আব্দুল জলিল: কলেজ ছাত্র গৌতম হত্যার পর সাতক্ষীরার মহাদেবনগরে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোনো ধরনের উত্তেজনা প্রমশনে সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এদিকে ময়না তদন্ত শেষে গৌতমের মরদেহ হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুসারে শনিবার রাতে মহাদেব নগর শ্মশানে দাহ করা হয়েছে। এদিকে গৌতম হত্যায় গ্রেফতার সাত আসামির একজন শাহাদাত হোসেন হত্যার বিবরন দিয়ে শনিবার বিকালে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এতে হত্যার সাথে আরও কারা জড়িত আছে সে তা জানিয়েছে। কিভাবে কোথায় গৌতমকে হত্যা করা হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে শাহাদাত। সদর থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা জানান, রোববার আরও দুই আসামি নাজমুল হাসান ও সাজুর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেওয়ার কথা রয়েছে। তিনি জানান হত্যার সাথে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামানকে গৌতম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হেয়ছে বলে জানান ওসি। জামশেদ ও মিঠুর বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ: পুত্র শোকে কাতর বাবা গনেশ মন্ডল হত্যার নেপথ্য কথা জানাতে গিয়ে বলেন অনেক কথা। রোববার সকালে তিনি বলেন এবারের ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে তার প্রতিদ্ব›ন্দ্বী ছিলেন মো. শহিদুল ইসলাম ও শাহাদাত হোসেন মধু। তাদের দুজনকে হারিয়ে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর থেকে শহিদুল ইসলাম তার সাথে কথা বলেন না। এমনকি যেকোনো ক্ষেত্রে গনেশ মন্ডলের অবস্থানের বিপক্ষে অবস্থান নেন তিনি। গনেশ মন্ডল বলেন হত্যার ঘটনায় জড়িত ও গ্রেফতারকৃতরা সবাই শহিদুল ইসলামের লোক। এই হত্যায় তার ইন্ধন থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি । গনেশ মন্ডল বলেন তার গ্রামে একটি শিশুকে মারপিট করেছিল মোশাররফ মিস্ত্রির ঘর জামাই জামশেদ। এ ব্যাপারে তিনি একটি সালিশ বিচার করেছিলেন। সে সময় থেকে জামশেদ তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছেন। গনেশ বলেন তার এলাকায় জামশেদ,সাজু ও কবিরুল ইসলাম মিঠুসহ কয়েকজন চাঁদাবাজি ছাড়াও কিছু কিছু অপরাধের সাথে জড়িত। এ সব ব্যাপারে তিনি তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি বলেন জামশেদকে পুলিশ চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাকে ছাড়ানোর জন্য তার ওপর চাপ দেয় আবদুর রহমান ও শহিদুলের ভাই মুক্ত। তিনি এতে রাজি হননি। এর ফলে জামশেদের শ্বশুর মোশাররফ মিস্ত্রি তাকে জানান ‘আপনার জন্য আমার জামাতাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এজন্য পুলিশকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে জামশেদকে থানা থেকে মুক্ত করে আনা হয়’। গনেশ সরকার জানান থানা থেকে বেরিয়ে এসে জামশেদ তার মোবাইলে দুইবার ফোন দেয়। জানায় এর প্রতিশোধ নেওয়া হবে। তিনি জানান ওই রাতেই (১৩ ডিসেম্বর) তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়। তিনি জানান অপহরনের পর ওই রাতে ঘাতকরা স্থানীয় আব্দুস সালামের বাড়ি থেকে একটি খাসি চুরি করে তারা। রাতে খাসিটি জামশেদের শ্যালক মহসিনের বাড়িতে নিয়ে জবাই করে খায় তারা। এদিকে হত্যার পর গৌতমের লাশে ভারি ইট ঝুলানোর জন্য যে রশিটি ব্যবহার করা হয় সেটি আরেক আসামি সাজুর বাড়ির ছাগলের রশি। গনেশ মন্ডল আরও জানান জামশেদ থানা থেকে মুক্ত হবার পর থেকে গাঢাকা দিয়ে রয়েছে। এই ফাঁকে তার ছেলেকে মুক্তিপণ আদায়ের নামে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। জামশেদকে গ্রেফতার ও থানা থেকে তার মুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর আবুল কালাম বলেন ‘বিষয়টি সম্পর্কে এসআই আসাদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করতে’। এ ব্যাপারে এসআই আসাদ জানান তিনি কাগজপত্র না দেখে কিছু বলতে পারবেন না। সদর থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা জানান ‘জামশেদকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’