দেশের খবর: এককভাবে নয়, ঐক্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দাবি আদায়ের আন্দোলনে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। তারা এখন অনেকটা ঐক্যের ওপর ভরসা করছেন। দলের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে তারা বলেন, বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের রাজপথ দখলের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিলো এখন তা ঐক্যের মাধ্যমে যৌথ কর্মসূচিতে আসবে। এটা দলের সিদ্ধান্ত এবং দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা। ইতিমধ্যে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার অভিন্ন দাবি, লক্ষ্য এবং কর্মসূচিতে একমত হয়ে আন্দোলন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিএনপি। এখন সমন্বিত কর্মসূচি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। গঠন করা হয়েছে বিএনপি ও অন্য দলগুলোর সমন্বয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি। যারা ৭ অক্টোবর ঘোষণা দেন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবেন। তারা ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে বৃহৎ ঐক্যের আত্মপ্রকাশ ঘটানোর প্রক্রিয়ায় আছে। ক্ষমতার ভারসাম্য এবং আসন বণ্টন- এই দুই ইস্যুতে গতকালও ঐক্যের নেতারা বৈঠক করেছেন। আজ ড. কামাল হোসেনের বাসায় বিকাল ৫টায় আবার বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। জানা গেছে, জোটের নতুন নাম দিয়ে শিগগিরই অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে সাত দফা দাবি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১. সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা; ২. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা; ৩. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নির্শ্চিত করা; ৪. শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল; ৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন; ৬. দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা এবং ৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেওয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বার্তা দিয়েছেন। এক নম্বর বার্তা হলো জাতীয় ঐক্যের পর আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে সরানোর পদক্ষেপ নেওয়া। বিএনপি এককভাবে আন্দোলনে যাবে না, ঐক্যের ব্যানারে রাজপথে নামবো আমরা সবাই। জাতীয় ঐক্য গঠন করে আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন নিশ্চিত করা হবে। কর্মসূচির ধরন কী হবে তা শিগগিরই নির্ধারণ করা হবে। আমরা অতি শিগগিরই ঐক্যের একটা রূপরেখা দেবো, জাতীয় ঐক্যের আন্দোলনের কাঠামো ঘোষণা করবো। খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৫টি মৌলিক দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এই দাবিগুলো আদায় করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করব।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা জনগণের দাবি আদায় করার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবো। অতীতে যেমন আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন প্রতিবার সফল হয়েছে, এবারো ইনশাআল্লাহ সফল হবে। জনগণের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরে আসবে। জনগণের বৃহত্তর ঐক্যের সামনে কোনো স্বৈরাচার সরকার টিকবে না।
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমাদের গতিপথ এখন আন্দোলনের দিকে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবো আমরা। আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জানিয়েছেন, চলমান ঐক্য প্রক্রিয়ার দাবি ও লক্ষ্যের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। অচিরেই আন্দোলনের অভিন্ন কর্মসূচি দেওয়া হবে। আজ শনিবার বৈঠকের পর এসব বিষয় পুরোপুরি চূড়ান্ত করা হবে। মান্না বলেন, বিএনপি-যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া অভিন্ন দাবি, লক্ষ্য এবং কর্মসূচিতে একমত হয়েছে।