সাতক্ষীরা

সরকারি নির্দেশ উপেক্ষিত: বরখাস্তকৃত সাতানি কুশখালি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক উত্তোলন করছেন বেতন ভাতা!

By Daily Satkhira

December 26, 2016

আব্দুল জলিল: ৩ বছর ৭ মাস ১২ দিন অনুপস্থিত থেকে ও সাতানি কুশখালি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক অসিকুর রহমান চাকরিতে বহাল  আছেন। তবে কিভাবে বহাল আছেন তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি মাদ্রাসা সুপার, সাবেক ও বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতিগণ। পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, মাদ্রাসা সুপার সরকারি নিয়ম নীতির প্রতি তোয়াক্কা না করে তার ভাইকে আজও স্বপদে রেখে বেতন উত্তোলন করছেন। সম্প্রতি এব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য কুরবান আলি। খোজখবর নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সালের জনুয়ারি মাসের ১ তারিখে সাতানি কুশখালি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক অসিকুর রহমান কাজ করার জন্য বৈধভাবে সৌদি আরব যান। তিনি সেখানে ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ করেন। তার অনুপস্থিতিতে চাকরি হতে অপসারণ সংক্রান্ত কাগজপত্র ২০০৮ সালের ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আপিল এ্যান্ড আরবিট্রেশন কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়। সভায় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অপসারণ প্রক্রিয়া সঠিক বিবেচিত হওয়ায় সর্ব সম্মিতিক্রমে চাকরি থেকে অপসারণের অনুমোদনের সুপারিস করা হয়। সাথে সাথে তার সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন সময়ের প্রাপ্য ভাতা পরিশোধসহ বরখাস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার প্রফেসার ড. মো: হাফিজুর রহমান মাদ্রাসা সুপার বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করেন। যার ফলে ২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মাওলানা ওসিকুর রহমানকে স্থাযী ভাবে বরখাস্ত করা হয়। মজার ব্যাপার হল মাদ্রাসা সুপার বরখাস্তের কোন কাগজপত্র মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাঠাননি। উল্টো নতুন করে রেজুলেশন তৈরি করে পুনরায় ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি তাকে স্বপদে বহাল করেন। মাদ্রাসা সুপার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একের পর এক মন গড়া রেজুলেশন তৈরি করে চাচাত ভাই ওসিকুর রহমানের চাকরিতে বহাল রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ওসিকুর রহমানকে কাগজ পত্র বৈধ করার জন্য সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি চাকরিতে বহাল করার বৈধ কোন কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি। নিয়ম অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ২ বছরের বেশি রকè শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলে তিনি স্থায়ীভাবে চাকরি হারাবেন। অথচ অসিকুর রহমান ৩ বছর ৭ মাস ১২ দিন কর্তৃক্ষের বিনা অনুমতিতে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হওয়ার পরও কোন শক্তির বলে অসিকুর রহমান স্বপদে বহাল আছেন এবং সুপার কোন ক্ষমতা বলে বরখাস্তের কাগজপত্র বোর্ডে পাঠাননি এই বিষয়টি অভিভাবক, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ও সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। শিক্ষক অসিকুর রহমান জানান, নিয়ম আছে সরকারি শিক্ষকরা ২ বছর আর বেসরকারি শিক্ষরা ৫ বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকতে পারেন। সে কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে স্বপদে বহাল রেখেছেন। তিনি যতদিন অনুপস্থিত ছিলেন ততদিন পর্যন্ত বেতন ভাতা গ্রহণ করেননি। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য জাকির হোসেন ও কুরবান আলি জানান, শুনেছি মেডিকেল দেখিয়ে অসিকুর রহমানকে চাকরিতে বহাল করেছে। সুপার নিজে রেজুলেশন করে তাদের নিকট থেকে স্বাক্ষর করে নেন। সাতানি কুশখালী দাখিল মাদ্রাসার সুপার নজরুল ইসলাম জানান,  মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আবু রায়হান ও সদস্য কুরবান আলি ক্ষমতা প্রয়োগ করে অসিকুর রহমানকে মাদ্রাসায় স্বপদে বহাল রাখতে বাধ্য করেছিলেন। সে কারনে অসিকুর রহমান আজও চাকরিতে বহাল আছে। সাবেক সভাপতি তাকে কাগজপত্র বোর্ডে পাঠাতে দেননি। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আবু রায়হান জানান,  আরপিটিশন বোর্ড অসিকুর রহমানকে সাসপেন্ড করার অডার দেয়। এসব কাগজপত্র গোপন করে রাখেন সুপার। তারা যখন জানতে পারেন তখন ব্যবস্থা নিতে চাইলে সুপার মিটিং না দিয়ে রেজুলেশন কাগজে সহি করে নেয়। এর পর তারা আর মিটিং করতে পারিনি। ক্ষমতা থেকে তারা সরে এসেছেন। তিনি বলেন নতুন কমিটি এর ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন দুনীতি গ্রস্থ সুপার নিজে যা ইচ্ছা তাই করে। তবে তিনি জানান সভাপতি থাকাকালীন সময় পর্যন্ত (এক বছর আগে) অসিকুর রহমান কোন বৈধ কাগজ পত্র দেখাতে পারেননি। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম মোরশেদ জানান, তিনি মাত্র কয়েক মাস সভাপতি হয়েছেন। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার পরও কিভাবে অসিকুর রহমান স্বপদে বহাল আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর জবাব দিতে পারবে সরকার ও সাবেক সভাপতি। কোন ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব দেননি। সাতক্ষীরা জেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সম্প্রতি তিনি একটি অভিযোগ পেয়েছেন। সরেজমিনে তদন্ত করবেন। তিনি আরো বলেন, আরবিট্রেশন বোর্ড যদি কাউকে বরখাস্ত করে এবং তিনি যদি কোর্টে কোন মামলা না করেন তবে তার যোগদান আইনসম্মত হয় না। তবে কমিটি যদি তাকে ছুটি দিয়ে থাকে এবং ছুটি নিয়ে তিনি যদি যান এবং ২ বছরের বেশি অবস্থান করেন তবে সেটি ব্রেক অব সার্ভিস হিসেবে গণ্য হবে।