অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় গত ১৬ অক্টোবর। এতে পাস করেছে ২৬.২১%। তবে ভর্তি পরীক্ষার আগে বৃহস্পতিবার রাতে এই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। এদিকে, ফল প্রকাশের পরই প্রশ্ন ফাঁসের দাবি আরও জোরালো হয়। কেননা, প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের মধ্যেই এ ইউনিটে রেকর্ড নম্বর পেয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছেন তাসনিম বিন আলম ও জিহাদ হাসান আকাশ নামে দুই ছাত্র।
অবাক করার বিষয় হল, জিহাদ নিজের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিট ও তাসনিম বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটে ফেল করেছিলেন। জিহাদ ‘গ’ ইউনিটে পেয়েছেন ৩৪ দশমিক ৩২ নম্বর। বাংলায় পেয়েছিলেন ১০.৮ ইংরেজিতে পেয়েছিলেন ২.৪০, হিসাব বিজ্ঞানে ৫ দশমিক ২৮, ব্যবসায় নীতিতে ৬ দশমিক ৭২ এবং ফিন্যান্সে ৯ দশমিক ৮৪। অথচ সে ‘ঘ’ ইউনিটে পেয়েছেন ১২০ নম্বরে পেয়েছেন ১১৪ দশমিক ৩০। বাংলায় ৩০-এর মধ্যে ৩০, ইংরেজিতে ৩০-এর মধ্যে ২৭.৩০, সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২৮ দশমিক ৩০ এবং আন্তর্জাতিকে ২৫ দশমিক ৫০।
অন্যদিকে, তাসনিম বিন আলম বিজ্ঞান শাখার তার নিজের অনুষদ ক ইউনিটের পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে ৪৩.৭৫ পেয়ে ফেল করেছিলেন। পরে ‘ঘ’ ইউনিটে ১২০ নম্বরের মধ্যে ১০৯.৫০ পেয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকার বিজ্ঞান শাখায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। আর যে কারণে প্রশ্ন পত্র ফাঁসের বিষয়টি সবার নজরে এসেছে।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ‘ঘ’ ইউনিটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, কেবল ফল প্রকাশ হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীরা এলে তাদের বিষয়ে তদন্ত ও যাচাই শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কারও মেধা নিয়ে আমরা প্রশ্ন করতে পারি না। তবে কাউকে সন্দেহ হলে ডিন তাদের ব্যাপারে পুনরায় যাচাই করতে পারেন।
এদিকে, মিডিয়ায় যখন ওই দুই শিক্ষার্থীর রেকর্ড করা রেজাল্ট নিয়ে লেখা লেখি হচ্ছে তখনি বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম স্থান অধিকার করা শিক্ষার্থী তাসনীম বিন আলম।
বিষয়টি নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বছরের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১০৯.৫ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকারী। কিন্তু আমি ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪৩.৭৫ নম্বর পেয়েছিলাম।’
তিনি জানান, ‘কলেজের প্রথম বর্ষ থেকেই আমার ‘ঘ’ ইউনিটে ইকোনমিকস নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরের পুরোটা সময় আমি ‘ঘ’ ইউনিটের জন্যই প্রস্তুতি নিয়েছি। সেই সময়ে এমনকি ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষার আগমুহূর্তেও আমি বিজ্ঞান বিভাগের কোন বই পড়িনি। ‘ক’ ইউনিটের ফরম আমি তুলেছিলাম মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার একটা প্র্যাকটিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স অর্জনের জন্য, যাতে করে ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় আমার নার্ভাসনেস কাজ না করে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও বিজ্ঞান-সম্পর্কিত ইউনিটের ফরম তুলিনি।’
তাসনীম আলম বলেন, ‘আমি একটি বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় আমি চতুর্থ বিষয় জীববিজ্ঞানের বদলে বাংলা উত্তর করি এবং যেখানে আমার মোট নম্বর ছিল ৪৩.৭৫। সেখানে বাংলাতেই আমি পেয়েছিলাম ২১.৭৫ নম্বর। কেননা আমি ‘ঘ’ ইউনিটের প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম এবং বাংলা তুলনামূলকভাবে ভালো পড়া ছিল।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়ও আমি ছেলেদের মধ্যে পঞ্চম স্থান অর্জন করি। সেখানে এই ইউনিটেও ইকোনমিকস আছে, যে বিষয়ে আমার পড়ার ইচ্ছা। তবে আমি জাহাঙ্গীরনগরে হয়ে যাওয়া বিজ্ঞান-সম্পর্কিত অন্যান্য অনুষদের ফরম আমি তুলিনি, পরীক্ষা দিইনি।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমার ‘ক’ ইউনিটে ফেল করেও ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।’
‘বিষয়টি নিয়ে আমি বলতে চাই, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকে আমি শুধু ‘ঘ’ ইউনিটের প্রস্তুতিই নিয়েছি। ‘ক’ ইউনিটের জন্য তিলমাত্র প্রস্তুতি নিইনি। তাই ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় খারাপ করলেও, আমি ‘ঘ’ ইউনিটে ভালো ফলাফল পেয়েছি।’ তাসনীম আলম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আমার বাংলায় ৩০-এ ২১.৭৫ পাওয়া, আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষায় পঞ্চম হওয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান-সম্পর্কিত অনুষদের ফরম না তোলা আমার ‘ঘ’ ইউনিটের প্রস্তুতি এবং তাতে ভালো করার পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন দেয়।’