অনলাইন ডেস্ক: ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের দাম সহনীয় রাখতে ‘এগ কমিশন’ গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পাশাপাশি নিরাপদ ডিম উৎপাদনে প্রান্তিক পর্যায়ে পোলট্রি ফার্ম উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, কৃষি রেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সিঙ্গেল ডিজিটে ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে ২০২১ সালের মধ্যে ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার। ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, ডিম খাওয়ার কোনো বয়স নেই। শিশু থেকে বৃদ্ধ- সবাই ডিম খেতে পারেন। নকল ডিম নিয়ে অনেকে দুশ্চিন্তা করেন। কিন্তু নকল ডিম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার যে লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী হাতে নিয়েছেন, সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে ডিমের মাথাপিছু ভোগ দ্বিগুণ করতে হবে। প্রতিটি মানুষকে দৈনিক অন্তত একটি করে ডিম খেতে হবে। কারণ সুস্থসবল মানুষ ছাড়া উন্নত দেশ গঠন সম্ভব নয়। আর সুস্থ থাকতে হলে ডিমের বিকল্প নেই।
বিপিআইসিসির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে জনগণকে জানাতে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে। যেহেতু ডিম ব্যবসার সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জড়িত এবং লাভও খুব সীমিত, তাই এ কাজে তথ্য মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সুস্থসবল জাতি গড়তে পুষ্টির বিকল্প নেই। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চারা যেন সপ্তাহে অন্তত দুটি ডিম খায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ডিমের ইতিবাচক প্রচারণায় চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ ও রন্ধনশিল্পীদের সহযোগিতা করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শওকত আলী ও বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন নাহার নাহিদ বলেন, ডিম নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান মতে, ডিম হার্টের জন্য উপকারী, ডিম খেয়ে ওজন কমানো যায়, ব্রেন ডেভেলপমেন্ট ও হাড় মজবুত করতে ডিম অত্যন্ত কার্যকর। ডায়াবেটিসের রোগীরাও ডিম খেতে পারবেন। অনেকে ডিমের কুসুম না খেয়ে সাদা অংশ খান। এতে তারা ডিমের পরিপূর্ণ পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এর আগে সকালে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি পল্টন মোড় ঘুরে সিরডাপ মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। এবারের বিশ্ব ডিম দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘প্রোটিন ফর লাইফ’। আর বাংলাদেশে স্লোগান হচ্ছে- ‘সুস্থ-সবল জাতি চাই, সব বয়সেই ডিম খাই।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে দেশের সব বিভাগীয় শহরে পোলট্রি শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। কিছু জেলা শহর ও উপজেলা সদরে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও পেশাজীবী সংগঠনের সহযোগিতায় ডিম দিবস উদযাপিত হয়। আর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, কারওয়ান বাজার, মিরপুর ও ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে ৩০ হাজার সিদ্ধ ডিম বিতরণ করা হয়েছে। এসওএস শিশু পল্লী, স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানা, ঢাকা অরফানেজ সোসাইটির শিশুদের জন্য ও প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সদস্যদের জন্য বিনামূল্যে ১৫ হাজার ডিম দেয়া হয়েছে।