই, অনুমতি ছাড়া রাস্তায় নামতে পারে না, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের, ১৪ দলের কোনো পাল্টাপাল্টি প্রয়োজন নাই। জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ৯ অক্টোবর রাজশাহী, ১০ অক্টোবর নাটোর ও ১৩ অক্টোবর খুলনায় ১৪ দল বিভাগীয় সমাবেশ করবে। তারপর নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে অক্টোবরে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। তিনি বলেন, ওরা বলেছে অক্টোবর থেকে মাঠে থাকবে। অক্টোবর তোমাদের জীবনে আসবে না। ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠ গরম করব। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সম্পাদকমণ্ডলীর সভা করে সপ্তাহব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হলে আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব। আর যদি আন্দোলনের নামে ২০১৪ সালের মত নাশকতা, বোমা হামলা এবং সেই ভয়াবহ দৃশ্যপটের অবতারণা করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসন যা যা করার দরকার সব করবে। সমুচিত জবাব দেয়া হবে। আমরাও ঘরে বসে ডুগডুগি বাজাব না, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী এক নেতা বলেন, আপাতত এই কৌশলেই এগুতে হবে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।