আসাদুজ্জামান: বিক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ থেকে দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক, লম্পট প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানকে পিটিয়ে ও গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতা এ সময় তাকে দিয়ে জেলা পরিষদের পুকুর ঘাট ও একাধিক কক্ষ ঝাড়– দিয়ে তা পরিষ্কার করতে বাধ্য করান। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে পাঁচ শতাধিক নারী পুরুষ দলবদ্ধ হয়ে জেলা পরিষদ ঘিরে ফেলে তাকে কক্ষ থেকে টেনে বের করে আনেন। এ সময় তারা তাকে দিয়ে জেলা পরিষদের গেট খুলিয়ে ঝাড়– দিয়ে নেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তার ওপর হামলার ঘটনা স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেনÑ বিনা অপরাধে তার ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে। মাহবুবুর রহমানের ওপর হামলার কারণ হিসাবে রসুলপুর গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, তিনি বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জেলা পরিষদের পুকুর বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে তিনি চরম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি জেলা পরিষদের পুকুরের ঘাট ভেঙে দিয়ে জনগণের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করেছেন। এসব কারণে তারা তার ওপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন। জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নান তার নেতৃত্বে মাহবুবুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার কথা অস্বীকার করে বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা মাহবুবুর রহমানের কাছে প্রাপ্য টাকা দাবি করেন। তারা তাকে এ সময় ঘর থেকে বের করে আনেন এবং কিল, চড়, ঘুষি মেরে তারা তাকে জেলা পরিষদ চত্বর থেকে বের করে দেন। আব্দুল মান্নানসহ এলাকাবাসীরা জানান, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদকে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তার একক কর্তৃত্বের আওতায় নিয়ে ব্যবহার করেন। ১৯৯০ সালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি হিসাবে জেলা পরিষদে যোগদান করেন মাহবুবুর রহমান। ২৬ বছর পর এখন তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ তাকে বদলি করার ক্ষমতা রাখেন না বলে তিনি প্রায়ই আস্ফালন করে থাকেন। এর মধ্যে তিনি পঞ্চগড় ও জামালপুরে পরপর দুইবার বদলি হলেও সেখানে বেশি সময় তাকে থাকতে হয়নি। আবারও তিনি ফিরে এসেছেন নিজ জেলা সাতক্ষীরায়। তিনি তার সময়কার প্রশাসক এবং প্রধান নির্বাহীদের দুর্নীতির মুখে ঠেলে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মসজিদ মাদ্রাসা স্কুল কলেজ উন্নয়নের নাম করে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করেন। নদীর ঘাট উন্নয়ন ও ইজারার নামে একইভাবে টাকা আদায় করে থাকেন। এদিকে এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করেন, মাহবুব সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের এক নারীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এতে তার স্ত্রী অপমানিত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মাহবুবুর রহমান জলবায়ূ ট্রাস্ট খাতে পাওয়া টাকা নয় ছয় করেছেন এবং গৃহ পাবার যোগ্য নন এমন অনেক গৃহস্থকে এই ফান্ডের টাকার বিনিময়ে পাকা দালান বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে সাতক্ষীরায় মামলাও হয়েছে। এই মামলা পরিচালনাকারী একজন আইনজীবীকে মারধর এবং তার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটানোরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি টেন্ডারের সময় মাহবুবুর রহমানকে নগদ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এ কারণে তিনি মি. টুয়েন্টি পার্সেন্ট হিসাবে পরিচিত হয়েছেন। তিনি তার প্রয়াত বাবা আবদুর রউফের নামে প্রায় এক ডজন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সেসব প্রতিষ্ঠানে জেলা পরিষদের টাকা বেআইনিভাবে ব্যবহার করেছেন। মাহবুব এখন অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার ও তার পরিবারের সদস্যের নামে ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা রয়েছে। দুদক তদন্ত করলে আরও অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসবে বলে অভিযোগ করেন তারা। চাকুরিকালে তিনি তার অনেক স্বজনকে জেলা পরিষদে চাকুরিও দিয়েছেন। গ্রামবাসীরা আরো বলেন, তিনি ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি শেষে এখন অন্যত্র বদলি হয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন। এজন্য গ্রামবাসীরা এই হামলা চালান। এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা তার ওপর হামলা করেছে। তারা তাকে অপমান করে বের করে দিয়েছেন। কোনো দুর্নীতির সাথে তিনি জড়িত নন দাবি করে আরো বলেন, নির্বাচনে তিনি একটি পক্ষ গ্রহণ করায় জনতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিষয়টি তিনি সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন বলে জানান। এদিকে, হামলার খবর পেয়ে জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম অফিস পরিদর্শনে যান। তিনি এসময় প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানকে দুর্নীতিমুক্ত হবার আহবান জানান। প্রসঙ্গত, জেলা পরিষদ নির্বাচনে মাহবুবুর রহমান একটি পক্ষ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর নির্বাচনে বিজয়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলামের জয়ে আনন্দিত হয়ে তারা মাহবুবকে পরিষদ থেকে কিল চড় ঘুষি মেরে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। এর আগে তারা তাকে দিয়ে কক্ষ ঝাড়– দিয়ে নেন।