এম. বেলাল হোসাইন: আগামী ২৮ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যানপদে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহম্মেদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মটর সাইকেল নিয়ে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের বারবার নির্বাচিত সদালাপী সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলাম। এদিকে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্র থেকে মুনসুর আহম্মেদকে দলীয় প্রার্থী করায় যার পর নেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকেই। সংশ্লি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় দু’টি পৌরসভা ও ৭৮টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। পৌরসভার মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য ও সদস্যরা এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। সে অনুযায়ী ভোটার তালিকায় এক হাজার ৫১ জন ভোটারের নাম রয়েছে। তবে শ্যামনগরের কৈখালি ও রমজাননগর ইউনিয়নে ভোটার তালিকা নিয়ে হাইকোর্টের একটি স্থগিতাদেশ শেষ পর্যন্ত এ নির্বাচনে কি প্রভাব ফেলবে তা নিশ্চিত করতে পারেনি জেলা নির্বাচন কমিশনার এইচএম কামরুল হাসান। তবে এ দু’টি ইউনিয়নে ভোট না হলে ২৬জন ভোটার কমে যাবে। পুরুষ সদস্য পদে ১৫টি পদের বিপরীতে ৭৫জন ও পাঁচজন নারী সদস্যের বিপরীতে ১৯জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। সকল মানুষের সঙ্গে সমান ব্যবহারকারি হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। দলীয় রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত সৎ লোক হিসেবে তিনি স্বীকৃত। তাছাড়া তার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে পাঁচ বছর কাজ করার সুবাদে অনিয়ম ও দুর্নীতির ইতিহাস কম। অপরদিকে বিগত পাঁচ বছর জেলা পরিষদের দায়িত্ব পালনকালে জেলা পরিষদের গাছ কেটে বিক্রি করে লুটপাট, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দুর্নীতিবাজ মাহাবুবর রহমানকে প্রাধান্য দিয়ে জলবায়ু ট্রাস্ট্রের গৃহনির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতিÑ এ নিয়ে হাইকোর্টে রিটকারিদের পক্ষে আইনজীবী অ্যাড. সত্যরঞ্জন ম-লের বাড়িতে হামলা চালানো, মাহাবুবর রহমানের বদলি বন্ধ করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা, জেলা পরিষদের জায়গা ইজারা দেওয়ার দুর্নীতি, পুকুর, খেয়াঘাট, এডিবি’র অর্থায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে সিডিউল বিক্রিতে অনিয়মসহ মন্দির, মসজিদ, ঈদগাহ ও শ্মশান সংস্কারের টাকা বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। যার দায় এড়ানোর সূযোগ নেই মুনসুর আহমেদের। এ ছাড়া গত ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ খ-ন করে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাময়াতী কানেকশনের অপপ্রচার চালিয়ে পার পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা কর্মী। তবে মুনসুর আহম্মেদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পারভেজ, সার্ভেয়র মিঠু, আবু তালেব, ছিদ্দিকুর রহমানসহ একটি মহল যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তা মুনসুর আহেম্মেদের জয় পরাজয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হক সরদার, ভোমরা ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম আমীর হামজা, বিষ্ণুপুর ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান, নিরঞ্জন কুমার পাল, শংকর কুমার দত্ত জানান, নজরুল ইসলামের মত ব্যক্তিত্বকে জেলা পরিষদে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। স্থানীয় যাঁচাই-বাছাই কমিটি বিগত পৌরসভা নির্বাচনে নজরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও কেন্দ্র শাহাদাৎ হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ায় তারা যার পরনাই ক্ষুব্ধ হন। তারা মনে করেনÑএরপরও আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনে যেভাবে নজুেল ইসলামকে বারবার মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না। তৃণমূল স্তর থেকে সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে বলা হলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের কোন মতামতের মূল্য না দেয়াটা যে কোন গণতান্ত্রিক সংগঠনের জন্য বিপদজনক। তারা আরো জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বড় উন্নয়নের জায়গা জেলা পরিষদ। এ জেলা পরিষদের আওতায় যে কাজ হয় তার স্বচ্ছতা না থাকলে উন্নয়ন কর্মকা- মুখ থুবড়ে পড়বে। তবে সাতক্ষীরার উন্নয়নে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমানের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আগামী নির্বাচনে নজরুল ইসলামের বিজয় হলে আলোচিত মাহবুবের পূর্বের সকল দুর্নীতির তদন্ত হবে বলে মনে করেন তারা। এ নির্বাচনে ভোটারদের নিয়ন্ত্রণ করতে অবৈধ লেনদেন না হলে ও প্রশাসনের ভূমিকা নিরপেক্ষ থাকলে বিপুল ভোটে নজরুল ইসলাম জয়ী হবেন বলে দাবি করেন তারা। এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদ জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাথে আছেন। দলের কাছে তিনি পরীক্ষিত নেতা। এজন্য নেত্রী তাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে মূল্যায়ন করেছেন। যারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভালো বাসেন, নৌকা প্রতীক ভালো বাসেন তারা সবাই নির্বাচনে তার সাথে আছেন। আর যিনি জননেত্রীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছেন নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকরা তার জবাব দেবেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটাররা যাকে ভালো মনে করবেন তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন এটাই নিয়ম। মানুষ জেলা পরিষদের সেবার মান দেখেছে। ভোটাররা সবসময় ভালো কিছু আশা করে। নতুন কিছুর প্রত্যাশায় ভোটাররা নির্বাচনে তাকে জয়ী করে নানা অনিয়ম ও অপ্রাপ্তি আর অপমানের জবাব দেবেন বলে তিনি মনে করেন। সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এইচএম কামরুল ইসলাম জানান, কৈখালি ও রমজাননগর ইউনিয়নে ভোট বন্ধ সংক্রান্ত হাইকের্টের আদেশ তারা পেয়েছেন। তবে বিষয়টি সম্পর্কে করণীয় জানতে তিনি ইতিমধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখেছেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যহত রাখা হয়েছে। এ নির্বাচনে ভোটারদের মতামতই প্রাধান্য পাবে। কোন অনিয়ম ও ত্রুটি চোখে পড়লে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন।