নিজস্ব প্রতিবেদক: বুধবার ২৮ ডিসেম্বর সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আর এই নির্বাচনে সাতক্ষীরায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। সভাপতি দলীয় আ’লীগ মনোনিত আর সাধারন সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী। ফলে সাতক্ষীরায় জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে এক ভিন্ন আমেজ। জনগণের ভোটে জিতে এই প্রথম বারের মত আবার নিজে ভোট দিয়ে অন্য কাউকে বিজীয় করতে উন্মুখ হয়ে আছেন ভোটাররা। তাই জনপ্রতিনিধি ভোটাররা কাকে ভোট দিবেন এবং কে পরবে বিজয়ের মালা তা দেখতে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেলেও প্রচারে জেলা আ’লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদের চেয়ে বেশ এগিয়ে আছেন সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম। সভাপতি লড়ছেন আনারস প্রতিক নিয়ে আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লড়ছেন মটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে।দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার মনোনিত প্রার্থীকে উপেক্ষা করে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তার দিকে বাকা চোখে দেখছেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী পোড় খাওয়া নেতারা। অপরদিকে তৃণমুল নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন না করে কেন্দ্র মুনসুর আহমেদকে দলীয় প্রার্থী করায় যার পর নেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকেই। ফলে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইকালে স্বজনপ্রীতির অভিযোগে কিছু কিছু এলাকার চেয়ারম্যানদের কাছে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন মুনসুর আহমদ। নানাবিধ কারনে অনেক ভোটার জনপ্রতিনিধি তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন দলীয় সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম। বি˜্রােহী প্রার্থী হওয়ায় মুনসুর আহম্মেদের উপর ক্ষুব্ধ চেয়ারম্যান-মেম্বররা নজরুল ইসলামের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। সেকারণে স্বাভাবিক ভাবে বেকায়দায় আছেন দলীয় সভাপতি ও শেখ হাসিনা মনোনিত প্রার্থী মুনসুর আহমেদ। এদিকে, সাধারন সম্পাদক নজরুল সমর্থক জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হুসাইন সুজন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এহসান হাবীব অয়ন ও পৌর যুবলীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন অনু বলছেন আরেক কথা, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে চায়না জনগন। তৃণমূলের চাপে নজরুল ইসলামকে ভোটে দাড়াতে হয়েছে। জেলার অধিকাংশ ভোটারদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেকারনে নির্বাচনে তিনি অনেক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবেন। তারা আরো বলেন, যেখানে যাচ্ছি সেখানে দেখছি নজরুল ইসলামের জয়জয়াকার। নজরুল ইসলামের মত ব্যক্তিত্বকে জেলা পরিষদে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তিনি জিতলে দল তার ইমেজ ফিরে পাবে।জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, জেলা পরিষদের আওতায় যেসব উন্নয়নমূলক কাজ হয় তার স্বচ্ছতা না থাকলে উন্নয়ন কর্মকান্ড মুখ থুবড়ে পড়বে। তবে সাতক্ষীরার উন্নয়নে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমনানের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি সম্পূর্ন মুনসুর সাহেবের শেল্টারে চলেন। তার প্রশ্রয়ে বিভিন্ন অনিয়ম করেছেন। যে কারনে মাহবুবুর রহমানের অবৈধ কর্মকান্ডে সাতক্ষীরায় আ’লীগ সরকারের ভাবমূর্তি দারুনভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। আগামি নির্বাচনে নজরুল ইসলাম জয়লাভ করলে তাকে অন্যত্র বদলী ও পূর্বের দূর্ণীতির সকল তদন্ত হবে বলে মনে করেন তিনি। এ নির্বাচনে ভোটারদের নিয়ন্ত্রণ করতে অবৈধ লেনদেন না হলে ও প্রশাসনের ভূমিকা নিরপেক্ষ থাকলে ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে নজরুল ইসলাম জয়ী হবেন বলে মনে করেন তিনি।পৌর যুবলীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন অনু বলেন, তাঁর (নজরুল ইসলাম) বিজয়ের সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে মুনসুর আহমেদ ও তার লোকজন বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন এবং বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা সাধারণ ভোটার-সমর্থকদের সমর্থন পেতে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এমনকি তিনি সাধারণ ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তার পরও ভোটাররা নজরুল ইসলামের সাথে রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।মুনসুনর আহমদে সমার্থক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মতিয়ার রহমান খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইদ উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ ও দপ্তর সম্পাদক হারুন উর রশীদসহ বেশ কয়েকজন নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তিনি দলের সিদ্ধান্ত মানেন না এজন্য আমরা তার বহিস্কার দাবী করছি। এদিকে, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও সদ্য বিদায়ী জেলা পরিষদের প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদ তার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর শ্যামনগর উপজেলায় আমার নির্বাচনী প্রতিক আনারসের পোস্টার ও হ্যান্ডবিল ছিড়ে ফেলা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদে আনারস প্রতিকের প্রচারকার্য চালানোর সময় শ্যামনগরের ছাত্রলীগের কর্মী মোজায়দুল ইসলামকে মারধর করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলামের নির্বাচনীকর্মী সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হুসাইন সুজন ও সাধারণ সম্পাদক এহসান হাবিব অয়ন ও শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজুর রহমানসহ অজ্ঞাত নামা ৭/৮ জন। এসময় তারা আনারস প্রতিক সম্বলিত পোস্টার ছিড়ে ফেলে ও তার কাছে নির্বাচনী খরচের তিন হাজার টাকা ছিনতাই করে নেয়। তিনি এসব ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবি জানান।তিনি আরো বলেন, দেশের উন্নয়নে বর্তমান সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। এসব কারণে ভোটাররা আমাকেই নির্বাচিত করবেন। যারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভালো বাসেন, নৌকা প্রতীক ভালো বাসেন তারা সবাই নির্বাচনে তার সাথে আছেন। যারা দলীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছে ভোটের মাধ্যমে তাদের জবাব দেওয়া হবে।জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিদ্রোহী চেয়াম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটাররা যাকে ভালো মনে করবেন তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন এটাই নিয়ম। মানুষ জেলা পরিষদের সেবা দেখেছে। ভোটাররা সবসময় ভালো কিছু আশা করে। ভোটারা আমার বিগত উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম দেখেছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ার কারণে উচ্চ আদালত কর্তৃক তাকে (মুনসুর আহমেদ) ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। নির্বাচিত হলে আমি সাতক্ষীরা উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দেব। সাতক্ষীরার প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা এইচএম কামরুল ইসলাম জানান, কৈখালি ও রমজাননগর ইউনিয়নে ভোট বন্ধ সংক্রন্ত হাইকের্টের আদেশ তারা পেয়েছেন। তবে বিষয়টি সম্পর্কে করণীয় জানতে তিনি ইতিমধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখেছেন।অপরদিকে, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করতে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে পাশাপাশি কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ভোটের মাঠে থাকবেন। আইন শৃংঙ্খলার ব্যাপারে আমরা কঠোর হবো। সে যেই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। উল্লেখ্য ঃ বুধবার ২৮ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা জেলার ৭৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভাকে ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে বিভক্ত করে সীমান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৫টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার ৩টি পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১০০ জন। চেয়ারম্যান পদে ২জন, পুরুষ সদস্য পদে ৭৯ জন এবং সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্য পদে ১৯ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। সাতক্ষীরা জেলার ১০৫১ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮০৬ জন এবং নারী ভোটার ২৪৫ জন।