জাতীয়

যশোরে ৯ মাসে ৭২ খুন, উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ

By daily satkhira

October 02, 2018

অনলাইন ডেস্ক: বছরের প্রথম ৯ মাসে যশোরে ৭২ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩১ জনই নিহত হয়েছেন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বা ‘গোলাগুলির সময়’ গুলিবিদ্ধ হয়ে। এই সময়ে রাজনৈতিক কোন্দলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে বিএনপির একজন কর্মী রয়েছেন। বাকিরা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, তরুণ লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। এ ছাড়া এই ৯ মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন চারজন।

চলতি বছরের শুরু থেকেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। এ পর্যন্ত র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাগুলো দুই দল মাদক ব্যবসায়ী কিংবা দুই দল ডাকাতের মধ্যে ঘটেছে বলে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। কথিত এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার বাইরেও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকটি গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। বছরের প্রথম সপ্তাহেই ৬ জানুয়ারি ঝিকরগাছায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত বাবু ওরফে পালসার বাবু। নিহত বাবু এলাকায় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরদিন ৭ জানুয়ারি মনিরামপুর উপজেলার স্মরণপুর ইটভাটার কাছ থেকে রাজু সর্দার নামে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের চোখ, মুখসহ শরীরের চারটি স্থানে গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন ছিল। ২০ জানুয়ারি যশোর সদর ও ঝিকরগাছা থেকে চারটি গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দুই স্থানেই দুই দল করে ডাকাত নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে লিপ্ত হলে এ চারজন নিহত হন। নিহতদের পরিচয় সে সময় পাওয়া যায়নি। এর এক দিন পর যশোর-নড়াইল সড়কের ভাঙ্গুড়া পুরনো ব্রিজের নিচ থেকে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেওয়া এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে বাঘারপাড়া থানা পুলিশ। ২৮ ফেব্রুয়ারি কেশবপুর উপজেলার সফরাবাদ এলাকার একটি কচুখেত থেকে পুলিশ মামুন মোড়ল নামে এক ট্রাক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করে। লাশের মাথা ও কপালে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ৯ এপ্রিল যশোর সদরে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আলামিন বাবু নামের এক যুবক। নিহত এই যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল। ৯ মে মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ হানুয়ার মাঠ থেকে মুক্তার আলী নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই দল ডাকাতের মধ্যে গুলিবিনিময়ের সময় এই নিহতের ঘটনা ঘটে বলে সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল। নিহত মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ১০টি মামলা ছিল বলেও পুলিশ দাবি করে। ১৯ মে অভয়নগরে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবুল কালাম, হাবিবুর রহমান ও মিলন কাঁসারি নামে তিনজন নিহত হন। পরদিন ২০ মে সদর উপজেলার সুজলপুর থেকে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই দল ডাকাতের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের সময় এ যুবক নিহন হন বলে পুলিশ দাবি করে। এর এক দিন পর ২১ মে সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা, মণ্ডলগাতি ও তরফ নওয়াপাড়া থেকে তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের সময় এ তিনজন নিহত হন। ২৯ মে যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই ব্যক্তি নিহত হন। এ দুজনের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ ছিল। মাদক কারবারিদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের সময় এ দুজন নিহত হন বলে পুলিশ দাবি করেছিল। পরদিন ৩০ মে বেনাপোলে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও দুই ব্যক্তি মারা যান। এর এক দিন পর বাঘারপাড়ার ভাটারআমতলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আরও এক ব্যক্তি। এই তিনজনই মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলির সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বলে পুলিশ দাবি করে। ১৫ জুন শার্শায় মোন্তাজ আলী নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়। ১৮ জুন অভয়নগরের প্রেমবাগ এলাকা থেকে উদ্ধার হয় শহিদুল ইসলাম নামে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ। এরা দুজনও দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলির সময় নিহত হন বলে পুলিশ দাবি করে। ২৪ জুন মনিরামপুর উপজেলার ছাতিয়ানতলা থেকে দুই যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, দুই দল সন্ত্রাসীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের সময় এই দুই যুবক নিহত হন। ৪ জুলাই চৌগাছায় মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে কথিত গোলাগুলিতে নিহত হন বেনাপোলের শহিদ নামে এক ব্যক্তি। ৬ জুলাই যশোর শহরের শংকরপুর এলাকায় আকাশ নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ক্ষেত্রে পুলিশ দাবি করে, দুই দল সন্ত্রাসীর মধ্যে গোলাগুলির সময় আকাশ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। ১১ জুলাই মনিরামপুর থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ডাকাতদের মধ্যে গোলাগুলির সময় তার মৃত্যু হয় বলে পুলিশ জানায়। ১৩ জুলাই চৌগাছায় রতন হোসেন নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ দাবি করে। ২৩ জুলাই সদর উপজেলার বারিনগর মথুরাপুর এলাকার রেললাইনের ওপর থেকে দুই ব্যক্তির ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪ জুলাই যশোর-মনিরামপুর সড়কের কানাইতলা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৮ আগস্ট যশোর-নড়াইল সড়কের সীতারামপুর ব্রিজের কাছ থেকে বাঘারপাড়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে নড়াইল থানার পুলিশ। ১৬ সেপ্টেম্বর শার্শা ও কেশবপুরের আলাদা দুটি স্থান থেকে আজিজুল হক ও ফারুক হোসেন নামে আপন দুই ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের বাড়ি শার্শায়। এ দুই ভাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর যশোর শহরের বাবলাতলা হ্যাচারি এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’র সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শহিদুল ইসলাম তপন নামের এক ব্যক্তি। এদিকে রাজনৈতিক কোন্দলে গত ৯ মাসে পাঁচজন নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। ২৭ আগস্ট যশোর শহরের শংকরপুরে মশিয়ার রহমান নামে এক বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। ১৪ মে প্রতিপক্ষের বোমা হামলায় নিহত হন জেলা তরুণ লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। ২৩ জুন যশোর শহরের ঘোপ এলাকায় যুবলীগের আঞ্চলিক অফিসে হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। তাদের হামলায় আরাফাত মুনাফ লিটন নামে এক যুবলীগ নেতার মৃত্যু হয়। ২৬ মার্চ ছাত্রলীগের যশোর সরকারি সিটি কলেজ শাখার যুগ্ম-সম্পাদক রাকিব হাসান দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। ৩ জানুয়ারি ঝিকরগাছায় আব্বাস আলী নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী প্রতিপক্ষের বোমা হামলায় নিহত হন। নিহত আব্বাস আলী ঝিকরগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনের ভাই। এ ছাড়া গত ৯ মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে চারজন নিহত হয়েছেন। ১৫ সেপ্টেম্বর বাঘারপাড়ায় গরুচোর সন্দেহে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেওয়া হলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ১৭ জুলাই সদর উপজেলার বসুন্দিয়ায় ইরাদত খান নামে এক ব্যক্তি গণপিটুনিতে নিহত হন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। নিহত ইরাদত খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল। ১৭ মে বাঘারপাড়ায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন আরেক ব্যক্তি। তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। ২৯ মে যশোরে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতের দিকে যশোর শহরের কাজীপাড়া এলাকায় সোহাগ নামে এক ঠিকাদারকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৩০ আগস্ট শহরের সিটি কলেজ মসজিদের পাশ থেকে এক তরুণীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ১১ আগস্ট সদর উপজেলার নূরপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় শহরের একতা হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় দাহিনুর রহমানের লাশ। ৮ আগস্ট বাঘারপাড়ায় তফসির মোল্লা নামে এক বৃদ্ধকে গলা কেটে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। ২ আগস্ট মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া মাঠ থেকে গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় আবদুল লতিফ নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়। ২৭ জুলাই শহরের মুড়লী মেহগনি বাগান থেকে সোহেল রানা নামে এক ট্রাকচালকের মাটিচাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৩ জুন বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরায় মহিদুল ইসলাম নামে এক যুবককে পিটিয়ে ও চোখ খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২০ জুন ভোরে ঢাকা থেকে যশোর ফিরে বাড়ি যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন চন্দন কুমার ঘোষ নামের এক যুবক। ১৩ জুন যশোরে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা যান রমজানুল ইসলাম নামের এক মোহরার। ১১ মে বাঘারপাড়া থেকে আসাদুজ্জামান আসাদ নামে এক মাদ্রাসা কর্মচারীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪ এপ্রিল যশোর শহরের রেলগেট এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মারা যান ইজিবাইক চালক রুবেল। ১৩ এপ্রিল অভয়নগরের নওয়াপাড়া রেললাইনের পাশ থেকে রবিউল ইসলাম নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ১২ এপ্রিল শার্শা থেকে উদ্ধার হয় কদর আলী গাজী নামে এক ঘের ব্যবসায়ীর লাশ। ২৬ মার্চ শহরের জামরুলতলা এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন লিটন হোসেন নামে এক যুবক। ২৯ জানুয়ারি শহরের রেলগেট এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে রানা হোসেন নামের আরও এক যুবক নিহত হন।