নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা জেলায় আওয়ামী লীগের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা নজরুল ইসলামকে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-শিবির চক্র ও তাদের সহযোগীরা। সাতক্ষীরা-২(সাতক্ষীরা সদর) আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলাম যাতে দলীয় মনোনয়ন না পান, সেজন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে জামাত-বিএনপি। আর এজন্য পর্দার আড়ালে থেকে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার ও তার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া প্রতিপক্ষের কোটি পিছনে কোটি কোটি বিনিয়োগ করছে স্থানীয় জামাত-শিবির চক্র ও তাদের দোসর একটি প্রভাবশালী মহল। নজরুল ইসলামের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, সর্বমহলে তার গ্রহণযোগ্যতা এবং বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী আওয়ামী লীগ ক্রমান্বয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জামাত-বিএনপি। নজরুল ইসলামের মত সৎ, সদালাপী, জনপ্রিয় এবং স্বচ্ছ ইমেজের নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে সাতক্ষীরা জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনেক বেশি সংগঠিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত ভূমিকার কারণে ঘাপটি মেরে থাকা জামাত ভবিষ্যতে সাতক্ষীরার রাজনীতিতে গুরুত্ব হারাবেÑ এমন আশঙ্কায় আতঙ্কিত জামাত। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর খুনী চক্র সারাদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে জনবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। খন্দকার মোস্তাকের দোসররা সারাদেশে রাতারাতি ভোল পাল্টিয়ে ফেলে। সাতক্ষীরাতেও সেসময় আওয়ামী লীগকে কোনঠাসা করে ফেলে চক্রটি। সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া আওয়ামীলীগের সেই দুর্দিনে অনেকেই মাঠ ছেড়ে পালান। দীর্ঘদিন তারা সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ও জেলা শহরে আওয়ামী লীগের কোন মিছিল-মিটিং বা সাংগঠনিক কোন কার্যক্রমেই অংশ নেননি। আশাশুনি উপজেলা থেকে ফিংড়ী ইউনিয়ন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর তৎকালীন ফিংড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে দীর্ঘদিন আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নজরুল ইসলামকে প্রথমবারের মত সাতক্ষীরা-২ আসনে নৌকা প্রতীক দিয়ে মনোনয়ন দেন। স্বল্পতম সময়ে ব্যক্তিগত সততা, গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার কারণে নজরুল ইসলাম যখন নির্বাচনে জামাত ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। পরাজিত হলেও নজরুল ইসলাম কখনও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ত্যাগ করেননি তিনি ক্রমান্বয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের সকল স্তরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করায় মনোনিবেশ করেন। ফলশ্রতিতে ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সাতক্ষীরা-২ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলীয় কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে তিনি জেলার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫’র পর সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবিত করে নজরুল ইসলাম সকল উপজেলায় দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করেন। এবিষয়ে সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সায়ীদ বলেন, “সবাই জানে নজরুল ইসলামের সততা, দলীয় আনুগত্য ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে সাতক্ষীরায় তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা তার পিছনে ঐক্যবদ্ধ। আমরা চাই সৎ নেতা, মাঠে থাকা নেতা যেন দলীয় নৌকা পান। আর নজরুল ইসলামের চেয়ে জনপ্রিয় এবং কর্মীবান্ধব নেতা কে আছেন?” নজরুল ইসলাম ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পান কিন্তু শেষ মূহুর্তে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পালন করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। সাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই রাজনৈতিক নেতা ২০০৯ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাতক্ষীরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নজরুল ইসলাম। প্রতিযোগিতা পূর্ণ সেই নির্বাচনে তার বিপরীতে নিজেদের জেলা সেক্রটারি নুরুল হুদাকে মনোনয়ন দেয় জামাত। সঙ্গে ছিল বিএনপির সমর্থন। নির্বাচনে জামাত সেক্রেটারির ৬৩ হাজার ভোটের বিপরীতে আওয়ামীগ প্রার্থী নজরুল ইসলাম ১ লক্ষ ১৭ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তিনিই স্বাধীনতার পর সাতক্ষীরা সদর নির্বাচনী এলাকার প্রথম আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী যিনি সরাসরি নির্বাচনে জামাতের প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। এই নির্বাচনের পরই স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত বুঝতে পারে যে, নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরার রাজনীতিতে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ। তখন থেকেই তারা সুকৌশলে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার শুরু করে। জামাত বুঝতে পারে নজরুল ইসলামের জনপ্রিয়তার কাছে তাদের মৌলবাদী রাজনীতি টিকতে পারবে না। জনপ্রিয় নজরুল ইসলামকে ঠেকাতে মরিয়া জামাত তার ভাই হাবিবুর রহমানকে নিজেদের দলে ভেড়ায়। এবং তাকে দিয়ে নজরুল ইসলামকে কোনঠাসা করার মিশনে নামে। জামাতের এই চেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে। বর্তমানে মরিয়া জামাত-বিএনপি ও তাদের দোসররা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ব্যবহার করছে আওয়ামী লীগে তার মনোনয়ন ঠেকাতে। উল্লেখ্য, মো. নজরুল ইসলাম ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন করে কমনরুম সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার পিতা মরহুম আব্দুল জব্বার সরদার ফিংড়ীর নিজ বাড়িতে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন সময় অপারেশনে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত আশ্রয় ও সহায়তা দেয়ার কারণে তাকে যুদ্ধোত্তোর বাংলাদেশে ফিংড়ী রিলিফ কমিটির সদস্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তার আপন ভাই মরহুম অধ্যক্ষ নজিবুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তিনি সাতক্ষীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেও আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচিব লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, “সততা, আদর্শ এবং সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে সাতক্ষীরা সদর নির্বাচনী এলাকার সর্বস্তরের মানুষ নজরুল ইসলামকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান। আর এ কারণেই নজরুল ইসলামের পরিবর্তে যেন কোন জনবিচ্ছিন্ন প্রার্থী জামাতের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সেজন্য বিশেষ মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে জামাত-শিবির ও তাদের সহযোগীরা।” উল্লেখ্য, ২০০১ সালের পর জামাত-বিএনপি জোটের দুঃশাসনের সময় এবং ২০১৩ সালে জামাত-শিবিরের সহিংসতার সময়ও নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের নির্যাতিত ও নৃশংসতার শিকার নেতা-কর্মীদের পাশে সার্বক্ষণিক মাঠে ছিলেন। সদর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, “সাতক্ষীরার গণমানুষের নেতা নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের প্রাণ। আমাদের নেতা-কর্মীরা গর্বিতভাবে বলতে পারেন, “নজরুল ইসলামের মত পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ আমাদের নেতা।” তাদের নজরুল ইসলামের পরিচয় দিতে গিয়ে লজ্জ্বা পেতে হয় না। কিন্তু আমাদের কোন কোন নেতা আছেন যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উন্নয়ন প্রকল্প বিক্রি করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। আমরা তাদের চাই না। আমরা নজরুল ইসলামকেই চাই।”