দেশের খবর: এখনও তফসিল ঘোষণা হয়নি। তবুও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। সরকার বিরোধী জোটের নানা দাবি আর ক্ষমতাসীনদের পাল্টা যুক্তিতে সরগরম দেশের রাজনীতি। এ অবস্থায় ‘আতঙ্কিত’ সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চান। তারা কোনো সংঘাত চান না। রাজনৈতিক দলগুলোও জনগণের এই চাওয়াকে বিবেচনা করেই নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপিসহ বিরোধী জোট বলছে, এবার জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে তারা। তবে তাদের সেই বক্তব্যের পাত্তা দিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আন্দোলনের নামে যারা নৈরাজ্য করবে, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় সবকিছু করবে সরকার। অন্যদিকে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন। সরকারকে ‘অবৈধ’ অ্যাখা দিয়ে তারা বলেছেন, আর ছাড় নয়, এবার রাজপথ দখলের পালা। যেকোনো মূল্যে সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে। এদিকে নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিতে চলছে নতুন মেরুকরণ। কৌশলগত কারণে একটি জোট রেখে আরেকটি নতুন জোট গড়ে তুলেছে বিএনপি। ভোটের হিসাব-নিকাশ ও নিজ নিজ স্বার্থ থেকে বিএনপি এবং জামায়াত একে অপরকে ছাড়ে দেবে না, এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
ফলে ২০ দলীয় জোটের বাইরে নতুন ঐক্যের ক্ষেত্রে বিএনপি ভিন্ন কৌশল নিয়ে এগিয়েছে। জোটের অন্যদলগুলোকে না নিয়ে বিএনপি এককভাবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’ অংশ নিয়েছে। ফলে বিএনপি এখন দু’টি জোটেই থাকছে।
যদিও জাতীয় ঐক্যের উদ্যোক্তারা প্রথমে বলেছিলেন, সাম্প্রদায়িক দল ছাড়া সব গণতান্ত্রিক দলই তাদের সঙ্গে যোগ দেবে। বিশেষ করে জামায়াত। কিন্তু জামায়াত ওই জোটে আছে কিনা তা এখনও পরিষ্কার করে কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না ও সুলতান মনসুরও। এক সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছিলেন তারা। জেএসডি সভাপতি আ স ম রব স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী। ওই সময়ও তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
দলের একাধিক সূত্র বলছে, ডা. একিউএম বদরুদোজ্জার বিকল্পধারা বাংলাদেশকে নিয়ে জোটে সন্দেহের দানা বাধায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে না রাখার সিদ্ধান্ত নেন নতুন জোটটির শীর্ষ নেতারা।
যদিও ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সরাসরি সে রকম কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।তবে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বি চৌধুরী ও মাহি বি চৌধুরী দাবি করেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা চলছে। এমনকি মাহি এও বলেন, মান্না ও রবের বিয়ে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আর ড. কামালের সঙ্গে পরকীয়া রয়েছে।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা বলছেন, তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে ঐক্য গড়েছেন। এটা জনগণের দাবি। জনগণ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেই জন্য তাদের এ জোট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা এখনও আশাবাদী, সরকার আমাদের দাবি মেনে নিয়ে সকলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সরকারি দল বরাবরই বলে আসছে, দাবি মানা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে আপনারা কী করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা তো কোনো অন্যায় করি নাই, কেন আমাদের সঙ্গে বসবে না? আমরা এখনও আশা ছাড়িনি। আমরা মনে করি, ক্ষমতাসীন দলের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। তখনই আপনারা জানতে পারবেন সব কিছু। ‘জনগণ শান্তি চায়, আমরাও শান্তি চাই। আশা করি সরকার জনগণের মনের কথা বুঝে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেন, জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। দেশে তামাশার নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না। এমনটা হলে জনগণই তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।
যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির আন্দোলন করার কোনো শক্তি কিংবা সামর্থ্য নেই। যদি সেই সক্ষমতা থাকত তাহলে জনবিচ্ছন্ন ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের মতো লোকজনের সঙ্গে যুক্ত হতো না। ‘যতই তারা আন্দোলনের হুমকি দিক না কেন, তারা ব্যর্থ। কাজেই আমরা তাদের আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত নই।’ আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিএনপি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। এখন দেশে অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করে নির্বাচন বন্ধ করে চেষ্টা করছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদরে সকল অপতৎপরতা প্রতিহত করা হবে।