এম. বেলাল হোসাইন/আমির হোসেন খান চৌধুরী: দৈনিক আজকের সাতক্ষীরায় গত বৃহস্পতিবার প্রধান শিরোনামে ‘মহান বিজয়ের মাসে শ্যামনগরে বাঙালি সংস্কৃতির অবমাননা, প্রকাশ্যে চলছে নগ্ন নৃত্য ও জুয়া’Ñ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও পর্যাপ্ত আর্থিক সুবিধা নেয়ার কারণে কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসন। যদিও জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন কোন প্রকার অশ্লীলতা ও জুয়া যেন না চলে। আর এভাবে প্রকাশ্যে নগ্ন নৃত্য ও জুয়ার আসর অব্যাহতভাবে চলায় সচেতন মহল ও এলাকার অভিভাবকগণ ছিঃছিঃ করছেন। অন্যদিকে, শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, যাত্রাপালায় কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে তা বন্ধ করে দেয়া হবে। প্রশাসনের সহায়তায় আজও নির্বিঘেœ চলছে অশ্লীল নাচগান ও জুয়ার আসর। শ্যামনগর সদর উপজেলার বংশীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাহমুদপুর মোস্তফার ভাটার পাশে ১৫ দিনব্যাপী রবিবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে আয়োজন করা হয়েছে অর্ধনগ্ন নাচের এবং জমজমাটপূর্ণ জুয়ার আসর। ৫ দিন যাবৎ চলছে এই অশ্লীল নাচগান ও জুয়ার আসর। স্থানীয় প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ নির্বিঘেœ এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে অর্ধনগ্ন নাচগান ও জুয়ার আসর। এখানেই শেষ নয় এর সাথে সাথে এই স্থানে বিক্রয় হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজাসহ যুবসমাজ ধ্বংসকারী বিভিন্ন প্রকার নেশার দ্রব্য। অর্ধনগ্ন নাচ গান ও জুয়ার আসরে হাজার হাজার টাকা নষ্ট করছে স্থানীয় এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও উঠতি কয়সের যুবক এবং শিক্ষার্থীরা। জুয়ার চরকি বসানোর জন্য জুয়ার বোর্ডের মালিকদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৮০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে এই অশ্লীল নাচগানের আয়োজকরা। এছাড়া সামাজিক যাত্রাপালার নামে মেয়েদের অর্ধনগ্ন নাচ গান দেখানোর জন্য হাজার হাজার দর্শকদের কাছ থেকে তিনশ, দুইশ টাকা চেয়ার ও একশত টাকা বাংলার জমিনের টিকিটের জন্য আদায় করা হচ্ছে। আর এই লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের একটি বড় অংশ যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের পকেটে। যার ফলে সবাই দেখেও না দেখার ভান করে চুপ করে বসে আছে। সামনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা যারা ভাববেন নিজেদের সামান্য লোভের জন্য তারাই চোখে পটি বেঁধে বসে আছে। মানুষের বিবেক কত নিচে নামলে এই বিজয়ের মাসে প্রকাশ্যে জুয়ার আসর ও অর্ধনগ্ন নাচগানের আয়োজন করে। সারারাত ব্যাপী একের পর এক অর্ধনগ্ন মেয়েদের নাচেগানে ও শরীরের স্পর্শে মন ভরে ফূর্তি করে জুয়ার চরকিতে হাজার হাজার টাকা নষ্ট করে রিক্ত হাতেই বাড়ি ফিরে যায় সব দর্শকই। ঘরে ফিরে অনেকেই অশান্তি করছে পরিবারের সদস্যদের সাথে। এদিকে অভিভাবকদের চিন্তা তাদের উঠতি বয়সী ছেলেদের জন্যÑ যারা কোন বাঁধা না মেনে মেয়েদের অর্ধনগ্ন নাচ দেখার জন্য এবং জুয়ার চরকি ঘুরানোর জন্য দলবেঁধে ছুটছে এই আসরে। জুয়ার চরকির টাকা ও অর্ধনগ্ন নাচগানের টিকেটের টাকা যোগাড় করতে এলাকার চুরি-ছিনতাই বেড়েছে এবং বাড়বেও বটে। সবমিলিয়ে এই অসামাজিক কার্যকলাপকে কেন্দ্র করে এলাকায় বিশৃংখল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে অর্ধনগ্ন নাচগান ও জুয়ার আসর শ্যামনগরের মাটিতে চলতে থাকলে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে পতিত হবে এমনটাই আশক্সক্ষা করছে সচেতন মহল ও সাধারণ অভিভাবকবৃন্দ। এ বিষয়ে সাতক্ষীলা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “আমি ইতিমধ্যে শ্যামনগরের ইউএনও-কে নিজে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এবং তাকে বলেছি কোন প্রকার অশ্লীল নৃত্য বা বেআইনি কিছু চললে তৎক্ষণাৎ মেলা বন্ধ করে দিতে।”