দেশের খবর: সারা দেশে নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে শুরু হচ্ছে সাঁড়াশি অভিযান। আগামী সপ্তাহের প্রথমদিকে এ অভিযান পরিচালনা করবে যৌথ বাহিনী।
এ অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে- সারা দেশে নির্বাচনী পরিবেশ নির্বিঘ্ন করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, পলাতক জঙ্গিদের গ্রেফতার, রাজনৈতিক ক্যাডারদের আধিপত্য দমন ও তালিকা অনুযায়ী নাশকতাকারীদের গ্রেফতার করা। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী গ্রুপের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ক্যাডারদেরও আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে যৌথ বাহিনী। পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার বলেন, যেখানে যে মাত্রার অভিযান প্রয়োজন, সেখানে তেমন অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেয়া আছে। নির্বাচনের পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে তথ্য বিনিময় করছে।
এতে যেখানে নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে তা প্রতিহত করতে কাজ করছে। সাঁড়াশি অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যে মাত্রার অভিযান প্রয়োজন তা চলমান আছে, তবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর অভিযানের ধরন বদলে যেতে পারে। সেটা পরিস্থিতি বলে দেবে।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই ভোট কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতে করণীয় ঠিক নির্ধারণে একটি খসড়া করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একটি ভোট কেন্দ্র থেকে অন্যটির দূরত্ব কত এবং কোন ভোট কেন্দ্রে কতসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য প্রয়োজন তার প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।
এ প্রতিবেদনের নিরিখে চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রে কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দেয়া হবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের তালিকা, কোন কোন কেন্দ্রে এর আগে বিশৃঙ্খলা হয়েছে তাও রিপোর্টে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক হামলা বা বিশৃঙ্খলাকারীর দলীয় পরিচয়সহ তালিকা করে পাঠাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন (সিএমপি) পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান রোববার বলেন, কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ চলছে। কোন কোন কেন্দ্রে কী ধরনের ঝুঁকি আছে তা এখন থেকেই রিপোর্ট আকারে প্রস্তুত করা হচ্ছে। যেহেতু সামনে নির্বাচন তাই সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা এসেছে।
তিনি বলেন, একটি কেন্দ্রে কী ধরনের ঝুঁকি এবং কারা হামলা বা বিশৃঙ্খলা করতে পারে সে বিষয়ে পরিপূর্ণ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পরই সাঁড়াশি অভিযানের প্রস্তুতি রয়েছে। এ কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপযুক্ত সময়ে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করবে।
পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের অপেক্ষায় আছেন তারা। তবে তাদের পূর্ণ প্রস্তুতি এখনই রয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর দেশের ভেতরে যাতে কোনো গোষ্ঠী অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুতি নিয়ে আছে।
এ কর্মকর্তা আরও জানান, দুই সপ্তাহ ধরে যে অভিযান অব্যাহত আছে; তাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সব রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশকে আগের চেয়ে সতর্ক প্রহরায় থাকতে নির্দেশনা রয়েছে।
এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ ধরনের নির্দেশনা এসেছে। বিশেষ কোনো গোষ্ঠী যেন আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তিনি আরও জানান, পুলিশ সদর দফতরে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে চলতি সপ্তাহে। এ বৈঠকের পরপরই পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে রেঞ্জের ডিআইজি, বিভিন্ন মেট্রোপলিটনের কমিশনার, জেলা এসপিসহ অপারেশনাল ইউনিটের দায়িত্বশীলদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকের পরই শুরু হবে যৌথ বাহিনীর অভিযান। ইতিমধ্যে এ অভিযানের একটি রূপরেখা প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য স্বাভাবিক অভিযানের বাইরে যৌথ বাহিনী লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান চালাবে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় এ সংক্রান্ত রিপোর্ট পুলিশ সদর দফতর হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র আরও জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশের সর্বত্র অভিযান চলছে। এ অভিযানের সঙ্গে যোগ হবে যৌথ বাহিনী, যার পরিধি বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন রকমের হবে। প্রতি বড় জেলায় যৌথ বাহিনীর সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জন সদস্য থাকবে।
ছোট আয়তনের জেলায় থাকবে ২০০ থেকে ২৫০ জন। আগের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহিংসতাকবলিত জেলা, সন্ত্রাসকবলিত জেলা ও সরকারবিরোধীদের নাশকতার জন্য টার্গেট করা জেলা হিসেবে ক্যাটাগরি করেছে। তবে এসব স্থান থেকে প্রতিদিনই সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিশৃঙ্খলার চেষ্টায় মদদদাতা হিসেবে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী রয়েছে গ্রেফতার তালিকায়।
সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা বিশৃঙ্খলা করতে পারে। এজন্য যৌথ বাহিনীর অভিযানে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বাছাই করা কর্মকর্তাদের নিয়োজিত করা হচ্ছে।
সরকারবিরোধী চক্রের লোকজন যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করে সরকারকে বিব্রত করতে না পারে সেজন্য প্রযুক্তিগত নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে র্যাবের গোয়েন্দারা এ ধরনের দু’জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। যারা সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে অপ্রপচারের ছক করেছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জানতে চাইলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ নির্বিঘ্ন রাখতে সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলছে।
একই সঙ্গে যারা নাশকতাকারী তাদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে যে ধরনের অভিযান প্রয়োজন তা চলছে। অপরদিকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, যে কোনো বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, অভিযানে দলীয় লোকের পরিচয় মুখ্য নয়, শাসক দল ও এর বিদ্রোহী গ্রুপের কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তাদের দমনেও কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের এডিশনাল ডিআইজি (ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গোয়েন্দারা মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। বিশেষ করে জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীরা কোনোভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছে কিনা, তারা কোনো সুযোগ নিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। তবে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে গোয়েন্দা রাডারে তাদের ধরা পড়তে হবে।