শিক্ষা সংবাদ: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার (০৩ অক্টোবর) শিক্ষকতা জীবনের শেষ কার্যদিবস পার করেছেন শিক্ষক, জনপ্রিয় লেখক ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বৃহস্পতিবার (০৪ অক্টোবর) থেকে তিনি অবসর ছুটিতে যাচ্ছেন।
অধ্যাপক জাফর ইকবালের শেষ কার্যদিবস উপলক্ষ্যে রাত সাড়ে ৮টার দিকে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘রঙিন চশমা’ নামের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না। তোমরা শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে আমাকে এতো কিছু দিয়েছো যার ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার খুব সুন্দর সময় কেটেছে। আমি আগামী এক বছর পর্যন্ত অফিসিয়ালি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি, তবে কোনও কাগজে আমার সিগনেচার থাকবে না।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়েরর সব কিছুর প্রতি ভালোবাসা অটুট থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তোমরা শিক্ষার্থীরা যদি কখনো কোনও গানের অনুষ্ঠান করো, আমাকে দাওয়াত দিও। আমি অবশ্যই আসবো। আমি তোমাদের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজবো, কারণ আমি এই বাংলাদেশে এসেছি শুধুমাত্র বৃষ্টির জন্য। কারণ পৃথিবীতে বাংলাদেশের মতো এত সুন্দর বৃষ্টি আর কোথাও নেই।’
ছুরিকাঘাতের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে যখন হেলিকপ্টার হতে স্ট্রেচারে করে নামানো হলো, সেদিন আকাশে ফুটফুটে চাঁদ ছিল। আমার চোখ ছিল সেই চাঁদের দিকে। আমার সেদিন মনে হয়েছে এতো সুন্দর পৃথিবী আমি আবার দেখবার সুযোগ পেয়েছি শুধুমাত্র তোমাদের ভালোবাসা পেয়ে।’
অধ্যাপক জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসা ছাড়া আর কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা যারা ’৭১ প্রজন্মের লোক তারা দেখেছি মানুষ কিভাবে আমাদের উপকার করেছে। আর এ থেকে আমার মাঝে পজিটিভ চেতনা তৈরি হয়। তাই কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি সদা উত্তর দেই আমার কাছে আইডল হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ।’
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক জাফর ইকবালের শিক্ষার্থী এবং সহকর্মী হিসেবে স্মৃতিচারণ করেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি পরিচালক অধ্যাপক শহিদুর রহমান এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রেজা সেলিম।
ব্যক্তিগত সহকারী জয়নাল আবেদিন জানান, ১৯৯৪ সালে বিদেশ থেকে ফেরেন এবং ডিসেম্বরের ৪ তারিখ শাবিতে যোগ দেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল। তিনি দীর্ঘ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি একাধারে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানের দায়িত্বও পালন করেন।