আজকের সেরা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন; আসন ভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রকাশ

By Daily Satkhira

October 12, 2018

দেশের খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসন ভিত্তিক ভোটর তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কশিমন (ইসি)। তালিকা অনুযায়ী মহিলা ভোটার থেকে পুরুষ ভোটার বেশি থাকছে এবার। অন্যদিকে আসন ভিত্তিক ভোটার তালিকায় গ্রাম থেকে শহরে কয়েক গুণ ভোটার বেশি হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনী সর্বোচ্চ ব্যয়ে কোন পরিবর্তন আসছে না।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন, মহিলা ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮০ জন। তবে তফসিল ঘোষণা আগ পর্যন্ত এ সংখ্যা অল্প কিছু বাড়তে পারে। তফসিলে ঘোষণার পর ভোটার হওয়ার সুযোগ থাকে না। এর আগে নতুন ভোটার হলে তা যোগ হয়।

সূত্র জানায়, ঝালকাঠী-১ আসনের ভোটার ১ লাখ ৮৯ হাজার, অপরদিকে ঢাকা-১৯ এ ৭ লাখ ৪৭ হাজার; অথচ উভয় আসনের প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয় ২৫ লাখ টাকা। অথচ ভোটার সংখ্যক ভোটার বড় ব্যবধান। এমন বাস্তাব প্রেক্ষাপট থাকলেও আগামী নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যয় মনিটরিং, কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ ও নির্ধারিত অঙ্কের বেশি টাকা ব্যয় বন্ধে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমনকি নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যয় নিয়ন্ত্রণে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) এর ৪৪ ধারায় নতুন বিধানের সংযোজনে ইসির আইন সংস্কার কমিটির সুপারিশ থাকলেও তা আমলে নেয়নি কমিশন। এমন পরিস্থিতিতে প্রার্থী ব্যয়ের হিসাব জমা দেবে সেটিই বিশ্বাস করতে হবে ইসিকে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ভোটার তালিকার সিডি মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কার্যালয় গুলোতে পাঠানো হয়েছে। এ তালিকা ধরেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মাঠ পর্যায়ে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেখানে দেখা গেছে, দুটি আসনে ভোটার সংখ্যা সাড়ে সাত লাখের কাছাকাছি। এছাড়া দুটি আসনে ছয় লাখের বেশি ও অন্তত ৮টি আসনে ৫ লাখ থেকে ছয় লাখ পর্যন্ত ভোটার রয়েছে। অপরদিকে চারটি আসনে ভোটার সংখ্যা দুই লাখের কম। চার লাখের বেশি ভোটার রয়েছে ৫০টি আসনে। বাকি আসনগুলোতে দুই থেকে তিন লাখের বেশি ভোটার রয়েছে।

আরও জানা গেছে, এ তালিকা তৈরির পর যারা ভোটার তালিকাভুক্ত হবেন অথবা ভোটার এলাকা পরিবর্তন করবেন, তাদের জন্য সম্পূরক ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে।

জানা গেছে, এবারের ভোটার তালিকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটার রয়েছে গাজীপুর-২ আসনে। এখানে ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪১জন। এছাড়া ছয় লাখের বেশি ভোটার রয়েছে গাজীপুর-১ (৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৪) ও নারায়ণগঞ্জ-৪ (৬ লাখ ৫১ হাজার ১২৩) আসনে। পাঁচ লাখের বেশি ভোটার রয়েছে- যশোর-৩ (৫ লাখ ২২ হাজার ৫৬১), ময়মনসিংহ-৪ (৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৬), ঢাকা-১৮ (৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭১৩), সিলেট-১ (৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (৫ লাখ ১৫ হাজার ১১জন), কুমিল্লা-১০ (৫ লাখ ১৬ হাজার ৩৯৪), নোয়াখালী-৪ (৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৯) ও চট্টগ্রাম- ১১ (৫ লাখ ৭ হাজার ৩৫৫) আসনে।

অপরদিকে চার লাখের বেশি ভোটার রয়েছে- ঠাকুরগাঁও-১ (৪ লাখ ২২ হাজার ১২৪), দিনাজপুর-৬ (৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৭২), রংপুর-৩ (৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭৩), রংপুর-৪ (৪ লাখ ১২ হাজার ৯৫৯), কুড়িগ্রাম-১ (৪ লাখ ৬১ হাজার ৪১৬), কুড়িগ্রাম-২ (৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৬), গাইবান্ধা-৩ (৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪২), বগুড়া-৫ (৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪৭) ও বগুড়া-৭ (৪ লাখ ৬১ হাজার ৪৭১)। আরও রয়েছে- চাপাইনবাবগঞ্জ-১ (৪ লাখ ১৬ হাজার ৫৪), নওগাঁ-১ (৪ লাখ ২ হাজার ৬০০), সিরাজগঞ্জ-৬ (৪ লাখ ১ হাজার ১৫৫), পাবনা-৩ (৪ লাখ ২ হাজার ৭৭৪), পাবনা-৫ (৪ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৫), চুয়াডাংগা-১ (৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭১), চুয়াডাংগা-২ (৪ লাখ ১৪ হাজার ৯৮৬), ঝিনাইদহ-২ (৪ লাখ ২৩ হাজার ৫২৩), যশোর-২ (৪ লাখ ৫ হাজার ৭৩৩), সাতক্ষীরা-১ (৪ লাখ ২৩ হাজার ৩২), বরগুনা-১ (৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৮২), পিরোজপুর-১ (৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৭৪), জামালপুর-৩ (৪ লাখ ২৪ হাজার ৯৫০), জামালপুর-৫ (৪ লাখ ৬৯ হাজার ৮১৮) ও ময়মনসিংহ-২ (৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬০)। এ তালিকায় আছে কিশোরগঞ্জ-১ (৪ লাখ ৩০ হাজার ৮৪), কিশোরগঞ্জ-২ (৪ লাখ ১৭ হাজার ২৬৫), মানিকগঞ্জ-২ (৪ লাখ ৬ হাজার ১৯৫), মুন্সীগঞ্জ-১ (৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৫০), মুন্সীগঞ্জ-৩ (৪ লাখ ১৬ হাজার ৫৪১), ঢাকা-১ (৪ লাখ ৪০ হাজার ৪০৭), ঢাকা-২ (৪ লাখ ৯৪ হাজার ৩১৩), ঢাকা-৫ (৪ লাখ ৫০ হাজার ৭২৫), ঢাকা-৯ (৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৭১), ঢাকা-১১ (৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৫৫), ঢাকা-১৪ (৪ লাখ ৬ হাজার ৫৩৪)। গাজীপুর-৩ (৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪৩), রাজবাড়ী-২ (৪ লাখ ৬২ হাজার ১৩৮), ফরিদপুর-১ (৪ লাখ ২২ হাজার ৬৮৫), সুনামগঞ্জ-৫ (৪ লাখ ১৫ হাজার ৮৮৫), হবিগঞ্জ-৪ (৪ লাখ ২৭ হাজার ৫২৫), কুমিল্লা-৬ (৪ লাখ ১৫ হাজার ৮০১), চট্টগ্রাম-৫ (৪ লাখ ৩০ হাজার ২৭), চট্টগ্রাম-৮ (৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৪৫), চট্টগ্রাম-১০ (৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৬), কক্সবাজার-৩ (৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৫), পার্বত্য খাগড়াছড়ি (৪ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৩) ও পার্বত্য রাংগামাটি (৪ লাখ ১৮ হাজার ২১৫)।

জানা গেছে, ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন মহল সংলাপে নির্বাচনে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা নানান ধরনের প্রস্তাবও দেন। ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারাও আরপিও সংশোধনের বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ওই সব প্রস্তাবের আলোকে ইসির আইন সংস্কার কমিটি আরপিওতে ৪৪বি(৬) ও ৪৪সি(৪) নামক দুটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করেন। ৪৪বি(৬) এ বলা হয়েছিল, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিটি আসনে একটি করে মনিটরিং কমিটি থাকবে। ওই কমিটি প্রার্থীদের ব্যয় মনিটর করবে।

এছাড়া প্রতি সপ্তাহ শেষে প্রার্থীরা ব্যয়ের রিপোর্ট দেবেন। ওই রিপোর্ট ও কমিটির পর্যবেক্ষণসহ তা ইসিতে পাঠাবেন। এছাড়া ৪৪সি(৪) এ নির্বাচনে অবৈধ টাকার প্রভাব রোধ, নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারিত টাকার মধ্যে রাখা এবং ব্যয় যথাযথভাবে করা হয়েছে কী না তা দেখার জন্য অডিট কমিটি গঠনের বিধান সংযোজনের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু কমিশন এসব প্রস্তাব আমলে না নিয়েই আরপিও সংশোধনের সুপারিশ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়।