নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ দূর্ণীতির মাধ্যমে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়ে বদহজম হওয়া টাকা ফেরৎ দিলেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের দূর্ণীতিবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমান ও সদস্য আশাশুনির মহিতুর রহমান। এরপরও শেষ চেষ্টা করে বদলী রদ করতে পারলেন না এসএম মাহাবুবর রহমান। গত ২৩ অক্টোবর স্থানীয় সরকার সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. জুলিয়া মঈন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বুধবার তাকে খুলনা জেলা পরিষদে বদলী করা হয়। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য মাহাফুজুর রহমান রুবি খাতুন, মনিরুল ইসলাম ও আল ফেরদৌস আলফা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ হয়েও নিয়ম বহির্ভুতভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ২০০১ সালে এসএম মাহাবুবর রহমানের ষাটলিপিকার থেকে পদোন্নতি পান। এডিপি’র টাকা রাজস্ব খাতে নিয়ে যেয়ে বাবার নামীয় আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার নামে খরচ করা, খেয়াঘাটের ইজারার টাকা লুটপাট, বিভিন্ন প্রকল্প পাশ করানোর নামে আর্থিক সুবিধা নেওয়া, বাস্তবতা বহির্ভুতভাবে আব্দুর রউফ কমপ্লেক্সে ও এতিমখানায় জেলা পরিষদ এবং সমবায়ের টাকা অপচয়, বদলী রুখতে তিন তিনটি রিট পিটিশন খারিজ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন দূর্ণীতির কারণে এসএম মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাকে বদলীর বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রায় সকল সদস্য সোচ্চার হন। তাকে বদলীর জন্য গত ৩০ আগষ্ট ২০তম সাধারণ সভায় ১৬ জন্য সদস্য স্বাক্ষর করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে এসএম মাহাবুবর রহমান রেজুলেশনে সাক্ষর করেন। ৩১ সেপ্টেম্বর ২০তম সভার সকল সিদ্ধান্ত দৃঢ়করণ হয়। তবে বিবিধ আলোচনায় কয়েকজন সদস্য তাকে রাখার জন্য সভায় মন্তব্য করলে সার্বিক বিষয় চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীর সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এপর চেয়ারম্যান পৃথক পৃথকভাবে কয়েকজন সদস্যকে ডেকে শোনা ও জানার পর ৪ অক্টোবর বদলী সংক্রান্ত রেজুলেশনটি অগ্রবর্তী করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য প্রধান নির্বাহীর মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে পাঠান। পরদিন প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে থাকা ফাইলটি লাপাত্তা হয়ে যায়। ফাইল না পাওয়ার বিষয়টি এসএম মাহাববুর রহমান যাতে বদলী না হন সেজন্য একটি কঠিণ ষড়যন্ত্র বলে আশঙ্কা করেন তারা। ১২ অক্টোবর ফাইলটি পাওয়া গেলেও জেলা পরিষদের ২১তম সাধারণ সভায় প্যানেল চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বাবু, লাল্টু, ডালিম ঘরামী, আব্দুল হাকিম, মহিতুল ইসলাম, মতিয়ার রহমানসহ অধিকাংশ সদস্য মাহাবুবর রহমানকে বদলী করার বিপক্ষে হিসেবে উল্লেখিত রেজুলেশনটি গত ১৪ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যে অগ্রবর্তী করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম। এদিকে গত ১৮ জুলাই সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে খেয়াঘাট ইজারার টাকা লুটপাটের অভিযোগ সম্পর্কিত অভিযোগের তদন্ত করেন স্থানীয় সরকারের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক হোসেন আলী খন্দকার। তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে দূর্ণীতিতে জড়িয়ে পড় এসএম মাহাবুবর রহমানকে নিকটস্থ কোন জেলায় বদলীর জন্য সুপারিশ করেন। এ ছাড়া গত ১৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের এপিলেড ডিভিশনের আইনজীবী অ্যাড. সত্যরঞ্জন মণ্ডল মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে খেয়াঘাটের ইজারার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়েরকৃত হাইকোর্টে ১২২৬২/১৮ রিট পিটিশন শুনানী শেষে বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম এর যৌথ বেঞ্চ অভিযোগটি এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য দুদক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। তবে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এসএম মাহাবুবর রহমান উত্তর কাটিয়া আবু বক্করের বাড়ির সামনে থেকে ওমর খাট্টাদের বাড়ি হয়ে হায়দার কনট্রাক্টরের বাড়ির সামনে নর্দমা তৈরির জন্য দু’ লাখ টাকার প্রকল্প নিয়ে নিজে প্রকল্প সভাপতি হয়ে কোন কাজ না করেই অগ্রিম দেড় লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। এ নিয়ে জেলা পরিষদ সদস্য মহিতুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে মাহাবুবর রহমান গত মঙ্গলবার ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার ১৫৭৭৫৯৮নং পে ওয়ার্ডারের মাধ্যমে জেলা পরিষদের হিসাব নম্বরে দেড় লাখ টাকা জমা দেন। একই অর্থবছরে আশাশুনি হাফিজিয়া মাদ্রাসার দেড় লাখ টাকা সংস্কার প্রকল্পে জনৈক অহিদুর রহমানকে প্রকল্প সভাপতি বানিয়ে ৭০ হাজার টাকা, আশাশুনি চলমান সংঘের এক লাখ টাকা সংস্কার প্রকল্পে দীপন কুমার মণ্ডলকে সভাপতি বানিয়ে ৪৫ হাজার টাকা ও দীপন কুমার মণ্ডলকে সভাপতি বানিয়ে দেড় লাখ টাকা শবদলপুর কালিমন্দির সংস্কার প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করেই অগ্রিম ৭০ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেন জেলা পরিষদ সদস্য মহিতুর রহমান বলে অভিযোগ। জেলা পরিষদ প্রশাসক এসএম মাহাবুবর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতেই মহিতুর রহমান সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সভাপতির মাধ্যমে মঙ্গলবার বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের আশাশুনি শাখায় যথাক্রমে ১৩০৫৩১/১৯ নং পে ওয়ার্ডারের মাধ্যমে ৭০ হাজার, ১৩০৫৩২/২০নং পে ওয়ার্ডারের মাধ্যমে ৪৫ হাজার ও ১৩০৫৩০/১৮ নং পে ওয়ার্ডারের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা জমা দেন। তবে জেলা পরিষদ সদস্য মহিতুর রহমান জানান, তিনি ওইসব প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন না তাই কোন অনিয়ম ও দূর্ণীতির সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। সুতরাং তিনি কেন টাকা ফেরৎ দিতে যাবেন? জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মহসিন আলী জানান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানকে খুলনা অফিসে বদলী সংক্রান্ত স্থানীয় সরকার সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. জুলিয়া মঈন স্বাক্ষরিত চিঠিটি বুধবার সকালে তার অফিসে পৌছায়। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করার পর দুপুর একটার দিকে তার বদলী সংক্রান্ত চিঠিতে সাক্ষর করেছেন তিনি। একইভাবে এসএম মাহাবুবর রহমানের ছেলে জেলা পরিষদের নিম্নমান সহকারি মেহেদী হাসানের স্বেচ্ছায় যশোরে বদলী সংক্রান্ত আবেদনটিতে মঙ্গলবার তিনি সাক্ষর করেছেন। সদরে একটি প্রকল্পে কাজ না করে এসএম মাহাবুবর রহমানের দেড় লাখ ও আশাশুনির তিনটি প্রকল্পে কাজ না করে প্রকল্পের আত্মসাতকৃত এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা ফেরৎ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।