বিদেশের খবর: রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনে ফেসবুকে প্রতিনিয়ত উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণা চালাতে ৭০০ কর্মীকে নিয়োগ দিয়েছিল তারা। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত ১৩টি পেজ ও ১০টি অ্যাকাউন্ট শনাক্ত এবং তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রোহিঙ্গা নিধনকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের সাবেক সেনা কর্মকর্তা, গবেষক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুক ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালানো রোহিঙ্গাবিরোধী বিভিন্ন ভুয়া প্রচারণা তাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনে উসকানি দিয়েছে। আর এ ভুয়া প্রচারণাগুলো চালিয়েছে খোদ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ফেসবুকে বিনোদনমূলক ও তথ্যমূলক পেজের ছদ্মবেশে বিদ্বেষ ছড়ায় তারা। সূত্রকে উদ্ধৃত করে ফেসবুক জানায়, কয়েক বছর আগে থেকে ফেসবুকে এ ধরনের প্রচারণা শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আর এর জন্য ৭০০ মানুষকে নিয়োগও দেয়া হয়েছিল। এসব পেজে দেয়া একটি পোস্টে লেখা হয়েছে- ‘ইসলাম বৌদ্ধ ধর্মের জন্য বৈশ্বিক হুমকি’। তাছাড়া এক মুসলিম পুরুষ কর্তৃক এক বৌদ্ধ নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার বানোয়াট গল্পও সেখানে শেয়ার করতে দেখা গেছে। এমন অনেক বিদ্বেষমূলক পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে এসব পেজে। এসব বিদ্বেষমূলক পোস্ট ও উসকানিদাতা পেজের সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সংযোগ থাকার প্রমাণ পেয়েছে ফেসবুকও। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, ভুয়া প্রচারণায় জড়িত ১৩টি পেজ ও ১০টি অ্যাকাউন্ট সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ওই পেজগুলোর ১৩ লাখ ৫০ হাজার অনুসারী ছিল বলে জানিয়েছে ফেসবুক। ফেসবুকের একটি ব্লগ পোস্টে বলা হয়, তারকা কিংবা বিনোদনমূলক অ্যাকাউন্টের আড়ালে সেনাবাহিনীর প্রোপাগান্ডা ছড়াতে ব্যবহৃত হয় এমন পেজগুলো সম্পর্কে তথ্য জানানোর কারণে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। এর সহায়তায় আমরা তদন্ত চালাতে পেরেছি এবং তা সরানো সম্ভব হয়েছে।’ এর আগে আগস্টে মিয়ানমার সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাংকে নিষিদ্ধ করে ফেসবুক। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকটের জন্য তাকে দায়ী করার পর এমন ব্যবস্থা নেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। সেনাপ্রধান ছাড়া আরও ২০ জন বার্মিজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করে তারা। উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকার নৃগোষ্ঠীভিত্তিক নতুন নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করে।
বিতর্কিত ওই বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। আইনের ৪ নম্বর ধারায় শর্ত দেয়া হয়, কোনো জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কি না তা নির্ধারণ করবে সরকারের নীতিনির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। বস্তুত এ আইনটির কারণেই রাখাইনে মিয়ানমার সরকারের বিদ্বেষের শিকার রোহিঙ্গারা।