দেশের খবর: গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের চক্রান্তেই পদ্মা সেতুতে ঋণ দেওয়া থেকে বিশ্ব ব্যাংক পিছিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন। রবিবার (১৪ অক্টোবর) মুন্সীগঞ্জের মাওয়া টোলপ্লাজা সংলগ্ন গোলচত্বরে দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি এবং সেতুতে রেল সংযোগ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ আমরা পদ্মা সেতু প্রকল্প হাতে নিলে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এগিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু মানুষের কাছে ব্যক্তি স্বার্থটাই বড়। তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর থেকে ইউনূসের সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৮ সালে অর্থ সংকটে পড়লে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকটিকে চারশ’ কোটি টাকা দিই। গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে— ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন ব্যাংকটির এমডি পদে থাকতে পারবেন। কিন্তু ইউনূসের বয়স তখন ৭০। তখনও তিনি ব্যাংটির এমডি পদে থাকতে চান। ব্যাপারটি আদালত পর্যন্ত গড়ালো। কোর্ট থেকে বলে দিলো, আপনি আর এমডি থাকতে পারেন না। কিন্তু তিনি ক্ষেপে গেলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মানুষের জানা থাকা দরকার— বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আমাকে ফোন দিলেন। তিনি আমাকে বললেন— ‘ইউনূসকে এমডি রাখেন।’ কিন্তু আমি বললাম— আইন অনুযায়ী তিনি তো এমডি থাকতে পারেন না, আমি কী করবো। এর পর আরও বিভিন্ন মহল থেকে আমার কাছে ফোন আসতে থাকলো। তারা হুমকি দিতে থাকলো— ইউনূসকে এমডি পদ থেকে সরালে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ হবে।’’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ আইন অনুযায়ী ইউনূসকে এমডির পদ থেকে সরে যেতে হলো। এর পর আমাদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো। কিন্তু কোথায় দুর্নীতি হয়েছে আমরা তার প্রমাণ চাইলাম। তারা দু-একটি কাগজ নিয়ে আসে। সেসব তৎকালীন বিএনপি সরকারের মন্ত্রীদের কাজের কাগজপত্র। এরপর আমার ছেলে জয়, মেয়ে পুতুল ও বোন রেহেনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অনেককে নানাভাবে অপমান করা হলো। জয়কে আমেরিকায় বার বার ডাকা হয়েছে। জয় শুধু বলেছে, আপনারা প্রমাণ করে দেখান দুর্নীতি আছে কিনা। তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে দুর্নীতির কোনও প্রমাণ পাওয়া গেল না। পরবর্তীতে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম কারও সাহায্য নয়, আমাদের টাকায় আমরা পদ্মা সেতু করবো। আমি বিষয়টি পার্লামেন্টে ঘোষণা দিলাম। দেশের মানুষ সাড়া দিলো।আমরা দেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘একজন নোবেল লরিয়েট সামান্য একটি ব্যাংকের এমডি পদের লোভ ছাড়তে পারলেন না। পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র করলেন। এদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। যারা গরিবকে টাকা দিয়ে তার সুদের টাকায় বড়লোক হয়, তাদের মধ্যে কখনও দেশপ্রেম থাকতে পারে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘তাদের ধারণা ছিল, বিশ্বব্যাংকের টাকা ছাড়া আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পরবো না। কিন্তু দেশের জনগণের প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল। এই দেশের মানুষ সব ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে এগিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’’