অনলাইন ডেস্ক: নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে চলছে বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যে এর ৬০ ভাগ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার দেশের বৃহত্তম এ প্রকল্পের নির্মাণ কর্মযজ্ঞ সরেজমিন পরিদর্শনে যাবেন। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া, শরিয়তপুরের জাজিরা ও মাদারিপুরের শিবচর এলাকায় গিয়ে পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন, ৬০ ভাগ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ঘোষণাসহ মোট চারটি বড় প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তিনি। সেতু বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগসহ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসব প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের মাওয়া টোলপ্লাজা সংলগ্ন গোলচত্বরে সুধী সমাবেশ ও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে জনসভায় ভাষণ দিবেন প্রধানমন্ত্রী।
সকাল সাড়ে ১০টায় হেলিকপ্টার যোগে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টায় মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন করবেন। মাওয়া প্রান্তে ৮ লেন মহাসড়কের ঢাকা-মাওয়া এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ, মূল নদীশাসন সংলগ্ন স্থায়ী নদীতীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। বেলা সোয়া ১১টায় পদ্মা সেতুর মাওয়া টোলপ্লাজা সংলগ্ন গোলচত্বরে সুধি সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী জাজিরা পয়েন্টে সেতুর কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন। বিকাল পৌনে ৩টায় শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর নামফলক উম্মোচন এবং ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী মাদারীপুরের শিবচর এলাকার কাঁঠালবাড়ীতে ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দিবেন। জানা গেছে, ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের’ আওতায় ঢাকার সাথে যশোরের রেল লিংক রোডের নির্মাণ কাজও উদ্বোধন হবে আজ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার জাজিরার নওয়াডবা এলাকা পরিদর্শনকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উভয় পাশে ৬০ ভাগ কাজের অগ্রগতির ফলক উন্মোচন করবেন। তিনি বলেন, সেতুর জাজিরা পয়েন্টে ৫টি এবং মাওয়া পয়েন্টে ১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। আরো ৫টি স্প্যান বসানোর কাজ চলছে। শুক্রবার স্প্যান বসার ফলে এখন মাওয়া প্রান্ত থেকে দেখা যাচ্ছে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটিতে ৪১টি স্প্যান বসবে। এর মধ্যে ১৪টি খুঁটি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। আর নদীতে ১৮০টি পাইল স্থাপন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন, পদ্মার নামেই সেতুর নামকরণ হবে।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তাই সময় বাড়ানো হয়েছে আরেক দফা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীতে দুটি নদী আনপ্রেডিকটেবল। এরমধ্যে একটি আমাজন ও অপরটি পদ্মা নদী। আমরা বারবার পিয়ারের ওপরে স্প্যান স্থাপন করতে গিয়ে রাখতে পারিনি। কারণ সয়েল কন্ডিশন অ্যালাও করেনি। এ কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। তারপরও আমি বলব পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। সেটাই আমাদের গর্বের বিষয়।’
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প: জানা গেছে, পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতির ঘোষণার দিন আজ ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম পর্যায়ে মাওয়া থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেললাইন জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন হয়ে বিদ্যমান ভাঙ্গা স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোর জেলা সংযুক্ত হবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ঢাকা হতে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, যশোর, খুলনা ও দর্শনার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত রুটে উন্নততর রেল যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। এ রুটে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্রডগেজ মালবাহী ও কন্টেইনার ট্রেন চলবে বলে জানিয়েছেন রেল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। ভবিষ্যতে এ রুটে দ্বিতীয় লাইন নির্মাণ এবং বরিশাল ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরকে এই রুটের সঙ্গে যুক্ত করারও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, চীনা জিটুজি পদ্ধতিতে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লি. নামক চীন সরকারের মনোনীত ঠিকাদার এই প্রকল্পের কাজ করছে। চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২ হাজার ৬৬৭ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রবর্তন হতে যাচ্ছে। সেটা হলো ২৩ কি.মি. এলিভেটেড ভায়াডাক্টে ব্যালাস্টবিহীন রেললাইন নির্মাণ।
প্রকল্পের ব্যয় আরো বেড়েছে: বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নানা জটিলতার পর নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে সরকার। ২০১৯ সালে এই সেতুতে যান চলাচলের আশা করা হচ্ছে। আরও জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে আরো দেড় হাজার কোটি টাকা। এই অঙ্ক নিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট নির্মাণ ব্যয় বেড়ে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরে এই অতিরিক্ত ব্যয় মূল প্রকল্পের সঙ্গে একীভূত হবে।